ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৬ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

দিনে মিলবে ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস : নসরুল হামিদ

প্রকাশিত: ১৭:৩৫, ৩ নভেম্বর ২০২২; আপডেট: ১৯:৩৮, ৩ নভেম্বর ২০২২

দিনে মিলবে ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস : নসরুল হামিদ

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ

বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সংকটে চলছে হাহাকার। উর্ধ্বমুখি জ্বালানির মূল্যে দিশেহারা এমনকি উন্নত দেশগুলোও। বাংলাদেশেও পড়েছে এর চরম নেতিবাচক প্রভাব। স্পট মার্কেট থেকে বন্ধ রয়েছে উচ্চমূল্যে গ্যাস কেনা। এমন অবস্থায় দেশীয় গ্যাস খাত নিয়ে সুখবর দিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। 

মন্ত্রী জানিয়েছেন, নতুন উদ্যমে দেশীয় কূপ অনুসন্ধানের প্রেক্ষিতে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে ভোলার টবগী-১ কূপে। চলতি সপ্তাহেই উৎপাদন শুরু হবে এটিতে। এখান থেকে প্রতিদিন ২০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস তোলা যাবে এবং তা জাতীয় গ্রীডে যোগ করা হবে। শুধু তাই নয় দেশীয় কূপ অনুসন্ধান ও খননের প্রেক্ষিতে আগামী ৩ বছরে অর্থাৎ ২০২৫ সাল নাগাদ জাতীয় গ্রীডে অন্তত: ৮০০মিলিয়ন ঘনফুট নতুন করে যোগ হওয়ারও আশা প্রকাশ করেন তিনি। 

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে গ্যাস পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই অনুসন্ধান কূপে গ্যাসের সম্ভাব্য মজুত ধরা হয়েছে প্রায় ২৩৯ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ)। 

এখান থেকে দৈনিক গড়ে ২০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস উৎপাদন বিবেচনায় ৩০-৩১ বছর গ্যাস উৎপাদন সম্ভব হবে। টবগী-১ কূপে গ্যাসের বর্ণিত মজুত বিবেচনায় গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের আনুমানিক মূল্য প্রায় ৮০৫৯.০৮ কোটি টাকা, যা এলএনজি আমদানি মূল্য বিবেচনায় বহুগুণ।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে পর্যায়ক্রমে আরও দুটি কূপ (ইলিশা-১ ও ভোলা নর্থ-২) খনন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে এই ৩টি কূপ থেকে সর্বমোট দৈনিক ৪৬ থেকে ৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হতে পারে।
 
তবে উৎপাদন শুরু হলেও ভোলার গ্যাস এখনই জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে না জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রসেস প্ল্যান্ট বসাতে হবে। এজন্য অন্তত দেড় বছর সময় প্রয়োজন হবে। অফগ্রিডের এসব গ্যাস আনার জন্য কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখন স্বল্প পরিসরে গ্যাস আনা হবে। পরে স্থায়ীভাবে ভোলা-বরিশাল হয়ে পাইপলাইন করা হবে।
 
তিনি বলেন, দেশীয় জ্বালানির উৎস অনুসন্ধানে কাজ করছে সরকার। এ লক্ষ্যে ২০২২-২৫ সময়কালের মধ্যে পেট্রোবাংলা মোট ৪৬টি অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও ওয়ার্কওভার কূপ খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে বাপেক্সের তত্ত্বাবধানে গৃহীত প্রকল্পের আওতায় গ্যাজপ্রমের মাধ্যমে গত ১৯ আগস্ট ভোলা জেলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের টবগী-১ অনুসন্ধান কূপটি প্রায় ৩৫০০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত খনন লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ৩৫২৪ মিটার গভীরতায় খননকাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

কূপে সম্ভাব্য গ্যাস মজুত ও উৎপাদন হার নিরূপণে গৃহীত কারিগরি পরীক্ষামূলক টেস্টিং (ডিএসটি) কার্যক্রম গত ১ নভেম্বর সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সর্বশেষ পরিচালিত ডিএসটি কার্যক্রমে ৩২/৬৪ ইঞ্চি চোক সাইজ ব্যবহার করে ওই কূপ হতে গড়ে দৈনিক ২০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস ফ্লো টেস্ট করা হয়েছে, যা আশাব্যঞ্জক।

