ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবর্তনের স্বীকৃতি

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ৮ এপ্রিল ২০১৮

পরিবর্তনের স্বীকৃতি

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬ ঘোষণা করা হয়েছে বৃহস্পতিবার। এটি দেশের ৪১তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। লক্ষণীয় হলো এই পুরস্কারে নতুন প্রজন্মের প্রতিভার স্বীকৃতি মিলেছে। মূলত টেলিভিশনে নাটক ও টেলিফিল্মের মাধ্যমে ব্যতিক্রমী কাজের জন্য যেসব নির্মাতা অতীতে অবদান রেখেছেন এবং বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আমাদের চলচ্চিত্র অঙ্গনের চিরাচরিত ধারায় বাঁক-বদলের প্রয়াস পেয়েছেন এমন মেধাবীরাই পুরস্কার অর্জন করেছেন। এটি চলচ্চিত্র শিল্পী ও কলাকুশলীদের জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ের সম্মাননা। এবার ছাব্বিশটি শাখায় পুরস্কার দেয়া হয়েছে। ‘অজ্ঞাতনামা’ ও ‘আয়নাবাজি’Ñ এ দুটি চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত নির্মাতা এবং শিল্পীরা অর্জন করে নিয়েছেন একসঙ্গে অনেকগুলো পুরস্কার। মানবপাচারের কাহিনী নিয়ে নির্মিত ‘অজ্ঞাতনামা’ চলচ্চিত্রটি ৬৯তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাণিজ্যিক শাখায় প্রদর্শিত হয়। উল্লেখ্য, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অজ্ঞাতনামা তৌকীর আহমেদ পরিচালিত চতুর্থ চলচ্চিত্র। আর শ্রেষ্ঠ পরিচালকের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত অমিতাভ রেজার অভিষেক চলচ্চিত্র হলো আয়নাবাজি। তিনি মূলত বিজ্ঞাপন নির্মাতা। কান চলচ্চিত্র উৎসবের মার্শে দ্য ফিল্ম বিভাগে এটি প্রদর্শিত হয়। বলাবাহুল্য, এ দুটি চলচ্চিত্র ইতোপূর্বে দেশের রূপালী পর্দায় প্রদর্শিত চলচ্চিত্রগুলোর তুলনায় অনেকাংশেই ব্যতিক্রমী। তাতে সমাজবাস্তবতার প্রতিফলন ঘটেছে শিল্পিতরূপে। একইভাবে ‘শঙ্খচিল’ ও ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন’Ñ এই দুটি ছবিও জিতে নিয়েছে বেশকিছু পুরস্কার। এ দুটি সিনেমাও তরুণ প্রজন্মের নির্মাতা ও ভিন্ন ধারার অভিনয় শিল্পীদের অংশগ্রহণে সমৃদ্ধ। ফলে এ কথা আমরা নিঃসঙ্কোচে বলতে পারি, এবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ক্ষেত্রে একটি অনন্য ও ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো। এর ভেতরেই নিহিত রয়েছে আগামী দিনের শিল্প ও বিনোদন সম্ভাবনাÑ এমনটা প্রত্যাশা করাই যায়। শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের জন্য পুরস্কার দেয়া হয়েছে জন্মসাথীকে। এর মাধ্যমে যুদ্ধশিশুরাও এক ধরনের স্বীকৃতি পেলÑ এমনটা বলা যেতে পারে। এটির নির্মাতা শবনম ফেরদৌসী। আমাদের নারী নির্মাতারা সুদীর্ঘকাল সিরিয়াস ধরনের কাজ করে চলেছেন তথ্যচিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে। জাতীয় পুরস্কার নিঃসন্দেহে তারই স্বীকৃতি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাটিকে উর্ধে তুলে ধরে এমন তাৎপর্যপূর্ণ চলচ্চিত্র নির্মাণ কোটি দর্শকের জানার বাইরে থেকে যাকÑ এমনটা প্রত্যাশিত নয়। এই পুরস্কারের মধ্য দিয়ে এ ধরনের চলচ্চিত্র প্রয়াসকে একদিকে যেমন উৎসাহিত করা হয়েছে, অপরদিকে তেমনি দর্শকদেরও দৃষ্টি আকষর্ণ করা হলো। সব মিলিয়ে বেশ উদ্দীপনামূলক। বলাবাহুল্য, দীর্ঘ সময়ের গবেষণা, বিরূপ পরিস্থিতি, চ্যালেঞ্জ আর ক্যামেরার পেছনে কঠিন এক যুদ্ধ সামাল দিয়েই নির্মাণ করা যায় এমন প্রামাণ্যচিত্র। এবার পোশাক, সাজসজ্জা এমনকি সিনেমার পাত্রপাত্রীদের রূপসজ্জার জন্যও পুরস্কৃত করা হয়েছে। আশা করা যায় এর মাধ্যমে চলচ্চিত্র শিল্পের প্রতিটি শাখার কর্মজীবী শিল্পীরা অনুপ্রাণিত হবেন, আগামীতে তারা আরও ভাল কাজের উদাহরণ সৃষ্টির জন্য উদ্যমী হবেন। চলচ্চিত্র একটি সম্মিলিত শিল্প। এখানে বহু শাখায় বহু শিল্পী সংযুক্ত থাকেন। এই শিল্প অত্যন্ত ব্যয়বহুলও। নিয়মিতভাবে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘোষিত হলে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ভেতর তৃপ্তি ও আনন্দলাভের উপলক্ষ ঘটবে। আমরা জানি, আলোচনা-সমালোচনা পুরস্কার-তিরস্কারের মধ্য দিয়েই একটি শিল্প উৎকর্ষের দিকে এগিয়ে যায়। প্রবীণ ও প্রতিষ্ঠিতদের পাশাপাশি চলচ্চিত্রশিল্পে নবাগতদের পদধ্বনি একটি নিয়মিত বিষয়। সেখানে সত্যিকারের প্রতিভাবানদের একসঙ্গে স্বীকৃতি লাভের ঘটনা ঘটলে গোটা শিল্পের জন্যই তা সুবাতাস বয়ে আনতে পারে। আশা করব, দর্শকদের সত্যিকারের বিনোদন দেয়ার পাশাপাশি দেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে ইতিবাচকভাবে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে এবারের পুরস্কারপ্রাপ্তরা বিশেষ অবদান রাখবেন।
×