ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মোঃ হাসিবুল আলম প্রধান

করোনা যুদ্ধের ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের স্যালুট

প্রকাশিত: ১৯:৫০, ৫ জুলাই ২০২০

করোনা যুদ্ধের ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের স্যালুট

করোনা মহামারীতে বিপর্যস্ত পৃথিবীতে বাংলাদেশও করোনা দুর্যোগ জয় করতে অন্যরকম একটি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। আমরা বহির্বিশ্বে করোনা মহামারীর প্রকোপে শত শত মানুষের মৃত্যুর মিছিল ও বিপন্ন সভ্যতার রুগ্ন চেহারা দেখে অস্থির হয়েছি, হৃদয়ে যন্ত্রণা অনুভব করেছি। কিন্তু আমাদের দেশে আজ দানব করোনার আগ্রাসনে মানুষের মৃত্যুর মিছিল, ক্ষুধা ও মানবিক সঙ্কটের চিত্র দেখে প্রতিটি বিবেকবান মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। শিক্ষাবিদ, মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, সেনাসদস্য, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ প্রতিনিয়ত মৃত্যুর শিকার হচ্ছে। ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ও সিলেটের সাবেক মেয়র ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতা বদরুদ্দিন আহমেদ কামরান, প্রখ্যাত সাংবাদিক কামাল লোহানীসহ দেশের বেশকিছু মেধাবী চিকিৎসক, পুলিশ ও সেনাসদস্য মারা গেছেন। মৃত্যুর পাশাপাশি আমাদের জনজীবনই শুধু বিপর্যস্ত নয়, বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে আমাদের অর্থনীতি, শিক্ষা ও সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন কার্যক্রম। এই দুর্যোগে সবচেয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমাদের গার্মেন্টস শিল্প, যেখানে লাখ লাখ শ্রমিকের জীবন ও জীবিকা যুক্ত। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ও করোনা সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে এবং এই দুর্যোগে করোনার গ্রাস থেকে মানুষকে বাঁচাতে আমাদের ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধা হিসেবে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, সেনাবাহিনী, প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা যখন একযোগে কাজ করছেন, বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, মানুষ যখন নানাভাবে এই দুঃসময়ে বিপন্ন মানুষের বন্ধু হয়ে উঠেছে, তখন একজন বাঙালী হিসেবে গর্বিত হই, অন্তরে উজ্জীবিত হই। আমাদের ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের মধ্যে এ মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে আমাদের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এজন্য এদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুও অনেক বেশি। একেবারে সরাসরি করোনা রোগীদের নিয়ে কাজ করছে এমন ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের মধ্যে প্রথমেই আসে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নাম এবং এরপর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। বাংলাদেশে মেডিক্যাল এ্যাসোসিশনের (বিএমএ) সূত্রে জানা যায়, ২০ জুন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৩৯ জন চিকিৎসক এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে আরো পাঁচ চিকিৎসকসহ মোট ৪৪ জন চিকিৎসক মারা গেছেন। বিএমএর তথ্য অনুসারে ২০ জুন পর্যস্ত সারা দেশে চিকিৎসকসহ করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাজার ৪৩৭ জন, এদের মধ্যে চিকিৎসক ১০৭২, নার্স ৯৩৮ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী ১৪২৭ জন। অনেক সাহসী চিকিৎসক আক্রান্ত হয়ে আবারও কাজে যোগদান করেছেন। প্রথম দিকে চিকিৎসকদের মধ্যে কিছুটা ভয় ও শঙ্কা দেখা দিলেও এখন তারা জীবনেরর ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আমাদের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা যেভাবে করোনা মোকাবেলায় কাজ করছেন সেজন্য তাঁদের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে এবং করোনা দুর্যোগে বিভিন্ন সেবা দিতে কাজ করছে, এমন ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের মধ্যে পুলিশ ও সেনাবহিনীও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। পুলিশের সাম্প্রতিক ভূমিকা মানুষের মনে বেশি দাগ কেটেছে। এই দুঃসময়ে জনগণের বন্ধু হিসেবে কাজ করতে গিয়ে সংখ্যায় তারাও বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আটাশ পুলিশ সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন আট হাজারেরও বেশি। করোনাকালীন দুর্যোগে পুলিশের সাম্প্রতিক ভূমিকায় আমাদের পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি অনেক উজ্জ্বল হয়েছে। সেনা সদস্যরাও এই সঙ্কটকালীন সময়ে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন, তাও জাতি চিরদিন কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে। বিভিন্ন মিডিয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত (২০ জুন) সশস্ত্র বাহিনী ও তাদের পরিবারের ৪ হাজার ২৫৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আর ভাইরাসটিতে সশস্ত্র বাহিনীর মোট ২৫ জন সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন, যাদের ২২ জন অবসরপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এবং তিনজন চাকরিতে কর্মরত ছিলেন (২ জন সামরিক সদস্য ও ১ জন অসামরিক সদস্য)। সাংবাদিকরাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা হিসেবে কাজ করছেন, ত্রাণ বিতরণের অনিয়ময়ের খবরগুলো সরকারের দৃষ্টিতে আনছেন। এ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনাভাইরাসে চারজন ও করোনা উপসর্গ নিয়ে ৭ জন সাংবাদিক মৃত্যুবরণ করেছেন। সরকার ও জনগণের এই মুহূর্তে প্রধান কাজ হলো ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের মনোবলকে চাঙ্গা রাখা, কোনভাবেই যেন তাঁরা মানসিকভাবে ভেঙ্গে না পড়ে সেদিকে নজর দেয়া। এর ব্যত্যয় হলে করোনাকালীন দুর্যোগে চরম মূল্য দিতে হবে। জাতির এই সঙ্কটে শিল্প কলকারখানা বিশেষ করে অনেক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেশকিছু শ্রমিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন আবার অনেক শ্রমিক ঠিকমত মজুরি পাচ্ছেন না, যা আমাদের অর্থনীতিকে শুধু বিপর্যস্ত করছে না, দেশে দারিদ্র্যের হারও বাড়াচ্ছে। ইতোমধ্যে মানবিক সঙ্কটের নানা চিত্রও আমরা দেখছি। পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা পাচ্ছেন পোশাক কারখানার মালিকরা। এ টাকা দিয়ে শ্রমিকদের বেতন দেয়ার কথা থাকলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে কারখানা লে-অফ এবং শ্রমিক ছাঁটাই চলছে। কিছু কারখানা কয়েক মাস ধরে বেতন না দিয়ে করোনার অজুহাত দেখিয়ে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। এ সময়ে মানবিক দিক বিচার করে কোনভাবেই শ্রমিক ছাঁটাই কাম্য নয়। এদিকে সরকারের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন বলে মনে করি। লকডাউনের প্রভাবে সামগ্রিকভাবে আমরা একটা বিপন্ন সময় পার করছি। দিন দিন বিপন্ন মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। এই সঙ্কটে সকল শ্রেণীর মানুষকে যার যার জায়গা থেকে বিবেকপ্রসূত সেবামূলক কাজের মাধ্যমে মানুষের পাশে দাঁড়ানো খবুই জরুরী। সরকারের একার পক্ষে এই মানবিক সঙ্কট মোকাবেলা করা খুবই কঠিন। বিশেষ করে আমাদের বিত্তবান সমাজকে এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা দরকার, যদিও তা তেমন চোখে পড়ছে না। বিত্তবানরা খুব একটা এগিয়ে না আসলেও সাধারণ মানুষ কিন্তু নানাভাবে এই দুর্যোগে কাজ করছে, বিপন্ন মানুষের বন্ধু