ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

অপ্সরা-অপ্সরী

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৯ আগস্ট ২০১৭

অপ্সরা-অপ্সরী

সেই কবে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘সুন্দর বটে তব অঙ্গদখানি তারায় তারায় খচিত/স্বর্ণে বণে লোভন শোভন জানি স্বর্ণে বর্ণে রচিত/’ সুন্দরের সহযাত্রী হওয়ার আকুল বাসনা মানব মনে চির বিরাজিত। সুন্দরের পূজারী শুধু কবি নয়, বিশ্ব মানবের প্রায় সকলেই। সৌন্দর্য চর্চার মধ্য দিয়ে কলুষতা দূূর করার প্রাণপণ প্রচেষ্টা প্রকারান্তরে মনের শুদ্ধতাকে জাগরূক করে তোলে। প্রকৃতির ভেতর সুন্দরের যে অবিনাশী সুর বেজে ওঠে, তাতে মননের পুষ্পগুলো প্রস্ফুটিত হয় সৌন্দর্যের বরাভয়ে। নিজেকে সুন্দর করে তোলার মধ্যে শুদ্ধতার আমেজ বিনির্মিত হয়। দার্শনিক ইমারসন জানিয়েছিলেন, সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র। তাই সুন্দরের দিকে তাকিয়ে থাকায় নিমগ্নতার আমেজ আসে। সম্ভবত আদিকাল থেকেই সুন্দরের চর্চা চলে আসছে। বিশেষত নারী জাতির মধ্যে রূপচর্চা চলে আসছে। আর এই চর্চার সঙ্গে জড়িত প্রসাধনও মানুষ আবিষ্কার করেছিল আদিকালেই। রূপচর্চা নারীর একান্ত হলেও সেকালে পুরুষের মধ্যে এর প্রভাব না থাকলেও অভিজাত ও বিত্তবানরা পোশাকে আশাকে, চলনে বলনে, সুগন্ধী ব্যবহারের মধ্য দিয়ে দৈহিক সৌন্দর্যকে প্রকাশ করতেন। নারীর মতো পুরুষদের মধ্যেও ছিল অলঙ্কারের ব্যবহার। রূপচর্চায় প্রসাধনীর ব্যবহার প্রাচীন। শুধু তরুণীরা নয়, মধ্য বয়সীরাও রূপচর্চায় আগ্রহী ছিল। বয়স্কাদের সাধ আহ্লাদ হয়ত ছিল অলঙ্কার পরিধানে। সৌন্দর্যচর্চা নর-নারীর জীবনচর্চায় চিরন্তন এক অধ্যায় ক্লিওপেট্রার সৌন্দর্যচর্চা এখনও আলোড়িত-আলোচিত। তিনিও ব্যবহার করতেন নানা রকমের প্রসাধনী। শ্বেতাঙ্গ বা কৃষ্ণাঙ্গ গাত্রবর্ণ যা-ই হোক, সুন্দরের পূজারী সবাই, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে। সেকালে শুধু কেন, গত শতকেও রূপচর্চার প্রতিষ্ঠান তেমন ছিল না। একালে বিউটি পার্লার শহর ছাড়িয়ে গ্রামেও গড়ে উঠেছে। কিশোরী, তরুণী থেকে মধ্য বয়সী নারীদের এখন প্রিয় স্থানে পরিণত হয়েছে পার্লারগুলো। বিয়ের কনের সাজ একালে পার্লার ছাড়া আর হয় না। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্তরা এখন পার্লার থেকে ‘সাজুগুজু’ করার মধ্যেই সৌন্দর্য প্রকাশের মাত্রা খুঁজে পায়। চুলের সাজ, অবয়বের সৌন্দর্য সবই এখন পার্লারকেন্দ্রিক। পার্লারগুলোর গোড়ার দিকে কয়েকটি সাজের মধ্যেই ছিল সীমাবদ্ধ। আর এখন তো বাহারি সাজের বাহারি রূপের ছটা প্রকাশিত হতে থাকে। কদাকার চেহারাও সৌন্দর্য বিলায় সাজের বাহারে। হাতে-পায়ে নেলপলিশ, ভ্রু উপড়ানো, চোখের পাতায় ফলস ব্যবহারেও আছে নানা বৈচিত্র্য। শুধু নারী নয়, একালের পুরুষরাও পার্লারে যায়। তাদের জন্য চালু হয়েছে ‘জেন্টস পার্লার।’ ছেলেদের এবং মধ্য বয়সীদের চুলের নানা স্টাইল দেখা যায়। এ সবই পার্লারের ফল। চুলের যে কত ধরনের ‘ছাঁট’ আছে সেকালে এমনটা দেখা যেত না। আর একালে চুল রিবন্ডিং, চুলের হাইলাইট, স্পা ট্রিটমেন্ট, স্টেপ কাট, লোয়ার কাট, ফিস কাট, ভলিউম কাট, সেকিং কাট, ফ্রিনডোস কাট, বাংলা কাট, মিড লেন্থ, ভি কাট, ইউকাট, ইমোকাট ইত্যাকার কত কি কাট যে রয়েছে চুলের, সৌন্দর্যপিয়াসীরা তার হদিস ঠিকই জানে। ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষা এবং প্রসাধনী ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোন কোন পার্লারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়। কারণ প্রসাধনী ব্যবহারেও আছে নানা সমস্যা। বাজারে প্রাপ্ত প্রসাধনী থেকে সৃষ্টি হতে পারে ত্বকের প্রদাহ, হতে পারে এলার্জি। আবার চুলে কলপ কিংবা ব্যবহারের স্প্রে থেকেও এলার্জি হতে পারে। নেলপলিশ, লিপস্টিক, সানস্ক্রিন, লোশন বা ক্রিম ত্বকোপযোগী না হলে সমস্যা হতে পারে। দিন যতই বাড়ছে, ততই বাড়ছে প্রসাধনীর সংখ্যা। তাই বিভিন্ন প্রসাধনীর নির্বিচার ব্যবহার ক্ষতির কারণ হতে পারে। আবার বার বার প্রসাধনীর পরিবর্তন যুক্তিসঙ্গত নয়। যার যেটার এলার্জি হয় না, সেটাই ধরে রাখা ভাল। সুন্দরের অপর পিঠে অসুন্দর বাসা বাঁধতে পারে। তাই সতর্কতা অবশ্য পালনীয়। ‘সাজুগুজু’ করার বাসনা সব মানুষেরই মনে সুপ্ত থাকে। সৌন্দর্য চর্চা মানুষের মনের সুন্দরকেও প্রকাশিত করে যেন এই প্রত্যাশা চিরকালের।
×