ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দেশের পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো প্রায়ই ভুল সংবাদ প্রচার করে, সংশোধন না করেই অপসারণ করে দেয় :প্রেস সচিব

প্রকাশিত: ০৯:২১, ৫ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৯:২৮, ৫ জুন ২০২৫

দেশের পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো প্রায়ই ভুল সংবাদ প্রচার করে, সংশোধন না করেই অপসারণ করে দেয় :প্রেস সচিব

ছবি:সংগৃহীত

প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ব্যক্তিগত ফেসবুক স্ট্যাটাসে বাংলাদেশের সাংবাদিকতার অন্যতম গুরুতর সমস্যা হিসেবে সংবাদমাধ্যমে তথ্য বিকৃতি ও ভুয়া খবরের বিস্তার তুলে ধরেছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রথিতযশা পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো প্রায়ই ভুল সংবাদ প্রচার করে এবং সংশোধন না করেই তা অপসারণ করে দেয়। কেবলমাত্র যখন সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি চাপ দেওয়া হয়, তখনই তারা ন্যূনতম সংশোধনমূলক পদক্ষেপ নেয়।

শফিকুল আলম উদাহরণ দিয়ে বলেন,

> "গতকাল সকালেই শেখ মুজিবুর রহমান এবং স্বাধীনতার চার বীর সেনানীর মুক্তিযোদ্ধা মর্যাদা নিয়ে একটি ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের পক্ষ থেকে ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যয় করে ভুলগুলো পরিষ্কার করার পরও, কিছু সংবাদমাধ্যম তা সরাতে দীর্ঘ সময় নেয়, আর দুঃখপ্রকাশ করে না বললেই চলে। অথচ, এই মিথ্যা প্রতিবেদন ভারতীয় মিডিয়াসহ লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ‘পুনর্লিখনবাদী’ (revisionist) এজেন্ডা রয়েছে—এমন অভিযোগ উস্কে দেয়।”

তিনি আরও বলেন, একই রাতে একটি শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম “মানবিক করিডোর” বিষয়ক একটি অনুবাদ ভুল করে বসে। জাতিসংঘের এক কূটনীতিকের বক্তব্যের ভুল অনুবাদ সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। বহু রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্টজন সরকারের কাছে ব্যাখ্যা দাবি করেন, অথচ সংবাদমাধ্যমটি চুপচাপ অনুবাদটি সরিয়ে নেয়, প্রথমে কোনো সংশোধনী বা ব্যাখ্যা ছাড়াই। শফিকুল আলম জানান,

“আমি রাত ১২টার পর DW বাংলা-কে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে ভুল সংশোধনের অনুরোধ করি।”

তিনি উল্লেখ করেন,

“এই দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আমার প্রতিদিনকার কাজের বড় একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভুয়া খবর শনাক্ত ও প্রতিরোধ করা। এমন পরিমাণ ভুয়া তথ্য ছড়ায় যে, এগুলো প্রতিরোধে ২০০ জনের একটি টিম প্রয়োজন।”

প্রেস সচিব আরও বলেন,

“ভুয়া খবরের বাস্তব ও মারাত্মক পরিণতি রয়েছে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা গণহত্যার পিছনেও ছিল মিথ্যা তথ্যের বিস্তার, যা আজও আমাদের পররাষ্ট্র নীতির বড় সংকট। এমনকি গবেষকরা বলেন, ২০০৯ সালের বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পেছনেও দাল-ভাত প্রকল্প নিয়ে ছড়ানো ভুল তথ্য ভূমিকা রেখেছিল।”

আন্তর্জাতিক দৃষ্টান্ত তুলে ধরে তিনি জানান,

“পশ্চিমা দেশগুলোতে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর জন্য বড় শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। ফক্স নিউজ ভুয়া নির্বাচনী তথ্য প্রচার করে \$৭৮৭.৫ মিলিয়ন জরিমানা দিয়েছে। ব্রিটেনে সংবাদপত্রগুলো নিয়মিতভাবে মানহানির মামলায় জরিমানা গুণছে।”

তার বিপরীতে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শফিকুল আলম বলেন,

“এখানে জনপ্রিয় টিভি ভাষ্যকাররা বিনা যাচাইয়ে সেলিব্রিটি বা সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে দেন। তাদের ব্যস্ত শিডিউলের কারণে তথ্য যাচাইয়ের সময় নেই, আর শাস্তির অভাবে কেউও তথ্য যাচাইয়ে উৎসাহিত হন না।”

শেষে তিনি সতর্ক করেন,

“যখন ভুল তথ্য ছড়ানোর কোনো পরিণতি নেই, তখন সত্য যাচাইয়ের পেছনে সময় খরচ করার কোনও প্রেরণা থাকে না।”
 

আঁখি

×