হয়ে উঠছে। শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার গান্ধীগাঁও গ্রামের নাজিমুদ্দিন, যিনি ভিক্ষা করে সংসার চালাচ্ছেন, তিনি করোনা সঙ্কটকালে যে উদাহরণ সৃষ্টি করলেন, তা প্রমাণ করেছে মানুষকে সাহায্য করতে ধনী হতে হয় না, ইচ্ছা থাকলে গরিব ও নিঃস্ব মানুষও কিছু করতে পারে। ৮০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ করোনা সঙ্কটে তাঁর ঘর তৈরির জন্য জমানো দশ হাজার টাকা মানুষের কল্যাণে ব্যায়ের জন্য সরকারের ত্রাণ তহবিলে জমা দেন, যা একটি অনন্য মানবিক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমরা পত্রিকায় দেখেছি এই সঙ্কটে অনেক বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়ার ভাড়া মওকুফ করে দিয়ে তাদের খাবারেরও ব্যবস্থা করছে। অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানুষের পরিচয় গোপন রেখে তাদের বাড়িতে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। যেখানে করোনায় মারা গেলে সন্তান মা-বাবাদের লাশ দাফনে ভয় পাচ্ছে, সেখানে কোয়ান্টার, আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের স্বেচ্ছাসেবকরা এগিয়ে এসে দাফনের ব্যবস্থা করছে। মানুষই যখন এই করোনা মহামারীতে মানুষের বাঁচার প্রেরণা, তখন করোনাকালীন সঙ্কট শুরুর পর থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে কিছু ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য কর্তৃক ত্রাণের চাল-ডাল-তেল চুরির খবর দেখে আমরা হতবাক ও নির্বাক হই। সরকারকে ধন্যবাদ জানাই যে, এই ত্রাণচোরদের খবর মিডিয়ায় এবং সরকারের নজরে এলে সরকার তাদের দ্রুত বরখাস্ত করেছে। তবে শুধু বরখাস্তই নয়, এদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়ের করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। হোম কোয়ারেন্টাইন অবস্থায়ও বসে নেই নানা পেশার মানুষ। দুর্যোগের মধ্যেও মানব কল্যাণে ব্রত হয়ে কোন চিকিৎসক বাড়ি বাড়ি ঘুরে চিকিৎসা দিচ্ছে, কাউকে না পেয়ে আবার সরকারী কর্মকর্তারা করোনা আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির জানাজা পড়াচ্ছে, কেউ কেউ বাড়ি বাড়ি ঘুরে ত্রাণ দিচ্ছে। শিল্পী সমাজ ও সাংস্কৃতিক কর্মীরাও বিপন্ন মানুষের পাশে মানুষকে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে সাহসী ভূমিকা রাখছে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে দেখেছি শিল্পী সমাজ ঘরে বসে গান করে অথবা উদ্বুদ্ধমূলক কথার মাধ্যমে করোনা সঙ্কটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে এবং মানুষের পাশে দাঁড়াতে মানুষের মধ্যে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। এই দুঃসময়ে মানুষের বিপন্নতায় সৃষ্টিশীল কাজের মাধ্যমে দুঃসময়কে জয় করার মতো সাহসিকতা ও উদ্যমী মনোভাবের প্রয়োজনীয়তা জাতি মারাত্মকভাবে উপলব্ধি করছে। দেশের বর্তমান নাজুক অর্থনৈতিক অবস্থায়, যেখানে কয়েক লাখ মানুষ কর্মহীন হবার আশঙ্কা করা হচ্ছে, ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে অভাবী মানুষের সংখ্যা, সেখানে সরকারীভাবে দীর্ঘদিন ত্রাণ প্রদান অব্যাহত রাখা ও সহযোগিতার পাশাপাশি মানুষের সর্বাত্মক সহযোগিতাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আশার কথা, করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনীতির নিরাপত্তা নিয়ে যে গবেষণা তালিকা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সাপ্তাহিক দ্য ইকোনমিস্ট সেখানে প্রতিবেদনে দেখানো হয়, করোনাভাইরাসের ভয়াবহতাতেও ভারত-চীন কিংবা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশের চেয়েও তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বাংলাদেশের অর্থনীতি। দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, করোনাভাইরাসের মহামারী