ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রেডিট কার্ড

প্রায় ২৩ শতাংশ সিটি ব্যাংক একাই নিয়ন্ত্রণ করে

প্রকাশিত: ০১:৩৯, ১ এপ্রিল ২০২৪

প্রায় ২৩ শতাংশ সিটি ব্যাংক একাই নিয়ন্ত্রণ করে

মাসরুর আরেফিন , ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, সিটি ব্যাংক পিএলসি

প্রশ্ন : দেশে ক্রেডিট কার্ডের মার্কেট সাইজ কেমন? ঠিকভাবে বাজার সম্প্রসারণ সম্ভব হচ্ছে না কেন?

উত্তর : বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত দেশের মোট ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা ছিল ২৩ লাখ ৯৮ হাজার। আগের বছরের সঙ্গে তুলনা করলে সংখ্যা ১৩ শতাংশ বেশি। ব্যাংকগুলো গতবছর মাসে নতুন ক্রেডিট কার্ড বিক্রি করেছে ৩৫-৪০ হাজার করে। মুহূূর্তে ক্রেডিট কার্ডের ঋণের স্থিতি হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। এটা গতবছরের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু এখনো এটা ব্যাংক খাতের মোট ঋণ স্থিতির শতাংশও হতে পারেনি। হয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশ। আর কার্ডে লেনদেনের কথা যদি বলি ২০২৩ সালে ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকরা মাসে গড়ে হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা লেনদেন করেছেন। এর মধ্যে ১৫ শতাংশ ট্রানজেকশনই ঘটেছে দেশের বাইরে। তবে অনেকগুলো কারণে বাজার সম্প্রসারণ সম্ভব হচ্ছে না। প্রথমত, ২০২২ সালের জুলাই থেকে ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। সিদ্ধান্তের ফলে ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার সম্ভাব্য গ্রাহকসংখ্যা একবারে ৮০ লাখ থেকে ৩০ লাখে নেমে এসেছে। সত্যিকারের ক্যাশলেস সোসাইটি নির্মাণে ক্রেডিট কার্ডের বাজার বাড়ানোর বিকল্প নেই। তাই এক্ষেত্রে আমাদের দরকার নীতি সহায়তা। এছাড়া আরও কিছু নেগেটিভ ফ্যাক্টর আছে। যেমন ক্রেডিট কার্ড নিয়ে মানুষের সাধারণ ভীতি, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সাতটা বড় শহরের বাইরে ক্রেডিট কার্ড চলার অবকাঠামো বসাতে ব্যাংকগুলোর অনীহা বা আর্থিক অসামর্থ, অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করা পেশাজীবীদের ক্রেডিট কার্ড দিতে ব্যাংকের অনিচ্ছা, সার্বিক মন্দ ঋণ কালচার। এসবও ক্রেডিট কার্ডের বাজার বাড়ানোর পথে দেওয়াল তুলেছে। তবে সবচেয়ে বড় দেওয়াল ওই আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা।

প্রশ্ন : সিটি ব্যাংক কিভাবে ক্রেডিট কার্ডের মার্কেট লিডার হলো?

উত্তর : দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারের প্রায় ২৩ শতাংশ সিটি ব্যাংক একাই নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের মার্কেট লিডার হওয়ার পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে আমেরিকান এক্সপ্রেসের সঙ্গে সিটি ব্যাংকের সম্পৃক্ততা। আমরাই দেশের একমাত্র ব্যাংক যারা আমেরিকান এক্সপ্রেস কার্ড ইস্যু অ্যাকোয়ার করতে পারি। এছাড়া গ্রাহক চাহিদাকে অগ্রাধিকার দেওয়া, বেস্ট-ইন-ক্লাস গ্রাহকসেবা লয়্যালটি প্রোগ্রাম, ভালো ২৪ ঘণ্টার কল সেন্টার, ভালো কম্পিটিটিভ ভ্যালু, দেশের সবচেয়ে বড় কার্ড মার্চেন্ট নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, দেশজুড়ে ছড়ানো অনেক বড় কাস্টমার টাচপয়েন্ট, সিটিটাচ ইন্টারনেট ব্যাংকিং দিয়ে কার্ডের অধিকাংশ কাজ সামলাতে পারা, ঢাকা এয়ারপোর্টে মোট তিনটা লাউঞ্জ সুবিধা, ব্যাংকের ব্র্যান্ড ভ্যালু, এসবই আমাদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।

প্রশ্ন : গ্রাহকদের কয় ধরনের ক্রেডিট কার্ড দিচ্ছেন?

