ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

কুয়াশার দাপট কেটে গেলেই জেঁকে বসবে শীত

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ১৩ ডিসেম্বর ২০২০

কুয়াশার দাপট কেটে গেলেই জেঁকে বসবে শীত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দ্রুতই আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। ঘন কুয়াশা কেটে গিয়ে দেখা মিলবে রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিনের। তবে কুয়াশা কাটলেও শীত আরও ঘনিয়ে আনছে। আবহাওয়াবিদরা জানান, ক্রমেই তাপমাত্রা কমে গিয়ে শীত বাড়বে। সেইসঙ্গে ১৭ ডিসেম্বর থেকে শৈত্য প্রবাহ শুরু হলে শীত জেঁকে বসতে পারে। দু’একদিনের মধ্যে দেশের কোথাও কোথাও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে ঘন কুয়াশা আর উত্তরের কনকনে ঠাণ্ডায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েকগুণ বেশি। এদিকে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি মাত্রার কুয়াশাও অব্যাহত থাকতে পারে। তারা জানান শীতকালে কুয়াশা পড়বে এটাই স্বাভাবিক। সাধারণত শীতের শুষ্ক মৌসুমে বাতাসে যখন আর্দ্রতার পরিমাণ কমে যায় তখন মাটি থেকে আর্দ্রতা ওপরে উঠে এই কুয়াশার সৃষ্টি হয়। এ কারণে নদী অববাহিকাসহ যে এলাকায় জলাশয় বেশি থাকে সেখানে পুরো শীতকালে কুয়াশা থাকে। তবে এবারের শীত ঋতু উত্তরের দেশগুলো থেকে আসায় সাগর থেকে আসা জলীয় বাষ্পের সঙ্গে কুয়াশা মিলিত হয়ে এর ঘনত্ব বাড়িয়ে দেয়। তবে দ্রুতই এই কুয়াশাময় পরিস্থিতি কাটছে। তারা জানান, দু’একদিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের আভাস রয়েছে। এই সময় সারাদেশে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের এক বা একাধিক স্থানে। সেইসঙ্গে শীতও বাড়বে। এদিকে রাজধানীসহ সারাদেশে শনিবারও কুয়াশার দাপট অব্যাহত ছিল। প্রায় সপ্তাহ খানেক যাবত দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে। ফলে যান চলাচল, বিমান উঠানামা এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে যাত্রী ভোগান্তি। এরমধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীতে মেঘের ফাঁক গলে সূর্যের দেখা মেলে। কিন্তু তা স্থায়ী হয়নি। শুক্রবার থেকে আবারও কুয়াশা এবং মেঘে ঢাকা পড়ে সারাদেশ। শনিবারও সারাদিন সূর্যের দেখা মেলেনি। তবে আবহাওয়াবিদরা জানান, আজকালের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করবে। এ সময় কুয়াশা কেটে গেলে রোদের দেখা মিলতে পারে। কুয়াশার দাপট শেষে রোদেলা আবহাওয়ায় সপ্তাহ শেষে শীত জেঁকে বসবে বলে জানিয়েছেন জ্যৈষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান। শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এদিন ঢাকায় শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, ২৪ ঘণ্টায় আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। তবে রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের দু’এক জায়গায় হাল্কা বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। ঘন কুয়াশার কারণেই উত্তরাঞ্চলের কোথাও কোথাও এ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী তিনদিনে উত্তুরে হাওয়ার সঙ্গে রাতের তাপমাত্রা কমার আভাস দেন তিনি। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, মৌসুমী লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এর একটি বর্ধিতাংশ অবস্থান করছে উত্তর বঙ্গোপসাগরে। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার ও এর আশেপাশের এলাকা পর্যন্ত অবস্থান করছে। এর প্রভাবে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। আগামী ১৭ বা ১৮ ডিসেম্বর থেকে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। ওই সময় সপ্তাহ খানেক দেশের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম ॥ ঘন কুয়াশার কারণে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট অবতরণ ও উড্ডয়নে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ফ্লাইটের সিডিউল ঠিক রাখা যাচ্ছে না। শনিবার সকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে দুবাই থেকে চট্টগ্রামের আকাশে আসলেও প্রথমে নামতে পারেনি। বিমানের ক্যাপ্টেন এটিকে সিলেট বিমানবন্দরে অবতরণ করান। সেখানে একঘণ্টারও বেশি সময় কাটিয়ে পরে এটি চট্টগ্রাম এসে অবতরণ করে। বিমানবন্দর সূত্র জানায়, সকাল পৌনে ১১টার দিকে ঘন কুয়াশা কেটে যাওয়ার পর এ বিমানবন্দরে প্রথম অবতরণ করে ঢাকা থেকে আসা বিমানের অভ্যন্তরীণ একটি ফ্লাইট। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ফ্লাইট অবতরণ করলেও সিডিউল ঠিক রাখা যায়নি। এদিকে তীব্র কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে রেল কর্তৃপক্ষ বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে। এমার্জেন্সি সেল গঠন করা হয়েছে। চালক, গার্ড ও স্টেশন মাস্টারসহ পরিবহন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মীদের নির্দেশনার আলোকে ট্রেন পরিচালনা করার আদেশ দেয়া হয়েছে। রাতে দু’দিক থেকে আসা ট্রেনের মুখোমখি ক্রসিং পরিহার করার আদেশ দেয়া হয়েছে। ট্রেন ক্রসিংয়ের সময় দুই ট্রেনের চালক, গার্ড ও স্টেশন মাস্টারদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষার কথা বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে কন্ট্রোল রুমকে এ বিষয়ে নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যে কোন ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তারা দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা মনিটরিং করছেন। এছাড়া ইমার্জেন্সি সেল গঠন করা হয়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটিতে জাহাজ আনা-নেয়ার কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। জোয়ারভাটার ওপর নির্ভরশীল এ বন্দরে বহির্নোঙ্গরে অপেক্ষমাণ জাহাজগুলোকে সিডিউল অনুযায়ী ভেড়ানো হয়। সে হিসেবে প্রতিনিয়ত বার্থিং সিডিউল দেয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে এ সিডিউল ধরে রাখা যাচ্ছে না। ক্ষেত্র বিশেষে পিছিয়ে যাচ্ছে সিডিউল। শুধু তাই নয়, কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকা কর্ণফুলী নদী দিয়ে জাহাজের আনা-নেয়া একটি কঠিন বিষয় হয়ে আছে। এরপরও আমদানি রফতানি পণ্য বোঝাই জাহাজের চলাচল অব্যাহত রাখা হয়েছে। কুড়িগ্রাম ॥ কুয়াশা আর কনকনে ঠাণ্ডায় স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। গরম কাপড়ের অভাবে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ছিন্নমূল ও নিম্নআয়ের মানুষেরা। কাজে বের হতে পারছেন না শ্রমজীবী মানুষ। সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলার ৪ শতাধিক চরাঞ্চলের হতদরিদ্র পরিবার। তীব্র শীতকষ্টে ভুগছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই ঘন কুয়াশার চাঁদরে ঢেকে যাচ্ছে প্রকৃতি। এ অবস্থা চলছে পরের দিন ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত। হতদরিদ্র মানুষজন তীব্র শীতকষ্টে ভুগলেও সরকারী ও বেসরকারীভাবে শীতবস্ত্র বিতরণের কোন তৎপরতা চোখে পড়ছে না। সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের বলদীপাড়া গ্রামের ছলিমা বেগম জানান, খুবই ঠাণ্ডা পড়েছে। আমরা দিনমজুর মানুষ। প্রতিদিন কাজ চলে না। টাকা পয়সা নাই গরম কাপড় কিনতে পারছি না।
×