স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ইতিহাস গড়েছে লিচেস্টার সিটি। দলটির রেকর্ড গড়া সাফল্যের রূপকার কোচ ক্লাউডিও রানিয়েরি। গোটা ফুটবল বিশ্ব তাই ইতালিয়ান এই কোচকে স্যালুট জানাচ্ছে।
পরশু রাতে লন্ডনের স্টামফোর্ড ব্রিজে চেলসি-টটেনহ্যাম ম্যাচটা শেষ হতে না হতেই রাস্তাায় নেমে আসেন লিচেস্টারবাসী। কেউ কেউ রানিয়েরির নাম ধরে চিৎকার করেন, কেউ কেউ ভার্ডি, আবার কেউ কেউ সেøাগান দেন রিয়াদ মাহরেজের নামে। নীল-সাদা জার্সি পরে সবাই তখন আবেগে কাঁপছে, কেউ কেউ ভেঙ্গে পড়েছে কান্নায়। রূপকথার গল্পটা এভাবে সত্যি হয়ে যাবে, লিচেস্টার সিটি সমর্থকরা হয়ত কোন দিনও ভাবতে পারেননি!
ক্লাবের নীল-সাদা পতাকা উড়িয়ে, নেচে-গেয়ে শিরোপা উদযাপন করেছেন ভক্ত-সমর্থকরা। সবার মুখেই কোচ রানিয়েরির নামে জয়ধ্বনি। ইতিহাস গড়তে পেরে রানিয়েরি নিজেও আবেগাপ্লুত। প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, আমি দারুণ গর্বিত। আমি আমার সব খেলোয়াড়, চেয়ারম্যান, ক্লাবের কর্মকর্তা-সমর্থক আর লিজেস্টার সম্প্রদায়ের জন্য খুবই খুশি। খেলোয়াড়রা ছিল এক কথায় দুর্দান্ত। তাদের দৃঢ়তা, অবিচল মানসিকতা, সাহসিকতা সব কিছুর জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে। প্রত্যেক ম্যাচে তারা একে অন্যের জন্য লড়াই করেছে। তারাই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যোগ্য। আগামী শনিবার এভারটনের মুখোমুখি হওয়ার আগে প্রিমিয়ার লীগের ট্রফি আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেয়া হবে রানিয়েরির শিষ্যদের হাতে। ম্যাচটি ঘরের মাঠ কিং পাওয়ার স্টেডিয়ামে হবে বলে লিচেস্টার সমর্থকরা আবারও মেতে উঠবেন উৎসবে।
অবশ্য লিচেস্টারের শিরোপা উৎসব হয়েছে কোচ রানিয়েরিকে ছাড়াই। কেননা চেলসি-টটেনহ্যাম ম্যাচ চলাকালীন সময় তিনি ইংল্যান্ডে ছিলেন না, মায়ের সঙ্গে দেখা করতে উড়ে গিয়েছিলেন জন্মভূমি ইতালিতে। সেখান থেকে ফেরার সময়ই হয়ত পেয়েছেন খবরটা। আর লিচেস্টারের ফুটবলারদেরও ছুটি ছিল পরশু। আর তাই ম্যাচটি দেখতে অনেকেই জড়ো হয়েছিলেন অন্যতম নায়ক জিমি ভার্ডির বাড়িতে। শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই শিশুর মতো উল্লাসে মেতে ওঠেন সবাই। হেঁড়ে গলায় গান গেয়ে, একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে আনন্দ করতে থাকেন। লিচেস্টারের ক্রিশ্চিয়ান ফুকসের পোস্ট করা ভিডিওটা এর মধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুক-টুইটারে। নিজেদের ইতিহাসের প্রথম শিরোপা, তাও আবার গত বছর অবনমন অঞ্চল থেকে উঠে এসে। ভার্ডিরা আবেগে বেসামাল হয়ে গেলে খুব একটা দোষ দেয়া যাবে না! লিচেস্টারের রাস্তায় মিছিল করাদের একজন স্টিভ রবিনসনের কথায় বোঝা যায় সমর্থকদের আবেগটা। তিনি বলেন, এই বছর আমি বিয়ে করেছি, বাবাও হয়েছি। কিন্তু এটার (লিচেস্টারের শিরোপা) সঙ্গে বাকি কিছুর তুলনা হয় না।
