ওয়াজেদ হীরা ॥ প্রথম ধাপে দেশের ১২৫ উপজেলায় নির্মাণ করা হয়েছে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম। দ্বিতীয় ধাপে আরও ১৮৬টি উপজেলায় নির্মাণ করা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে স্টেডিয়ামের জন্য ৫৭টি জেলা থেকে বেছে নেয়া এই ১৮৬টি উপজেলা। স্টেডিয়াম নির্মাণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে ‘উপজেলা পর্যায়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১ হাজার ৬৪৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উপজেলা পর্যায়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান পরিচালনাসহ খেলোয়াড়দের অনুশীলনের জন্য অবকাঠামো সুবিধা বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এরইমধ্যে প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) পরবর্তী যেকোন বৈঠকে প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হবে। একনেক বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদনের পর ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। গত ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যেকটা উপজেলায় একটি করে মাস্টারপ্ল্যান করতে বলেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যেহেতু আমরা প্রত্যেকটা উপজেলায় মিনি স্টেডিয়ামসহ অনেক স্থাপনা তৈরি করছি। তাই ওই মাস্টারপ্ল্যানে কোথায় কী হবে, তা যেন সন্নিবেশিত থাকে।
এর আগে একটি জিমনেশিয়ামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল জানান, তরুণ প্রজন্মকে খেলাধুলায় উৎসাহিত করতে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় ১৮৬টি মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের খেলার মাঠগুলো যাতে কোনভাবে হারিয়ে না যায়, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা উন্মুক্ত স্থান ও খেলার মাঠগুলো সংরক্ষণ করার লক্ষ্যে আমরা দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে সরকারীভাবে একটি করে খেলার মাঠ সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে উপজেলা পর্যায়ে ১২৫টি শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ সম্পন্ন করেছি। আরও ১৮৬টি মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় মাঠগুলোর প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন্ন রেখে সকলে যাতে মাঠে খেলাধুলায় অংশ নিতে পারে সেদিকে নজর রেখেই উন্মুক্ত পরিবেশে স্টেডিয়ামগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জাতীয় জীবনে শৃঙ্খলা, সুস্বাস্থ্য, নেতৃত্ব ও চরিত্র গঠনে খেলাধুলার অবদান অপরিসীম। বিশেষ করে দেশের তরুণ ও যুব সমাজকে ক্রীড়া কার্যক্রমে আগ্রহী করে প্রাণচাঞ্চল্য ও চিত্ত-বিনোদনের সুযোগ তৈরির মাধ্যমে তাদের পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ তৈরিতেও খেলাধুলার ভূমিকা অনস্বীকার্য। সে কারণেই সরকার প্রতিটি উপজেলায় খেলার মাঠ নির্মাণের জন্য উপজেলা পর্যায়ে একটি করে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেয়। এর অংশ হিসেবে প্রথম পর্যায়ে ১২৫টি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্প ২০১৯ সালের ৩০ জুনে শেষ হয়েছে। এবারে দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৮৬টি উপজেলায় এই মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে।
প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আবুল কালাম আজাদ এর আগে বলেছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সংশ্লিষ্ট উপজেলায় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন করা সহজ হবে। তাছাড়া এসব স্টেডিয়ামে খেলোয়াড়রা অনুশীলন করতে পারবেন। তাতে করে তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা বাড়বে। সার্বিকভাবে খেলাধুলার মান উন্নয়নে এই প্রকল্প সহায়ক হবে। প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়ন, প্রতিটি উপজেলায় শেখ রাসেলের ম্যুরাল স্থাপন, প্যাভিলিয়ন ভবন নির্মাণ, গ্যালারি, কম্পিউটার সামগ্রী ও আসবাবপত্র কেনাকাটা, আরসিসি সারফেস ড্রেন নির্মাণ এবং গাছ লাগানো।
প্রকল্পটি নিয়ে গত ১২ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা।