ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদে বাড়ি ফেরা

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৪ আগস্ট ২০১৭

ঈদে বাড়ি ফেরা

সামনে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা। মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। এ উপলক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশের বিভাগীয় শহরগুলোর ঘরমুখো মানুষের ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। বাড়িতে যাওয়ার এই সাজসাজ রব অনেকটা উৎসবে পরিণত হয়, প্রাথমিকভাবে শুরু হয় টিকেট কাটার তোড়জোড়। যা অনেকটা ভোগান্তি কিংবা বিড়ম্বনার পর্যায়েও পৌঁছে। বাস-ট্রেন-লঞ্চ এবং উড়োজাহাজে ভ্রমণের তাগিদই নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে টিকেট কেনার ঝামেলাও। সুস্থ-স্বাভাবিক পথে টিকেট সংগ্রহ ধরাছোঁয়ার বাইরে। ইতোমধ্যে পরিবহন সংস্থার পক্ষ থেকে টিকেট সংগ্রহের তারিখও নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। যেহেতু ঈদের ছুটি নির্ধারিত হয়ে আছে ১, ২, ৩ সেপ্টেম্বর সেহেতু দেশের বাড়ি যাবার দিনটি সবাই বাছাই করেছে ৩০ অথবা ৩১ আগস্ট। আর পরিবহন হিসেবে সর্বাধিক গুরুত্ব পায় ট্রেন। নিরাপদ যাত্রা, যানজটের আশঙ্কা নেই, গন্তব্যে পৌঁছাতেও ঝক্কি-ঝামেলা কম। ফলে ট্রেনের টিকেটের চাহিদাও সব থেকে বেশি। রাজধানীর কমলাপুর, বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে যাত্রীদের যে সারিবদ্ধ লাইন তাতে গলদঘর্ম হয়ে টিকেট সংগ্রহ করা সত্যিই দুঃসহ। অনেক সময় সোজাপথে তা পাওয়াও দুষ্কর হয়ে যায়। নিয়মবহির্ভূত পথে তা পাওয়াও পর্বতপ্রমাণ বাধা। দালাল চক্রের হরেক রকম সঙ্কটের আবর্তে পড়তে হয়। দূরপাল্লার বাসের যাত্রীরও কমতি নেই। গাবতলী, কল্যাণপুর, শ্যামলীসহ অনেক বাস কাউন্টারে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়ে নাভিশ্বাস হওয়ার উপক্রম। এখানে সোজাপথে টিকেট সংগ্রহ করা গেলেও কালোবাজারিদের কার্যক্রমও থেমে থাকে না। সব থেকে বিপন্ন অবস্থার শিকার হতে হয় অসহায় এবং ঘরমুখো যাত্রীদের। সেখানে অর্থদ- থেকে শুরু করে সারাদিনের ধকলের যে বেহাল পরিণতি তাতেও ভোগান্তির সীমা থাকে না। দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের নদীপথ ছাড়া কোন গত্যন্তর নেই। ফলে লঞ্চের টিকেট সংগ্রহ করতে দুর্বিপাকে পড়তে হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশে অনলাইনে টিকেট ক্রয় শুরু হলেও সেটা এখনও মুষ্টিমেয় যাত্রীদের আওতায়। সর্বজনীন হতে যে আরও কত সময় লাগবে তা কেউ বলতে পারে না। এতো গেল শুধুমাত্র টিকেট সংগ্রহ করার ব্যাপার। যাত্রাপথ যে কতখানি সুষ্ঠু আর অবাধ হবে সেটাও হিসাবের বাইরে। প্রথমত সময়মতো গাড়ি ছাড়বে কিনা। এবার মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা-এর মতো এসে উপস্থিত হয়েছে দেশব্যাপী সর্বগ্রাসী বন্যা। সড়ক-মহাসড়ক, সেতু, রেলপথকেও করেছে এক সঙ্কটজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি। সড়ক পরিবহন এবং রেল মন্ত্রী এসব বেহাল সড়ক আর রেলপথের আশু সংস্কারের কথা দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করেছেন। তবে ভারি বৃষ্টিপাত পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে নাও রাখতে পারে বলে আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন। প্রকৃতির ওপর মানুষের তো কোন হাত থাকে না। সুতরাং প্রকৃতি যদি বিমুখ হয় তাহলে মানুষের সর্বাত্মক প্রচেষ্টাও প্রশ্নবিদ্ধ হযে যায়। তবুও সরকারের পক্ষ থেকে রাস্তাঘাট, সেতু, রেলপথ সংস্কারের সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে সরকারী এবং বেসরকারী উদ্যোগে ট্রেন, বাস, লঞ্চের সংখ্যাও বাড়ানো হয় যাতে যাত্রীরা নিরাপদে, নিশ্চিন্তে ভ্রমণ করতে পারে। তবে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখে মনে হয় প্রয়োজনের তুলনায় পরিবহনের সংখ্যা অপর্যাপ্ত। যা আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। বেহাল রাস্তাঘাটের ওপর চালক আর পরিবহনের কোন নিয়ন্ত্রণই থাকে না। যাত্রীরা পড়ে অসহনীয় বিপাকে। পথ-দুর্ঘটনাও নিত্যসঙ্গীর মতো পাশে থেকেই যায়। তবুও সংশ্লিষ্টদের আশা রাস্তাঘাট অচিরেই ঠিক হয়ে চলাচলের উপযোগী হবে। যাত্রাপথ নিরাপদ আর নির্বিঘœ হবে। ঈদের আনন্দ যাত্রায় ঘরমুখো মানুষগুলো হাসিমুখেই গন্তব্যে পৌঁছাবে। ঈদ উৎসবে যাত্রীসাধারণের ভ্রমণ নিরাপদ ও আনন্দদায়ক হোক এটাই প্রত্যাশা।
×