ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিলম্বিত বিচার কাম্য নয়

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বিলম্বিত বিচার কাম্য নয়

জাস্টিস ডিলেইট জাস্টিস ডিনাইড বলে একটা কথা প্রচলিত আছে। বিলম্বিত বিচার মূলত বিচার না পাওয়ার নামান্তর। এ উদাহরণ যে শুধু রাজধানীতেই সহজলভ্য, তা নয়। সিলেটসহ দেশের অন্যত্রও এ জাতীয় উদাহরণ প্রায়ই মেলে। দীর্ঘ এক যুগেও বিচার শেষ হয়নি সিলেট অঞ্চলের অর্ধশতাধিক বোমা হামলার ঘটনার। এসব চাঞ্চল্যকর মামলার মধ্যে রয়েছে হযরত শাহজালাল (র) উরস, ঢাকায় নিযুক্ত তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার, আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও মেয়রকে বোমা মেরে হত্যা চেষ্টা ও হত্যা মামলা। এসব ঘটনায় জঙ্গীদের বোমা হামলায় প্রাণ হারায় ১৭ জন। অনেকে মারাত্মক আহত হয়ে অদ্যাবধি দিনাতিপাত করছেন ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সংঘটিত জঙ্গী হামলাগুলোর পেছনে তৎকালীন সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধনসহ অধিকাংশ ক্ষেত্রে তদন্তে গড়িমসি ও সময়ক্ষেপণ এবং ত্রুটিপূর্ণ মামলা দায়েরের কারণে ন্যায়বিচার পেতে বিলম্ব হচ্ছে। অথচ জঙ্গীদের মামলার অধিকাংশ জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল এবং সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। এসব মামলার মধ্যে বিশেষ করে কিবরিয়া হত্যা মামলা, ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী হত্যা চেষ্টা এবং সংসদ সদস্য ও সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান হত্যা চেষ্টা মামলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিলেট জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মামলা চলাকালীন প্রায়ই আসামিরা আসে না অথচ নির্দিষ্ট দিনে আদালতে আসামিদের হাজির করার দায়িত্ব প্রধানত কারা কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। সমস্যা হলো, আসামিদেরই যদি যথাসময়ে হাজির করা না হয়, তাহলে সাক্ষীরা উপস্থিত থাকলেও আদালত সাক্ষ্য নিতে পারে না। আবার একই সময়ে বিভিন্ন আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকায় আইনজীবীরাও সঠিক সময়ে উপস্থিত থাকতে পারেন না আদালতে অথচ অর্থ ও প্রভাব খাটিয়ে জামিন নিয়ে অনেক জঙ্গীর মুক্তির খবরও আছে। ফলে মামলা শুনানি দীর্ঘ হচ্ছে এবং রায় পেতে হচ্ছে বিলম্ব। ন্যায় বিচারের স্বার্থে এহেন অবস্থা কাম্য নয় কোন অবস্থাতেই। অনুরূপ ঘটনার সন্ধান মেলে চট্টগ্রামেও। সন্দ্বীপের একটি হত্যা মামলার বিচার শেষ হয়নি দীর্ঘ ২৩ বছরেও। চতুর্থ অতিরিক্ত চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ১৯৯৩ সালের ৬ আগস্ট সন্দ্বীপে সংঘটিত একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এ পর্যন্ত মামলাটির তারিখ পড়েছে ৪৩ বার। ২৫ সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষী দিয়েছেন মাত্র ছয় জন। অভিযুক্ত আট আসামির মধ্যে প্রধান তিন আসামি মারা গেছেন। বয়সের ভারে বাদীও চলাফেরা করার শক্তি হারিয়েছেন। আরও অবাক ব্যাপার, গত সাড়ে আট বছরে একজন সাক্ষীও সাক্ষ্য দেননি। অতঃপর শয্যাশায়ী বাদী হতাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘ছেলে হত্যার বিচার দেখে মরতে পারব বলে মনে হয় না।’ অনুরূপ উদাহরণ আছে ভূরি ভূরি, অজস্র, অসংখ্য। দেশব্যাপী চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে দফায় দফায় হত্যা চেষ্টা মামলা, রমনা বটমূলে বোমা হামলা, ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা বিস্ফোরণ। জেল হত্যা মামলা ইত্যাদি। এ রকম অসংখ্য জাতীয় ও জনগুরুত্ব সম্পর্কিত মামলা বিচারাধীন দেশের সর্বোচ্চ আদালতসহ বিভিন্ন আদালতে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রধান অভিযোগ, সাক্ষী আসেন না অথবা, সাক্ষীদের সঠিক সময়ে হাজির করা হয় না আদালতে। বাস্তবে বিচার বিভাগ এখন স্বাধীন। সেক্ষেত্রে যথাসময়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দায়দায়িত্ব বর্তায় আদালতের। কারাগার কর্তৃপক্ষ, আইনশ্ঙ্খৃলা বাহিনী সর্বোপরি বিজ্ঞ আদালতসহ সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা বারের সহায়তায় সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করলে উপযুক্ত সময়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হতে পারে। আদালতের ভাবমূর্তি রক্ষাসহ ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখতে সেটাই প্রত্যাশিত।
×