ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী চলতি মাসেই ইতালি যাচ্ছেন

কূটনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:২৬, ৬ জুলাই ২০২৩

প্রধানমন্ত্রী চলতি মাসেই ইতালি যাচ্ছেন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে ইতালি সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ইতালি সফরে পাঁচটি চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সফরেই অভিবাসন, জ্বালানি, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা এবং আইসিটি ও সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ক চুক্তি সই নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। এছাড়াও ২৪-২৬ জুলাই রোমে অনুষ্ঠেয় ফুড সিস্টেম সামিটে মূল অনুষ্ঠানে বক্তব্যও দেবেন শেখ হাসিনা। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইউরোপের বড় দেশ ইতালির সঙ্গে চুক্তি সই হলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ইতালির সঙ্গে প্রতিরক্ষা এবং আইসিটি ও সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ক চুক্তি করা হলে ভবিষ্যতে সম্পর্ক কৌশলগত স্তরে নিতে সুবিধা হবে। এছাড়া ইতালির প্রযুক্তি বাংলাদেশের ছোট ও মাঝারি শিল্পের উৎপাদনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন তারা।
এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ইতালির সঙ্গে সহযোগিতার অনেক সুযোগ রয়েছে। উৎপাদন খাতে ওই দেশে মাঝারি মানের বিভিন্ন প্রযুক্তি রয়েছে এবং সেগুলো যদি বাংলাদেশ সংগ্রহ করতে পারে তবে উৎপাদন খাতে বড় ধরনের সুযোগ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
ইতালির বৈশ্বিক ফ্লসি প্রোগ্রামের আওতায় অন্যান্য দেশের পাশাপাশি দুই বছর ধরে ৭-৮ হাজার সিজনাল বাংলাদেশী কর্মী ইতালি যাচ্ছে। ফ্লসি প্রোগ্রামটি সারা বিশ্বের জন্য এবং বাংলাদেশের আগ্রহ ইতালির সঙ্গে বাংলাদেশী পাঠানোর জন্য পৃথক একটি চুক্তি করা যার মাধ্যমে কন্সট্রাকশন বা শিপ বিল্ডিং বা অন্য খাতেও যেখানে ইতালির আগ্রহ রয়েছে সেখানে কর্মী পাঠানো যায়। বর্তমানে ওইসব খাতে ইতালি পূর্ব ইউরোপ থেকে কর্মী সংগ্রহ করে থাকে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়েছে যার অধীনে প্রশিক্ষণ, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী, সক্ষমতা বৃদ্ধি, ক্রয়সহ অন্যান্য বিষয় রয়েছে। ইতালির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা চুক্তি করার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। যদি ইতালির সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি হয় তবে ইউরোপের দ্বিতীয় কোনো দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ এ ধরনের চুক্তি করবে। এর আগে ২০২১ সালে ফ্রান্সের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে।
জ্বালানি চুক্তির অধীনে ইতালি থেকে এলএনজি আমদানি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি সহযোগিতা, জ্বালানি শোধন প্রযুক্তিসহ অন্যান্য বিষয় থাকবে। সহযোগিতার ক্ষেত্রে ইতালির সঙ্গে অভিবাসন ও নিম্নমানের প্রযুক্তি হস্তান্তর খাতে সহযোগিতার বড় সম্ভাবনা আছে। এ বিষয়ে সাবেক সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, অনেক বাংলাদেশী অবৈধপথে ইতালি পাড়ি জমায় যা রোম ভালো চোখে দেখে না। দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই সম্পর্কের জন্য এটি বন্ধ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। তিনি বলেন যে বৈধপথে ইতালিতে লোক পাঠানো ব্যবস্থা করা সম্ভব হলে অবৈধপথে যাওয়া হ্রাস পাবে বলে মনে হয় এবং এটি সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়তা করবে।
নিম্ন প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়ে তিনি বলেন, আফ্রিকার অনেক দেশ বিশেষ করে মিসরে নিম্ন প্রযুক্তি সরবরাহ করে থাকে ইতালি এবং মিসর থেকে ইতালির প্রযুক্তিতে উৎপাদিত পণ্য পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। বাংলাদেশে যদি ইতালির প্রযুক্তির পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হয়, তবে অভ্যন্তরীণ বাজারের পাশাপাশি সেগুলো নেপাল, ভুটান এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে পাঠানো সম্ভব হবে। 
কৌশলগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত, চীন ও জাপানের কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে এবং ওই দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে হবে। এখন আমরা হয়তো ইউরোপের কোনো দেশের সঙ্গেও কৌশলগত সম্পর্ক গড়ার বিষয়ে আগ্রহী হবো।
পশ্চিম ইউরোপের সবচেয়ে বড় দুটি দেশ হচ্ছে জার্মানি ও ফ্রান্স। কিন্তু ইতালির সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক হলে ভালো হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, একটি দেশের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপনের আগে বিবেচনা করতে হবে সেটি অন্য দেশের সঙ্গে স্থাপিত কৌশলগত সম্পর্কের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা অথবা ভুল বার্তা দেওয়া হচ্ছে কিনা।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘ খাদ্য ব্যবস্থা শীর্ষক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য ইতালি যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে সর্বশেষ ২০২০ সালে ইতালি সফর করেন শেখ হাসিনা।

×