ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা নারী পাচার রোধ

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ৬ ডিসেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা নারী পাচার রোধ

পাচার হচ্ছে রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরী। আর পাচারের পর হয়ে যাচ্ছে বিক্রি। আকর্ষণীয় চাকরি ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দেহব্যবসা করার জন্য তাদের পাচার কাজ চলছে গোপনে, প্রকাশ্যে। বাংলাদেশীদের মধ্যে রোহিঙ্গাদের মিশে যাওয়া ঠেকাতে সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান চালানোর কঠোর নির্দেশ রয়েছে যদিও। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। এসব নির্দেশ উপেক্ষা করে বিভিন্ন কৌশল নিয়ে পাচারের কাজ অব্যাহত রাখা হয়েছে। কত নারী ও কিশোরী পাচার হয়ে গেছে তার কোন পরিসংখ্যান নেই। কেউ হারিয়ে গেলে বা নিখোঁজ হলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে জানান দেয় মাত্র। উখিয়া-টেকনাফের অস্থায়ী ক্যাম্প থেকে দু’হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা যুবতী ও কিশোরী এবং শিশু নিখোঁজ রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজনকে ফেরত পাওয়া গেলেও বাকিরা লাপাত্তা। উখিয়ার কুতুপালং, টিভি টাওয়ার পাহাড়, বালুখালী, মাইন্যারঘোনা, তাজনিমারখলা, হাকিমপাড়া, খাইংখালী ও তেলখোলা অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নারী ও কিশোরী পাচারকারীরা চালাচ্ছে অশুভ তৎপরতা। ত্রাণ বিতরণের নামে দামী যানবাহন নিয়ে ক্যাম্পগুলোতে তারা নারী, কিশোরীদের টার্গেট করছে। পাচারকারীরা সর্বত্র সক্রিয়। অবস্থা এমন যে, যে কোন সময় নারী, কিশোরী এমনকি শিশু পাচার ধারণ করতে পারে ভয়াবহ রূপ। বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজের নামে তারা পাচার হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্যে পাচার করে বিক্রি করা হচ্ছে। যাদের ঠাঁই হয় পতিতালয়ে। পাচারের বিষয়টি সরকারী-বেসরকারীভাবে জরিপের আওতায় আসেনি। তাই সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করা যাচ্ছে না। এক সময় কক্সবাজারের কুতুপালং ও নয়াপাড়ায় শরণার্থী ক্যাম্প নারী ও শিশু পাচারের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে পরিচিত ছিল। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বেশ কয়েক বছর ধরে পাচার হওয়া রোহিঙ্গা নারী শিশুকে উদ্ধার করে ভারত থেকে। এমনিতেই এটা একটি জীবন্ত দুঃস্বপ্ন। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কষ্টের কথা, তাদের বাস্তুচ্যুত হওয়ার যন্ত্রণা, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, ভয় এবং তাদের দুর্দশা বর্ণনা করার মতো ভাষা মেলে না। যতই দিন যাচ্ছে, বাস্তুচ্যুতদের নামছে ঢল। তবে নারী ও কিশোরীদের বিশেষ চাহিদা ও প্রয়োজনের দিকে সেভাবে মনোযোগ দেয়া হচ্ছে না। তাদের সম্ভ্রম রক্ষাও হয়ে পড়েছে কঠিন। পাচারের ঝুঁকিও যাচ্ছে না ঠেকানো। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের নিয়ে জঙ্গীবাদ বিস্তারের ষড়যন্ত্র চলছে। রোহিঙ্গা নারী-কিশোরীদের তারা টার্গেট করেছে জঙ্গীবাদে দীক্ষা প্রদানে। জঙ্গীরা গোপনে বিয়ে করে তাদের নিয়ে পাড়ি দিচ্ছে অন্যত্র। অসহায় নারী-কিশোরীরা তাদের প্রলোভনের ফাঁদে পা দিতে বাধ্য হচ্ছে। দশ লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে নারীর সংখ্যা সর্বাধিক। প্রতিদিনই নারী-শিশু নিখোঁজ হচ্ছে। নিখোঁজ সংবাদ প্রচার করতে মাইকিংসহ কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। কেউ হারিয়ে গেলেই মাইকিং করা হয়। যাদের অনেককেই আর উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। হদিসও পাওয়া যাচ্ছে না। পাচারের ঘৃণ্য কাজে জড়িতরা নানা বেশে ক্যাম্পগুলোতে প্রবেশ করে বিভিন্ন প্রলোভন ও অর্থের লোভ দেখাচ্ছে। এসব ঠেকাতে প্রশাসনিক উদ্যোগও কাজে আসছে না। বাস্তুচ্যুতরা যাতে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যেতে না পারে তার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পথে পথে রয়েছে চেকপোস্ট। তথাপি কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও রোহিঙ্গারা আইন ভঙ্গ করে ক্যাম্প থেকে অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। একাধিক দালাল চক্র এ কাজে সক্রিয় রয়েছে। অনেক দালাল গ্রেফতার হলেও প্রক্রিয়া থেমে নেই। পরিচয় গোপন করে বিয়ের তৎপরতাও চলছে। রোহিঙ্গাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নানা প্রলোভনে অসাধু চক্র পাচারের যে তৎপরতা চালাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী। মানবিকতার যে নিদর্শন বাংলাদেশ স্থাপন করেছে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয় দিয়ে, সেখানে এই পাচার প্রক্রিয়া অমানবিকতার নিদর্শন বৈকি। জনগণকে সম্পৃক্ত করা না গেলে শুধু প্রশাসনিকভাবে এই পাচার রোধ অকল্পনীয়। আশ্রিত এসব অসহায় মানুষকে রক্ষা করা এ দেশবাসীর দায়িত্ব। তাই এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার বিকল্প নেই আর।
×