ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

সুদ বাবদ দিয়েছে ৪৫ লাখ ডলার

বাংলাদেশের পুরো ঋণ শোধ করেছে শ্রীলঙ্কা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:২৪, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশের পুরো ঋণ শোধ করেছে শ্রীলঙ্কা

বাংলাদেশের পুরো ঋণ শোধ করেছে শ্রীলঙ্কা

দুই বছর আগে মুদ্রা বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের কাছ থেকে যে ২০০ মিলিয়ন বা ২০ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা, তার পুরোটাই শোধ করেছে দেশটি। শ্রীলঙ্কা শেষ কিস্তির ৫০ মিলিয়ন বা ৫ কোটি ডলার ও ঋণের সুদ বাবদ ৪৫ লাখ ডলার পরিশোধ করেছে। শনিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক জনকণ্ঠকে জানান, শ্রীলঙ্কা শেষ কিস্তির ৫০ মিলিয়ন ডলার ও ঋণের সুদ বাবদ ৪.৫ মিলিয়ন ডলার বৃহস্পতিবার রাতে পরিশোধ করেছে। এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশকে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ফেরত দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। তার আগে ১৭ আগস্ট প্রথম কিস্তিতে ৫০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছিল দেশটি।
জানা গেছে, করোনা মহামারির কারণে শ্রীলঙ্কার পর্যটন খাত ব্যাপক ক্ষতিতে পড়েছিল। বৈদেশিক বিনিময়ে প্রতিনিয়ত মান হারাতে শুরু করে দেশটির মুদ্রা রুপি। এতে টান পড়ে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুতে। এমন পরিস্থিতিতে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে ডলার ধার করে শ্রীলঙ্কা। ‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শ্রীলঙ্কার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ২০২১ সালের ১৯ মার্চ ঢাকায় এসেছিলেন। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। ওই বৈঠকের ধারাবাহিকতায় শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ডব্লিউ ডি লক্ষ্মণ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে ডলার চেয়ে চিঠি দেন। এরই অংশ হিসেবে ২০২১ সালের মে মাসে বাংলাদেশ সরকারও ২০ কোটি ডলার ধার দেয় দেশটিকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, শ্রীলঙ্কাকে প্রথম দফায় ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট পাঁচ কোটি ডলার ছাড় করে বাংলাদেশ ব্যাংক। দ্বিতীয় দফায় ১০ কোটি ডলার দেওয়া হয় একই বছরের ৩০ অক্টোবর। এরপর পাঁচ কোটি ডলার দেওয়া হয় নভেম্বরে। মুদ্রা বিনিময় চুক্তির সময় শ্রীলঙ্কাকে তিন মাসের মধ্যে লন্ডন ইন্টারব্যাংক অফার রেট+ ২ শতাংশ সুদ হারসহ ঋণ পরিশোধের কথা ছিল। লন্ডন ইন্টারব্যাংক অফার রেট আন্তঃব্যাংক বাজারে স্বল্পমেয়াদি ঋণের গ্লোবাল রেফারেন্স রেট এবং চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত স্বল্পমেয়াদি সুদের হারের বেঞ্চমার্ক হিসেবে কাজ করেছে। পরে লন্ডন ইন্টারব্যাংক অফার রেটের জায়গায় সিকিউরড ওভারনাইট ফিন্যান্সিং রেট কাজ করে।

অর্থনৈতিক সংকটে রিজার্ভ তলানিতে ঠেকায় ২০২২ সালের এপ্রিলে ৫১ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ সুদসহ শোধ করতে পারবে না বলে জানায় শ্রীলঙ্কা। ওই সময় শ্রীলঙ্কা নিজেকে ঋণ খেলাপি হিসেবে ঘোষণা দেয়। একই সঙ্গে নিজেদের দেউলিয়াও ঘোষণা করে দেশটি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ঘাটতির কারণে দ্বীপরাষ্ট্রটি ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছিল। পরে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চের মধ্যে শ্রীলঙ্কার ঋণ পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের তীব্র ঘাটতির মুখে থাকায় ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ জানায় শ্রীলঙ্কা। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েক দফা সময়ও বাড়ায়।

নতুন সময়সীমা অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে শ্রীলঙ্কাকে ঋণ পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করায় গত ১৭ আগস্ট শ্রীলঙ্কা প্রথম পাঁচ কোটি ডলার ফেরত দেয়। এরপর ২ সেপ্টেম্বর ফেরত দেয় আরও ১০ কোটি ডলার। সবশেষে বাকি পাঁচ কোটি ডলার গত বৃহস্পতিবার রাতে ফেরত দেয় তারা। অর্থাৎ, মোট তিন কিস্তিতে বাংলাদেশ থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করেছে শ্রীলঙ্কা। একই সঙ্গে ঋণের সুদ বাবদ ৪৫ লাখ ডলার পরিশোধ করেছে দেশটি।
এ প্রসঙ্গে পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে ধস নামার পর বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ হস্তক্ষেপ করে। আইএমএফ নতুন ঋণও দেয়। অপরদিকে সেখানে বৈদেশিক আয়ের অন্যতম উৎস ট্যুরিজম খাত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তারা ঋণের তিন কিস্তির পুরো অর্থ ফেরত দিয়েছে। এটা বাংলাদেশের জন্য সুখবর। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতায় শ্রীলঙ্কা একটি দারুণ উদাহরণ হতে পারে। কারণ দেশটি এখন তাদের সংকটময় পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। শ্রীলঙ্কা সম্প্রতি জানিয়েছে, দেশের মূল্যস্ফীতি ৬.৩ শতাংশে নেমে এসেছে। এর মাধ্যমে দুই বছরের মধ্যে প্রথমবার মূল্যস্ফীতি এককের ঘরে নেমেছে। পর্যটন ও রেমিটেন্স থেকে আসা ডলারের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা বেড়েছে। বিষয়টি ঋণ পুনর্গঠনের মাধ্যমে আইএমএফের বেলআউট পেতে দেশটিকে সহায়তা করবে আশা করা হচ্ছে।

×