২০১৫ সালের জুলাইয়ে কিং পাওয়ার স্টেডিয়ামের দলটির দায়িত্ব নেয়া রানিয়েরি বলেন, আপনার ক্ষেত্রে যখন এ রকম কিছু ঘটবে, আপনি তা পুরোপুরি উপলব্ধিই করতে পারবেন না। প্রথমার্ধে টটেনহ্যাম জিতছিল। তাই আমি কিছুটা হতাশ ছিলাম। তারপর কাহিল যখন গোল করল, আমি তখন ভাবলাম কিছু ঘটতে পারে। হ্যাজার্ডের গোলে সমতায় ফেরানো গোলটি উদযাপন করেছি আমি। রানিয়েরি এর আগে বেশ কয়েকবারই বলেছিলেন, মৌসুমের শুরুতে তার দলের লক্ষ্য ছিল অবনমন এড়ানো। সেই ক্লাবই তাদের ১৩২ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো লীগ শিরোপা জিতল। রানিয়েরি এই সাফল্যের কৃতিত্ব দিয়েছেন খেলোয়াড়দের। তিনি বলেন, প্রত্যেক ম্যাচে তারা একে অপরের জন্য লড়াই করে। আর আমার খেলোয়াড়দের মধ্যে এটা দেখতে আমি পছন্দ করি। আমি বাস্তববাদী একজন মানুষ; আমি কেবল একটার পর একটা ম্যাচ জিততে চেয়েছিলাম। এটা আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে তা নিয়ে আমি কখনই খুব বেশি ভাবিনি। তিনি জানান, সাফল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে নিজের প্রতি ছিল বিশ্বাস। চেলসি, ইন্টার মিলান, জুভেন্টাসের সাবেক এই কোচ বলেন, আমার বয়স ৬৪ বছর। আমি অনেক বছর ধরে লড়াই করছি। কিন্তু আমি সব সময় ইতিবাচক ছিলাম। আমি সব সময়ই ভেবেছি যে, কোথাও না কোথাও আমি একটি লীগ শিরোপা জিতব। আমি সেই লোক, যাকে গ্রীস বরখাস্ত করেছিল; সেখানে কেউ হয়ত আমার ক্যারিয়ারের বিষয়ে ভুলেই গিয়েছিল। এখন ভবিষ্যত প্রসঙ্গে রানিয়েরি বলেন, আমি লিচেস্টারে থাকছি। এটা একটা বছর, যার পুনরাবৃত্তি হতে পারে না। পরের বছর আমরা শীর্ষ দশে থাকার জন্য লড়াই করব। আমরা অবশ্যই উন্নতি করতে থাকব এবং ভাল করব।
এদিকে লিচেস্টার সিটির থাই মালিক জানিয়েছেন, তার ক্লাবের কোন তারকা খেলোয়াড়কেই বিক্রি করা হবে না। থাইল্যান্ডের একটি টেলিভিশন চ্যানেলে সাক্ষাতকারে লিচেস্টারের ভাইস চেয়ারম্যান ভিচাই শ্রিবধানাপ্রভার বলেছেণ, খেলোয়াড় বেচার জন্য তাদের মধ্যে কোন প্রকার চাপ নেই। তিনি বলেন, যে সব ক্লাব খেলোয়াড় বিক্রি করে চলে তাদের দলে নয় লিচেস্টার সিটি। বর্তমানে ক্লাবেই তারা খুশিতে আছে এবং একসঙ্গে আরও দীর্ঘ সময় খেলে যেতে চায়। তারা পরখ করতে চায় একসঙ্গে কতদূর পথ চলতে পারে। অথচ একসময় শিরোপার কথা চিন্তাই করেননি তিনি। কিন্তু আজ পৃথিবীর সবচেয়ে চমকে দেয়া এক চ্যাম্পিয়ন লিচেস্টার সিটি।