স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঈদের ছুটি, রোজার শেষ সময়, বৈশাখের খরতাপ উপেক্ষা করে সদ্যপ্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ছুটে আসেন সব শ্রেণী-পেশার মানুষ। রাজনৈতিক ব্যক্তি, বিশিষ্টজন, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের অশ্রুসজল উপস্থিতিতে ভারি হয়ে ওঠে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। এদিন দুপুরে সাড়ে ১২টায় সাবেক এ অর্থমন্ত্রীর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয়। এ সময় তার ভাই ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকাল ১১টায় রাজধানীর গুলশানে আজাদ মসজিদে সম্পন্ন হয় তার প্রথম জানাজা। দ্বিতীয় জানাজা জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও অনিবার্য কারণে তা বাতিল করা হয়। পরে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেয়া হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে বাদ জোর দ্বিতীয় জানাজা শেষে সড়ক পথে তার মরদেহ সিলেটে পৈত্রিক নিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়।
শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিত। বর্ষীয়ান এ রাজনীতিকের মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। পৃথক পৃথক শোকবাণীতে তারা মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
সকালে গুলশান কেন্দ্রীয় মসজিদে প্রথম জানাজায় সাংবাদিকদের সঙ্গে স্মৃতিচারণ করেন একে আবদুল মোমেন। এ সময় তিনি বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মৃত্যুতে একজন ‘ট্যালেন্ট অভিভাবককে’ হারিয়েছি। মুহিত ভাইয়ের মতো ট্যালেন্টেড লোক আমাদের পরিবারে আর নেই। তিনি খুবই মহৎ ছিলেন। আমরা একজন অভিভাবককে হারালাম। তিনি বলেন, মুহিত ভাই আমার ভাই হিসেবে, বন্ধু হিসেবে আমাদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক ছিল। তার মৃত্যু খুবই দুঃখজনক। এ সময় তিনি জানান, সাবেক এই অর্থমন্ত্রীকে সিলেটের রায় নগরে সাহেব বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। ওখানে মরহুমের বাবা-মা, দাদা-দাদিসহ সবার কবর রয়েছে।
সংসদ ভবনের সামনে জানাজার আয়োজন না করার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই বছর ধরে করোনার কারণে সংসদ ভবনের সামনে কারও জানাজা আয়োজন করা যায়নি। আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। সংসদের অধিকাংশ স্টাফ এখন ছুটিতে। এই কারণে সেখানে সাবেক অর্থমন্ত্রীর জানাজা সম্ভব হয়নি।
কেন্দ্রীয় মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে এসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বন্ধের দিনেও তাকে অফিসে দেখা যেত। অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি সফল ছিলেন। এদেশের রাজনীতিতে সৎ মানুষ বেশি নেই, মুহিত সাহেব শতভাগ সৎ লোক ছিলেন। তিনি অর্থমন্ত্রী হিসেবে সংসদে ১২টি বাজেট পেশ করেছেন। তার মধ্যে ১০টি শেখ হাসিনার সরকারের সময়।
এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, আবুল মাল আবদুল মুহিত ছিলেন আপাদমস্তক একজন ভদ্র মানুষ। তার কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার ছিল।
এর আগে শহীদ মিনারে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কবীর আহাম্মদ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া শ্রদ্ধা জানান, জাতীয় সংসদের স্পীকারের পক্ষে সার্জেন্ট এ্যাট আর্মস কমোডর এম এম নাঈম রহমান। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
একাধিকবারের সফল সাবেক এই অর্থমন্ত্রীর দাফন পূর্ববর্তী কর্মসূচীর বিষয়ে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, রবিবার (আজ) দুপুর ১২টায় সিলেট শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মরদেহ নেয়া হবে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। দুপুর ২টায় হযরত শাহজালাল (র) এর মাজারে জোহরের নামাজ শেষে নগরীর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে তার শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর নগরীর রায়নগরে সাহেব বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বমানের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সিলেট বিভাগের এই কৃতী সন্তানের মৃত্যুতে দুই দিনের শোক ঘোষণা করেছে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ। শুধু তাই নয় ঈদের পরের দিন মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনায় হযরত শাহজালাল (র) এর মাজারসহ নগরীর বিভিন্ন মসজিদে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক জাকির হোসেন।
আরও যারা শোক প্রকাশ করেছেন ॥ শিশুসুলভ সারল্য নিয়ে সবার মন জয়কারী দেশের কৃতী এই সন্তানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন সরকারের দায়িত্বশীল সব দফতরগুলো। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মৃত্যুতে আরও যারা শোক প্রকাশ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ। এক শোক বার্তায় তিনি বলেছেন, শিক্ষা, সরকারী চাকরি, রাজনীতি, অর্থনীতি, সাহিত্য সব মিলিয়ে বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। অপর শোক বার্তায় জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেন, দেশের অর্থনীতির ভিত মজবুত করতে মুহিতের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। একজন অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছেন। আবুল মাল আবদুল মুহিতের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন এমপি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এমপি, বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মোঃ মাহবুব আলী, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক), কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, রেলপথমন্ত্রী মোঃ নূরুল ইসলাম সুজন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম, প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন ও প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি ও প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, এফবিসিসিআই’র সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিনসহ অনেকে।
জনকণ্ঠের চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানানো হয়, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভাষাসৈনিক সাবেক সফল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত (৮৮) এর মৃত্যুতে চট্টগ্রামের মেয়র, সাংবাদিকসহ বিশিষ্টজনরা পৃথক বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। বিবৃতিতে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এবং প্রেস ক্লাবের নেতারা মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
