ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন

প্রকাশিত: ০৩:২৮, ১৯ জানুয়ারি ২০১৮

আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন

শিল্প-সাহিত্য ও রাজনীতি একই জীবনের দু’রকম উৎসারণ। পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক। মানবজীবনে দু’টিরই প্রভাব অত্যধিক। শিল্প-সাহিত্য গণমানুষকে পথ দেখায় জীবনের দিকে, আনন্দ-বেদনার উচ্চাসনে, বেঁচে থাকার সারমর্মে, শোষণমুক্ত সমাজের পানে, মানুষের পাশে মানুষের দাঁড়াবার সাহসে। আর শক্তি যোগায় মেধা ও মননচর্চায়। রাজনীতি সেই মানুষকেই এগিয়ে নেয় স্বপ্ন আর আশা-আকাক্সক্ষা পূরণের পথে। জাগতিক উত্থানের রথে। সাহিত্য যেমন বিচ্ছিন্ন নয় জনজীবন থেকে, তেমনি রাজনীতিও। যার যার অবস্থান থেকে নিরন্তর পথ চলে ইহজাগতিকার স্তরে। বাংলাদেশ নামক দেশটির স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রাম ত্বরান্বিত হয়েছে সাহিত্য এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলনের হাত ধরে। সত্য, সুন্দরের সাধনা যেমন সাহিত্যের কাজ, তেমনি সত্য, ন্যায় ও মানবমুক্তির সাধনা রাজনীতির কাজ। উভয়ের সম্মিলিত প্রয়াস উন্নত জাতিসত্তা গঠনে সহায়ক হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটা বড় অংশ জুড়েই ছিল সাহিত্য-সংস্কৃতির অবদান। ইতিহাস একজন স্বৈরাচারীকে ক্ষমা করে দিতে পারে; কিন্তু কবি-সাহিত্যিককে নয়। কবি-সাহিত্যিকরাই সৃজন করে নয়া পৃথিবী। তাদের হাতেই গড়ে ওঠে মানবিক বিশ্ববোধ। বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু বাঙালী অন্তঃপ্রাণ ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী মনে করেন, তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধে জয় করা দ্বিগি¦জয়ীরা ইতিহাস সৃষ্টি করেন না, তারা শুধু ইতিহাসে আশ্রয় পান। ইতিহাস রচনা করেন লেখকরা। একটি ভাল কবিতা বা গল্প পড়ার মুগ্ধতা ভোলা যায় না সারা জীবনে। বাংলাদেশে চারদিনের সফরকালে দ্বিতীয় দিনে আয়োজিত আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি ছিলেন প্রধান অতিথি। আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন পরিষদ, বাংলা একাডেমি, নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন ও ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে এ আয়োজন উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রণব মুখার্জী নিখিল বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের সভাপতি ছিলেন। যে সংগঠনের গোড়ার দিকে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন সভাপতি। এটা তো ঐতিহাসিক সত্য যে, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে সাহিত্যচর্চা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সম্মেলন উদ্বোধনকালে বলেছেন, সাহিত্য অন্যায়-অসত্যের বিরুদ্ধে লড়তে শেখায়। যে সমাজ সাহিত্যে যত সমৃদ্ধ, সে সমাজ তত আধুনিক। সাহিত্যচর্চা মানুষের মধ্যে শুভ বোধের বিকাশ ঘটায়। মানুষের অমিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে। অসত্যের বিরুদ্ধে সাহিত্যকে স্থান দিয়েছেন বাংলার নেত্রী। বাংলাদেশের ‘জামাতা’ হিসেবে সমাদৃত প্রণব মুখার্জী বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল পুণ্য হোক বলে রবীন্দ্রনাথ যে আকুতি প্রকাশ করেছেন, তারই প্রতিফলন ঘটিয়েছেন সফরকালে ভাষণে। বাংলাভাষী মানুষটি মেধা ও মননে এমন স্থানে অবস্থান নিয়েছেন যে, তিনিই প্রথম ভারতের বাংলাভাষী বাঙালী রাষ্ট্রপতি হতে পেরেছেন। ভাষা আন্দোলনে রক্ত ঝরিয়ে বাঙালী বাংলা ভাষাকে বিশ্বে সমাদৃত করেছে যথাযথভাবে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এখন পালন করা হয়। একাত্তরে বাংলার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দাঁড়ানো প্রণব মুখার্জী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তনে ডি-লিট উপাধি গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে দু’বার এবং সাবেক হিসেবে এই প্রথম সফরকালে তিনি দু’দেশের মধ্যে গভীর সম্পর্কের কথা বলেছেন। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি তার প্রগাঢ় ভালবাসা এ দেশবাসী বারবার উপলব্ধি করেছে। পৃথিবীর কদর্য চেহারাটার পরিবর্তনে অঙ্গীকারবদ্ধ লেখকরা। বাংলা সাহিত্য শুধু তার কল্পনা, চিন্তা, প্রতিভার প্রতিফলন নয়, তার মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানবতার প্রতিফলন ঘটে। ইতিহাস সৃষ্টি করেন শিল্পী, সাহিত্যিক ও কবিরা। বাংলাদেশ একটি ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র। ভাষার জন্য জীবন দান করেছে তরুণরা। তাদের সেই রক্তদানের পথ ধরেই অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বজুড়ে আজ বাঙালীর অবস্থান। এসব বাঙালীর মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান জরুরী। এ ধরনের সাহিত্য সম্মেলন বাংলাভাষীদের পথ চলাতে সাহস ও শক্তির উৎস হতে পারে।
×