জানা যায়, শাহবাজপুর গ্যাস ফিল্ড হতে টবগী-১ কূপ এলাকাটি আনুমানিক ৩.১৭ কিমি. দূরে অবস্থিত। ভূতাত্ত্বিক তথ্যাদি এবং ডিএসটি রিপোর্ট অনুযায়ী এ অনুসন্ধান কূপে গ্যাসের সম্ভাব্য মজুত প্রায় ২৩৯ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ)। 

আগামী ৭ নভেম্বর নাগাদ কূপটি দ্রুত উৎপাদনক্ষম করার লক্ষ্যে কূপের কমপ্লিশন এবং ক্রিসমাস ট্রি স্থাপন কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। এছাড়া ইলিশা-১ ও ভোলা নর্থ-২ এই দুই কূপ থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে ৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যবে বলে তিনি জানান।

লোডশেডিং প্রসঙ্গে যা বললেন:
সাম্প্রতিক সময়ের লোডশেডিং বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনারা দেখছেন লোডশেডিং অনেকটা কমেছে। আমরা আশা করছি জানুয়ারিতে আরও উন্নতির দিকে যাবে। সংকট যদি আরও বেড়ে যায় সে চিন্তা থেকেই আমরা সাশ্রয় করছি। আগামী বছর কী করে পরিস্থিতি সামাল দেব সে পরিকল্পনা এখন থেকে করা হচ্ছে। খারাপকে খারাপভাবে ফেস করতে হবে। চেষ্টা করছি এরচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি যাতে না হয়।

তিনি বলেন, আমরা এখনও ভালো আছি। আমরা কিছু সাশ্রয় করছি। আমরা বিদ্যুতে সাশ্রয় করছি, গ্যাসে সাশ্রয় করছি। সবারই কষ্ট হচ্ছে। এটা আমরা অস্বীকার করছি না। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সব দেশের অবস্থাই এক। সবাই অনিশ্চিতায়, ভবিষ্যতে কী হবে। কেউ কী জানতো, এই পরিস্থিতি হবে। 

তিনি বলেন, শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করার পরও আমাদের পরিস্থিতি ভালো ছিল। কিন্তু জ্বালানি সংকটে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছি না।

স্পট মার্কে থেকে গ্যাস কিনলে লস হতো প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা!

স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আনতে অতিরিক্ত ব্যয়ের কথা উল্লেখ করে এসময় মন্ত্রী বলেন, এখন যদি এক জাহাজ গ্যাস আনা হয় তাহলে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। কিন্তু ওই গ্যাস বিক্রি করে পাওয়া যাবে মাত্র ৫৮ কোটি টাকা। এত লস কিভাবে দেয়া যায় আপনারাই বলেন। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। আমাদের বিকল্প জ্বালানির বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসতে শুরু করেছে। কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে আগামী গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। কিন্তু কয়লার দামও বেড়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি এর চাইতে যেন খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়।

কূপ খননের যত পরিকল্পনা:

প্রতিমন্ত্রী আগামী তিন বছরের কূপ খননের নানা পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে ৪৫টি কূপ খনন করা হবে। এতে ২০২৫ সালের মধ্যে আমাদের ৬০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে। কিন্তু আমাদের পুরাতন ক্ষেত্রের উৎপাদন প্রতি বছর ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট করে কমছে। আমরা যদি ধরে নেই আগামী কয়েক বছরে ৪০০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন গ্যাস কমে যাবে। তারপরও ২০ মিলিয়নের মতো গ্যাস থেকে যাবে। তবে আমরা আশাবাদী আরও দুইটি স্ট্রাকচারে পিএসসির অধীনে কাজ চলছে। 

শেভরনকে নতুন করে ৬৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা দেওয়া হয়েছে। সেখানে তারা কাজ করছে। এছাড়া আরও কিছু এলাকায় গ্যাস পাওয়া যাবে। আমরা আশা করছি আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে ৭০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। 

কিন্তু সেই সঙ্গে আমাদের চাহিদাও বেড়ে যাবে। যেভাবে আমাদের শিল্পায়ন ঘটছে সেক্ষেত্রে চাহিদা অনেকগুণ বেড়ে যাবে। এই অবস্থায় আমাদের চেষ্টা থাকবে নিজেদের গ্যাস ব্যবহার করে চাহিদা পূরণ করার। কিন্তু এর মধ্যে যদি বিশ্ববাজারে দাম করে তাহলেই হয়তো চাহিদার বাকিটা এলএনজি আমদানি করতে পারবো।

এমএস

×