পরিস্থিতিতেও ৬৬টি উদীয়মান সবল অর্থনীতির দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে ৯ম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশের আজকের এই সঙ্কটে সরকারের পাশাপাশি আমরা সকল পেশার মানুষ ও সাধারণ জনগণ যার যার জায়গা থেকে বিভিন্ন মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ করলে করোনা পরাজিত হবে এবং মানুষকে বিপন্নতার হাত থেকে রক্ষা করা যাবে। করোনা মহামারীর কারণে আজকে বাংলাদেশ যে সঙ্কটে এসে দাঁড়িয়েছে, সেখানে মানুষের পাশে জনগণের এগিয়ে আসা ছাড়া সরকারের পক্ষে একা মোকাবিলা করা খুবই দুরূহ ব্যাপার। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এবং মানুষের ক্ষুধা ও দরিদ্রতাকে জয় করার যে আগ্রহ তার প্রতি নজর দিয়ে সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে লকডাউন শিথিল করেছে। কিন্তু এ সময়ও থেমে নেই মৃত্যু। মৃত্যুর মিছিল ক্রমশ দীর্ঘ থেকে আরও দীর্ঘতর হচ্ছে। আর করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও এখন লক্ষাধিক। বিশেষ করে ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধা চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ ও সেনা সদস্যদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধাদের মনোবল ধরে রাখতে সরকারকে আরও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং সেই সঙ্গে জনগণকে তাঁদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসতে হবে। আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের ঢাকাস্থ ইমপালস হাসপাতালে চিকিৎসার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যা একটি ভাল উদ্যোগ। অনেক চিকিৎসক আক্রান্ত হলে তাঁদের সেনাবাহিনীর বিমানে সিএমএইচে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হচ্ছে, এটাও একটি ভাল উদ্যোগ। করোনার গ্রাস থেকে মানুষকে বাঁচাতে সরকার ইতোমধ্যে দুই হাজারের মতো চিকিৎসক ও পাঁচ হাজারের মতো নার্স নিয়োগ দিয়ে একটি সময়োচিত পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখার ব্যাপারে সরকারকে কার্যকরী ভূমিকা নিতে হবে, যাতে তারা মনোবল ধরে রেখে করোনা দুর্যোগে সেবা দিতে পারে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দূরদর্শী অসাধারণ নেতৃত্ব ও মানবদরদী হৃদয় নিয়ে করোনা সঙ্কটে যেভাবে দেশের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন, তা দেশে ও বিদেশে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। বিশ্বের জনপ্রিয় ফোর্বস ম্যাগাজিনে করোনা মোকাবেলায় সফল নারী নেতৃত্বের তালিকায় (৮ জনের) স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি পত্রিকায় যে খবরগুলো আসছে তা হলো, করোনা আক্রান্ত নয় এমন অসুস্থ ব্যক্তিরা বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন, হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এটা খুবই অমানবিক। এ ক্ষেত্রে বেসরকারী হাসপাতালগুলোর দায়িত্বহীনতার ক্ষেত্রে সরকারকে কঠোর ভূমিকা নিতে হবে। দেরিতে হলেও সরকার সংক্রমিত এলাকা বিবেচনা করে রেড, ইয়েলো ও গ্রীন জোনে ভাগ করে কঠোর লকডাউনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। আগামী ঈদ-উল-আজহায় কোনভাবেই মানুষ যেন নিজ নিজ এলাকা ত্যাগ না করতে পারে, এজন্য সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। আসুন বাংলাদেশের এই অভাবনীয় চরম সঙ্কটে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি। স্যালুট জানাই করোনা যুদ্ধের ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই। দেশটাকে ভাল রাখি। মানুষই আজ মানুষের শেষ ভরসা, মানুষই আজ মানুষের প্রেরণা, জয় হোক মানবতার। লেখক : প্রফেসর, আইন বিভাগ ও পরিচালক, শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় [email protected]
×