ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

আসরের প্রথম সোনাটাই চান ‘শূটিং বিউটি’ সিলিং

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ৬ আগস্ট ২০১৬

আসরের প্রথম সোনাটাই চান ‘শূটিং বিউটি’ সিলিং

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এবারের ৩১তম রিও অলিম্পিকে কে জিতবেন প্রথম সোনা, কে হাসবেন বিজয়ীর হাসি, কে মর্যাদা বাড়াবেন নিজের মাতৃভূমির? এ নিয়ে স্বভাবতই ক্রীড়াপ্রেমীদের মাঝে চলছে বিস্তর জল্পনা-কল্পনা, আগ্রহ-কৌতূহল। সে সবের অবসান ঘটানোর জন্য সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি থাকবে যার ওপর, তিনি প্রমীলা শূটার ই সিলিং। রিও অলিম্পিকের প্রথম পদক লড়াইয়ের নিষ্পত্তি ঘটবে যে ইভেন্টটি দিয়ে, তা হচ্ছে শূটিং। নির্দিষ্ট করে বললে মেয়েদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ইভেন্ট। ২৭ বছর বয়সী ‘শূটিং বিউটি’ খ্যাত সিলিংই গত ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকের প্রথম স্বর্ণ জিতেছিলেন চীনের এই শূটার। ৫০২.৯ স্কোর করে মেয়েদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে স্বর্ণ জিতেছিলেন তিনি। এবারের রিও অলিম্পিকেও লন্ডনের সাফল্যের পুনরাবৃত্তি করতে মুখিয়ে আছেন তিনি। এই ইভেন্টে এবারও তিনিই ফেবারিট। তবে ফেবারিট হলেই তো আর সাফল্য কুড়িয়ে নেয়া যায় না। এজন্য দরকার সদিচ্ছা, সুষ্ঠু পরিকল্পনা, পরিশ্রম করার মানসিকতা এবং নিবিড় অনুশীলন। আর সে কারণেই আগেভাগেই রিওতে গিয়ে হাজির হন সিলিং। রিওর অদূরে একটি মিলিটারি ক্যাম্পে কঠোর অনুশীলন চালিয়ে যান তিনি। গত লন্ডন অলিম্পিকে স্বর্ণ জিতে তারকায় পরিণত হওয়া সিলিংয়ের শুরুটা ছিল বেশ সংগ্রামমুখর। ২০০৪ সালের সেই সময়টাতে সিলিং শূটিং ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবছিলেন। কারণ অর্থাভাবে তার পরিবারের সদস্যরা সিলিংয়ের শূটিংয়ের অনুশীলনের খরচ বহন করতে পারছিলেন না। সে সময় সিলিংয়ের কোচ এগিয়ে আসেন। তিনিই সিলিংয়ের খরচ যোগান। সেই সঙ্গে তার কাছে সিলিংকে কথা দিতে হয়, কখনও শূটিং ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন না তিনি! চেষ্টা তিনি করেনওনি। আজ তার নামের পাশে শোভা পাচ্ছে একাধিক নজরকাড়া সাফল্য। মেয়েদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের বিশ্বরেকর্ড তারই গড়া। এই ইভেন্টে আরও দুটি সোনা জিতেছেন ১৯৮৯ সালের ৬ মে চীনের হুনান প্রদেশের গুইয়াংয়ে জন্ম নেয়া (বর্তমানে চীনের গুয়ানডংয়ের ঝুহাই নিবাসী) এবং ৫ ফুট ৫ ইঞ্চির অধিকারী ও ৫৪ কেজির অধিকারী সিলিং। একটি ২০১০ গুয়াংজু এশিয়ান গেমসে। আরেকটি ২০১০ মিউনিখ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে। মিউনিখেই তিনি বিশ্বরেকর্ড গড়েন। অথচ তার ঠিক আগের বছরেই (২০০৯) আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুটা করেছিলেন তিনি। মজার ব্যাপার, আজ পর্যন্ত সিলিং যে ক’টি আন্তর্জাতিক পদক লাভ করেছেন (তথাকথিত বড়মাপের আসরে), তার সবই স্বর্ণ! তার মানে রৌপ্য বা তাম্রপদকের কোন বালাই নেই! সিলিং অবশ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে থাকেন আরেকটি ইভেন্টে। সেটা ৫০ মিটার রাইফেল থ্রি পজিশন। তবে এই ইভেন্টে এখনও কোন পদক জেতা হয়নি তার। সিলিংয়ের প্রথম আন্তর্জাতিক পদক অবশ্য রুপার। ২০০৯ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন তিনি। পরের বছরই স্বর্ণ জেতেন নিজ দেশে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে। একই বছর জার্মানির মিউনিখে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ শুরুর আগে কিডনিতে পাথর জমার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন সিলিং। তবে দ্রুত অপারেশন করিয়ে পুরোপুরি সুস্থ হয়েই যান মিউনিখে খেলতে। সবাই ভেবেছিল, অপারেশনের ধকল সামলে নিশ্চয়ই সাফল্য পাবেন না সিলিং। কিন্তু সবাইকে অবাক করে সিলিংই জিতলেন সোনা, তারও আবার বিশ্বরেকর্ড গড়ে (স্কোর ৫০৫.৬ পয়েন্ট)! আর এর ফলেই তিনি ২০১২ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিতব্য অলিম্পিকে অংশ নেয়ার যোগ্যতাও অর্জন করে ফেলেন। ২০১১ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সিলিং রৌপ্য জেতেন। এই ব্যর্থতা তিনি কাটিয়ে ওঠেন ২০১২ আসরের স্বর্ণ জিতে। তারপরই আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকের প্রথম স্বর্ণ আসে তার হাত ধরেই। তখনই ঘোষণা দিয়েছেন, ২০১৬ রিও অলিম্পিকের প্রথম সোনাটাও জিততে চান তিনিই।
×