ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৬ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২

অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে অনলাইন সভা অনুষ্ঠিত হয়

প্রকাশিত: ০২:৩০, ২০ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১২:৪৭, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে অনলাইন সভা অনুষ্ঠিত হয়

ছবি: সংগৃহীত

গেল জুলাই আন্দোলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা এক দফা দাবিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান ও পতিত শেখ হাসিনাকে রক্ষার জন্য সেসময়ের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) শিক্ষকদের করা গোপন মিটিংয়ের ভিডিও সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।

ভাইরাল হওয়ার পর থেকে ভিডিওটি নিয়ে সারাদেশে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠে। একইসাথে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, গত বছরের ৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে করা ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের একটি গোপন মিটিংয়ের ভিডিও পাওয়া গেছে। যেখানে শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়িয়ে যেকোনো উপায়ে সরকার পতন ঠেকাতে শিক্ষকদের বদ্ধপরিকর হতে দেখা যায়।

একইসাথে সভায় জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে বিবৃতি দেয়া শিক্ষকদের বিভিন্ন হুমকি দেয়া হয়। এছাড়া আঁধার কেটে গেলে হাসিনার বিপক্ষে থাকা সবাইকে মুখোমুখি করার হুমকি দেন শিক্ষক সমিতির ওই সময়ের সভাপতি ড. তারেক মাহমুদ আবির।

এ সময় মিটিংয়ে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাজের বিবৃতিতে স্বাক্ষর করায় ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহসিন উদ্দীনকে তোপের মুখে পড়তে দেখা যায়।

রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় ওই মিটিংয়ে অংশ নেন তৎকালীন প্রক্টর আব্দুল কাইয়ুম, শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুল বাতেন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক তারেক মাহমুদ আবিরসহ শতাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা।

মিটিংয়ে আব্দুল বাতেন চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ঘোষিত এক দফার কোনো যৌক্তিকতা নেই, আমি বিশ্বাস করি না। এ আন্দোলনে যারা নেমেছে তাদের ঘৃণা করি আমি। একইসাথে এ আন্দোলন প্রত্যাখ্যান করি। আমরা সবাই আওয়ামী লীগে অর্থাৎ শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত, তাই আমাদের শেখ হাসিনার পক্ষে দাড়ানো দায়িত্ব। সময় এসেছে প্রমাণ করার!’

ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক আরিফ হোসেন তার বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের কার্যক্রমকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘যারা শেখ হাসিনাকে হঠাতে এক দফা ঘোষণা দিয়েছে আমরা তাদের প্রতিহত করতে চাই।’

এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন দিল আফরোজ খানমকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি বিশ্বাস করি এ মুহূর্তে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই।’

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এমন কথোপকথনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষজনের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। দেশজুড়ে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায় ওই সভাকে ঘিরে।

শরিফ হোসাইন আহম্মেদ চোধুরী নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে লেখেন, ‘উনারা কিভাবে নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পরিচয় দিচ্ছেন? গতবছর ১৬ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত দেশব্যাপী এতগুলো নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটলো, সে ব্যাপারে একজন শিক্ষকও সমবেদনা প্রকাশ করলেন না।’

তিনি আরো লিখেন, ‘রাজনৈতিকভাবে প্রত্যেকেরই একটা আদর্শিক অবস্থান থাকতে পারে। কিন্তু আমার বুঝে আসে না একজন শিক্ষক এতটা দেউলিয়া, দলকানা বা দলদাশ কিভাবে হতে পারেন? সেই দুঃসময়ে যে সকল মেরুদণ্ডসম্পন্ন মানবিক শিক্ষক নিপীড়নবিরোধী বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন এবং নিজের অবস্থানে সুদৃঢ় ছিলেন তাদের অবশ্যই পুরস্কৃত করা উচিত।’

ফেসবুকে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিন খান বলেন, ‘এ ভিডিওটা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কতটা লজ্জার এটা অবর্ণনীয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে গর্ব বর্তমান প্রশাসন আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসন করে তা ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে। আজকে যদি ফ্যাসিবাদের পতন না হতো তাহলে সেসব শিক্ষকরা এ মাটিতে আওয়ামী বলে সর্বত্র পদচারণা করতো।’

ফেসবুকে জাহেদুল কবির লেখেন, ‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব শিক্ষকেরা শিক্ষক নামের কলঙ্ক। যারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ সম্পর্কে কোনো জ্ঞান রাখে না। একজন শিক্ষকের মধ্যে কমপক্ষে ন্যূনতম মনুষ্যত্ববোধ থাকা উচিত। ন্যায়, অন্যায়ের বিবেচনা বোধ থাকা উচিত।’

আর দশ বছর সময় পেলে এ জাতিকে তারা মেধাশূন্য করে দিতো বলেও মন্তব্য করেন এ নেটিজেনরা।

রাকিব

×