ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

অপশক্তির রেহাই নেই

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৭ জানুয়ারি ২০১৭

অপশক্তির রেহাই নেই

বিদায়ী বছরের শেষ দিন নিজ বাসায় নজিরবিহীনভাবে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হয়েছেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। এতে বিভিন্ন মহল থেকে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ উচ্চারিত হয়েছে। নতুন বছরের প্রথম দিনই সব ক’টি পত্রিকার সংবাদ শিরোনামে একজন সংসদ সদস্যকে হত্যার বিষয়টি জনমনে আতঙ্ক তৈরি করার মতোই। এ হত্যার প্রতিবাদে রবিবার সুন্দরগঞ্জ এলাকায় হরতাল পালিত হয়। সংসদ সদস্য হত্যাকা- এদেশে প্রথম নয়। এর আগে আওয়ামী লীগের দু’জন সংসদ সদস্য শাহ এএমএস কিবরিয়া ও আহসানউল্লাহ মাস্টারকে হত্যা করা হয়েছে। তৎকালীন বিএনপি সরকার এ জন্যে জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পর্যন্ত আনতে দেয়নি। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার কালবিলম্ব না করে সংসদ সদস্য হত্যাকা-ে জড়িতদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছে এবং তাদের বিচারের ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কেউ রেহাই পাবে না। তিনি এ হত্যাকা-ে জড়িত থাকার বিষয়ে বিএনপি-জামায়াতের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এবং উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ সভায় নেতৃবৃন্দের বক্তব্যে এমপি লিটন হত্যাকা-ের বিষয়টি আলোচিত হয়। সঙ্গত কারণে প্রত্যেকেই এ হত্যাকা-ের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার কথা বলেন। যে কোনো হত্যাকা-ের পেছনে হত্যাকারীর উদ্দেশ্য থাকে। এমপি লিটন একাত্তরের ঘাতকশক্তি জামায়াতের বিরুদ্ধে এলাকায় শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছিলেন। বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনের নামে সহিংসতা, নাশকতা ও শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যাকা-ের সময় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জেও তারা নারকীয় সন্ত্রাস চালিয়েছে। পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে চার পুলিশকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, অস্ত্র লুট করে নিয়ে গেছে। সে সময় এলাকায় প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এমপি লিটন। এছাড়া অতীতে তিনি ওই এলাকায় জামায়াত নেতা গোলাম আযমের জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে দেননি। এসব কারণে তিনি বরাবরই জামায়াত-শিবিরের টার্গেট ছিলেন। সুন্দরগঞ্জে জামায়াত-শিবিররা বার বার লিটনকে হত্যার চেষ্টা করেছে। অনেকবারই তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। একজন সংসদ সদস্যকে তাঁর বাড়িতে ঢুকে এভাবে গুলি করে হত্যা করা আমাদের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ওপর বড় আঘাত। সংসদ সদস্যরা জনগণের প্রতিনিধি। একজন জনপ্রতিনিধির ওপর হামলার অর্থ হচ্ছে তার রাজনৈতিক সংগঠনের ওপরেই আঘাত হানার অপচেষ্টা। সন্দেহ নেই এটি প্রতিপক্ষ সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কাজ। জামায়াতে ইসলামী তার নামের সঙ্গে লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত বাংলাদেশ শব্দটি যুক্ত করেছে। কিন্তু তারা জাতির কাছে একাত্তরের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চায়নি। উপরন্তু তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নস্যাৎ করার জন্য গোড়া থেকেই নানা ওজর-আপত্তি তুলে বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি অনাস্থা ব্যক্ত করে চলেছে। এখন তারা নৈরাজ্যের নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে। জঙ্গী-সন্ত্রাসী, গুপ্তহত্যাকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ও ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োচিত আহ্বানে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ সাড়া দেবেন, এটাই প্রত্যাশিত। এমপি হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের যেভাবেই হোক খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ দেশবাসীর মনে স্বস্তি বয়ে আনবে।
×