ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

লে. জে. মাহবুবকে গ্রেফতার দাবি আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৫ এপ্রিল ২০১৫

লে. জে. মাহবুবকে গ্রেফতার দাবি আওয়ামী লীগের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সেনাবাহিনীকে উস্কানি দিয়ে বিএনপি নেতা লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমানের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে অবিলম্বে তাঁকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা বলেন, মাহবুবুর রহমানের বক্তব্য দুঃখজনক, উস্কানিমূলক ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। সেনাবাহিনীকে ব্যারাকের বাইরে এসে দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে মাহবুবুর রহমানের বক্তব্যের পেছনে কোন গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। শুক্রবার বিএনপি সমর্থিত একটি ভুঁইফোড় সংগঠনের ব্যানারে রাজধানীতে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান মন্তব্য করেন-‘বাংলাদেশের আজকের যে সঙ্কট, সেটি গণতন্ত্রের সঙ্কট, নিরাপত্তার সঙ্কট, আইন-শৃঙ্খলার সঙ্কট। সেই সঙ্কটে সেনাবাহিনী এগিয়ে এসে, দৃশ্যমান থেকে সকলের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে। বিএনপির এ নেতার এমন বক্তব্যে দুঃখজনক, উস্কানিমূলক ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও ১৪ দলের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, দেশে বর্তমানে একটি নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার রয়েছে। গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা নস্যাত করার জন্য মাহবুবুর রহমানদের বিএনপি লাগাতার চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচালের জন্য তারা দেশে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। নির্বাচনের পর গঠিত সরকারের মেয়াদ এক বছর পূর্তিকে কেন্দ্র করে তারা হরতাল-অবরোধের নামে টানা ৯২ দিন পেট্রোলবোমাসহ আগুনে পুড়িয়ে নারী, শিশুসহ দেড় শতাধিক মানুষ হত্যা করে। আগামী ২৮ এপ্রিল ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এর আগে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকের বাইরে এসে দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে মাহবুবুর রহমানের বক্তব্যের পেছনে কোন গভীর ষড়যন্ত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় এই মাহবুবুর রহমান বিতর্কিত ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। আর এ কারণে বিএনপিরই ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের হাতে উনি লাঞ্ছিত হয়েছিলেন। দেশের মানুষ সে কথা ভুলে যায়নি। তিনি বলেন, মাহবুবুর রহমান কোন রাজনীতিবিদ নন। সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়ে তিনি রাজনীতি করছেন। সুতরাং অবসরপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান হিসেবে সেনাবাহিনীর মতো কোন স্পর্শকাতর বিষয়ে বক্তব্য রাখার আগে তাঁকে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। মাহবুবুর রহমানকে গ্রেফতার করা উচিত- খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ॥ খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, দেশের নতুন করে সঙ্কট তৈরি করতে চাচ্ছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে উস্কানি দেয়ার অংশ হিসেবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব) মাহবুবুর রহমান আইন-শৃঙ্খলা ও গণতন্ত্র রক্ষায় সেনাবাহিনীকে মাঠে নামার কথা বলেছেন। এ জন্য তাঁকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা উচিত। শুক্রবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে স্বাধীনতা পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ সব কথা বলেন। মাহবুবুর রহমানের বক্তব্যের সমালোচনা করে খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি বুঝতে সক্ষম হয়েছে যে, জনগণের ভোটে সিটি নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হবে। মানুষ তাদের ৯২ দিনের ভয়াল নাশকতা ও পুড়িয়ে মানুষ হত্যার ঘটনা ভুলে যায়নি। গণতান্ত্রিক ধারাকে সন্ত্রাসের পথে নিয়ে যাওয়া, গণতন্ত্র ধ্বংস করার চেষ্টার জবাব নগরবাসী ব্যালটের মাধ্যমে দিতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, প্রতিটি নির্বাচনের পূর্বে বিএনপি সেনা মোতায়েনের দাবিতে ভাঙ্গা ক্যাসেট বাজায়, এবারও বাজাচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা নির্বাচন বানচাল করতে চাচ্ছে অথবা নির্বাচন পরবর্তী সময়ে আবার সেই বোমাবাজি নাশকতায় ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করছে। আসলে বিএনপি-জামায়াত হচ্ছে বিষধর সাপ। ব্যালটের মাধ্যমে তাদের জবাব দিতে হবে। নির্বাচনী প্রচারের সময় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরের হামলার ঘটনাকে নাটক হিসেবে আখ্যায়িত করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, তিন সিটির কোথাও কোন প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ, সহিংসতা হয়নি। যখন বিএনপি নেত্রী তাঁর শরীরে লেগে থাকা পোড়া গন্ধের দুর্গন্ধ নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামলেন তখনই একটা খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো। নির্বাচনে বিএনপির পরাজয় ঘটবে জেনে তিনি তা বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছেন। এই বিষফোঁড়ার বিদায় করতে হবে। তিনি বলেন, গাড়িবহর নিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে তিনি (খালেদা) নির্বাচনী আচরণবিধির ৬/২-এর ‘খ’ ধারা ভঙ্গ করছেন। তিনি এখন দেশের জন্য একটি বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়েছেন। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করার জন্য নির্বাচন কমিশনের তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। স্বাধীনতা পরিষিদের উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম খানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সামসুল হক টুকু, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজিত রায় নন্দী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মোঃ আবু কাওসার প্রমুখ।
×