উত্তর : আমরা যেহেতু আমেরিকান এক্সপ্রেসের (অ্যামেক্স) একমাত্র লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যাংক, তাই আমাদের প্রডাক্ট অফারিংয়ের সবচেয়ে বড় অংশই আছে নেটওয়ার্কে। অ্যামেক্স সেঞ্চুরিয়ন লাইনে আমাদের ধনী গ্রাহকদের জন্য রয়েছে অ্যামেক্স প্লাটিনাম কার্ড। এরপর অতিসচ্ছল গ্রুপের জন্য আছে অ্যামেক্স গোল্ড কার্ড আর সাধারণ মধ্যবিত্ত সেগমেন্টের জন্য আছে অ্যামেক্স ব্লু কার্ড। অ্যামেক্স সেঞ্চুরিয়ন বাদে আমাদের অ্যামেক্স বুø-বক্স লাইনে আছে নারীদের জন্য স্পেশালাইজড কার্ডসিটি আলো অ্যামেক্স কার্ড’, গ্রোসারি শপারদের জন্যঅ্যামেক্স আগোরা কো-ব্র্যান্ড কার্ড’, ফ্রিকোয়েন্ট ফ্লায়ারদের জন্যবাংলাদেশ বিমান-অ্যামেক্স কো-ব্র্যান্ড কার্ডএবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই শিক্ষকদের জন্যঢাকা ভার্সিটি-অ্যামেক্স কো-ব্র্যান্ড কার্ড আর ভিসা নেটওয়ার্কে আমাদের আছে ভিসা প্লাটিনাম ক্রেডিট কার্ড। সামনে আরও বড় চমক আসছে অ্যামেক্স ভিসা, দুই নেটওয়ার্কেই। দ্রুতই বিষয়ে চমকপ্রদ ঘোষণা আসবে।

প্রশ্ন : আপনাদের ক্রেডিট কার্ডের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যগুলো কী ?

উত্তর : আমরা হিসাব করে দেখেছি যে কিছুটা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কার্ড ব্যবহার করলে গ্রাহকরা কার্ডের যে অ্যানুয়াল ফি পেমেন্ট করেন, বছরে তারা তার থেকে - গুণ বেশি বেনিফিট কার্ড থেকেই তুলে নিতে পারেন। গতবছর আমি নিজেই সেটা নিয়েছি। ব্যাপারটা অংক, এখানে কারও দ্বিমত করার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া আমরা শুধু বেসিক কার্ড প্রোডাক্ট চালু করেই বাজারে ছেড়ে দেই না, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কয়েক মাস পর পরই কার্ডের ভ্যালু প্রোপজিশনগুলো আমরা রিভিউ করে থাকি। যেমন ২০২৩ সালেই আমরা অ্যামেক্স সেঞ্চুরিয়ন লাইনের প্রোডাক্টগুলো রিভিউ করে ১৫ শতাংশের বেশি কার্ড বিক্রি করতে পেরেছি। এরপর আমাদের কার্ডের দেশসেরা গ্রাহকসেবার মানের কথা বলতেই হয়। এটার কারণে আমাদের নিট প্রমোটার স্কোর (এনপিএস) ঈর্ষণীয় লেভেলে আছে। অনেকে জেনে অবাক হন যে শুধু কার্ডের সেবা দেওয়ার জন্যই আমাদের আছে ৬টা ফিজিক্যাল সার্ভিস সেন্টার, যা দেশের অন্য কোনো ব্যাংকের নেই। এর বাইরে দেশজুড়ে ২৮টা ব্র্যাঞ্চে বসছে আমাদের ডেডিকেটেড কার্ড অ্যাম্বাসেডররা। আর মার্কেট লিডার হওয়ার নিয়ামকগুলোর কথা তো আগেই বলেছি।

প্রশ্ন : রমজান ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?

উত্তর : প্রতিবারের মতো আমরা এবারো রমজান ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার এনেছি। এবার প্রায় সব ক্যাটাগরিতেই দিচ্ছি অফার। এর মধ্যে প্রধান ক্যাটাগরিগুলো হলো ইফতার ডিনার বা এক কথায় ডাইনিং, তারপর ট্রাভেল, গ্রোসারি, লাইফস্টাইল, জুয়েলারি, অনলাইন শপিং। অফারগুলোর মধ্যে আছে সেভিংস অফার, ক্যাশব্যাক, এক্সিলারেটেড মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট, বাই ওয়ান গেট ওয়ান ফ্রি নানাকিছু। সিটি ব্যাংকের রমজান ঈদের সব অফারের সব তথ্য পাওয়া যাবে একটা মাইক্রো সাইটে : www.citybankplc.com/ramadan202। সাইটে যাওয়ার অনুরোধ রেখে আমার তরফ থেকে অগ্রিম ঈদ শুভেচ্ছা।

×