ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপদ শিশু নিরাপদ দেশ- শেষ

মাদক গিলে খাচ্ছে ভবিষ্যত প্রজন্মকে

প্রকাশিত: ২২:৫২, ৮ অক্টোবর ২০২০

মাদক গিলে খাচ্ছে ভবিষ্যত প্রজন্মকে

রাজন ভট্টাচার্য ॥ রাজধানীর বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত মতিঝিল ও ফকিরাপুল এলাকায় রাস্তার দু’পাশে ছোটখাটো টং বা ভাসমান দোকানের অভাব নেই। সব দোকানেই অন্য কোন নিত্যপণ্য পাওয়া না গেলেও বিড়ি বা সিগারেট আছেই। বুধবার সকাল ১০টার চিত্র যদি বলি তাহলে অন্তত ২৫টি দোকান ঘুরে দেখা গেছে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ক্রেতা। অর্থাৎ যাদের বয়স ১২ থেকে ২০ এর মধ্যে। এসব শিশুদের প্রত্যেককেই সিগারেট কিনতে দেখা গেছে। যার যার আর্থিক সাধ্য অনুযায়ী কিনে জনবহুল স্থানেই দিব্যি খেয়ে বেড়াচ্ছে! কমলাপুর, খিলগাঁও, নয়াপল্টন, কাকরাইল, মগবাজার, সায়েদাবাদ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় এলাকা, মুগদা, বাসাবো, মীরপুর, মহাখালীসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে সাধারণ দোকানগুলোতে সারাদিনের বিড়ি সিগারেটের ক্রেতাদের মধ্যে একটা বড় অংশই অপ্রাপ্ত বয়স্ক। এসব শিশুদের মধ্যে রয়েছে, ভাসমান ও পথশিশু, স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী। পাড়া মহল্লায় বখাটে শিশুদের একটি বড় অংশই সিগারেট, ড্যান্ডি, ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের নেশায় আসক্ত। অভিভাবকদের অগোচরেই ভয়াল এই নেশা গিলে খাচ্ছে ভবিষ্যত প্রজন্মকে। এতে অন্ধকারে ডুবছে শিশুদের আলোকিত ভবিষ্যত। মাদক গ্রহণ করা শিশুরাই বলছে, তারা হাত বাড়ালেই পাচ্ছে সব ধরনের নেশা জাতীয় পণ্য। যে কোন সময় রাজধানী শহরের যে কোন প্রান্তেই-নগদ অর্থ হলেই এসব সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, মাদক সংগ্রহে বয়স কোন বাধা নয়। সেইসঙ্গে নিজেদের ইচ্ছেমতো যেখানে খুশি মাদক নিলেও কেউ কিছুই বলে না। জনবহুল স্থানে সিগারেট খাওয়া নিষিদ্ধ; খেলে আর্থিক জরিমানা বা দ-ের বিধান আছে, তাও জানা নেই কোমলমতি এসব শিশুদের। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের কাছে মাদক বিক্রি করা যাবে না, করলে আর্থিক জরিমানা ও কারাদ- এরকম বিধান রেখে দেশের শিশু আইন সময় উপযোগী করা প্রয়োজন। চিকিৎসকরা বলছেন, মাদকের কারণে নষ্ট হয়ে যেতে পারে ভবিষ্যত প্রজন্ম। সমাজে বাড়তে পারে প্রতিবন্ধী শিশু। বাধাগ্রস্ত হতে পারে শিশুদের মানসিক, শারীরিক বিকাশ। বাড়তে পারে আত্মহত্যার প্রবণতাও। তাই যে কোন মূল্যে শিশুদের মাদকের হাত থেকে রক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, মাদকের উৎপাদন ও চোরাচালান বন্ধ করতে হবে। কঠোরভাবে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলে একটি আলোকিত প্রজন্ম গড়ে তোলা সম্ভব হবে। তা না হলে মাদকাসক্তির কারণে সমাজে নানা রকম বিশৃঙ্খলা বাড়ছে, বাড়বে। কর্মের প্রয়োজনে প্রায় ২০ বছর সিঙ্গাপুর কাটিয়েছেন নিলুফা মজুমদার। এখন ঢাকায় থাকেন। ঘুরে বেড়িয়েছেন অন্তত ৫০টির বেশি দেশ। বিশে^র উন্নত দেশ বা শহরের তুলনায় আমাদের দেশের শিশুরা অনেকটা অরক্ষিত জীবনযাপন করায় বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ একেবারেই নেই। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো প্রতি পাড়া মহল্লায় শিশুরা গ্রুপ কালচারে বিশ^াসী হয়ে উঠছে। এরই ধারাবাহিকতায় বন্ধুদের হাত ধরেই অপর বন্ধু নেশায় আসক্ত হচ্ছে। এতে পরিবারে বিশৃঙ্খলা বাড়ছে। সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সামাজিক নানা অপরাধ। সমাজে একটি শিশু যেখাবে বিকশিত হওয়ার কথা, তা হচ্ছে না। সময়মতো তার লেখাপড়া শেষ হচ্ছে না। এমনকি অনেক শিশু অকালে পড়াশোনা থেকে ঝড়ে গিয়ে নানা অপরাধে নিজেদের জড়াচ্ছে। তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরসহ উন্নত দেশ ও শহরে অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুদের কাছে মাদক বিক্রি আইন করে নিষিদ্ধ করা আছে। সরকারের পক্ষ থেকে তা কঠোরভাবে দেখভাল করা হয়। কেউ আইন ভঙ্গ করলে আর্থিক জরিমানা বা কারাদ- দেয়া হয়। এমনকি উভয়দ-েও দ-িত করা হচ্ছে অপরাধীদের। তাছাড়া সেসব দেশে প্যাকেট ছাড়া খুচরা সিগারেট বিক্রি হয় না। কিন্তু আমাদের দেশে হাত বাড়ালেই অল্প দামে খুচরা সিগারেট কেনা সম্ভব। ফলে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের সিগারেটের প্রতি আসক্তি বাড়ছেই। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯০ অনুযায়ী, এ্যালকোহল ছাড়া অন্য কোন মাদকদ্রব্যের চাষাবাদ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বহন, পরিবহন, আমদানি, রফতানি, সরবরাহ, কেনা, বিক্রি, ধারণ, সংরক্ষণ, গুদামজাতকরণ, প্রদর্শন, প্রয়োগ ও ব্যবহার করা যাবে না। এই আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে রয়েছে শাস্তির বিধান। অথচ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মাদকের ব্যবসা চলছে অবাধে। বাংলাদেশের মাদক পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ৬৮ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত। তাদের মধ্যে ৮৪ শতাংশ পুরুষ, ১৬ শতাংশ নারী। আর দেশজুড়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ নানাভাবে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তি থেকে শুরু করে নারী ও শিশু-কিশোরেরাও এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। দেশে মাদকাসক্ত ৬৫ লাখ, মাদক ব্যবসায় জড়িত নারী ও শিশুরা এমনি এক উদ্বেগজনক একটি চিত্র বেরিয়ে এসেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তথ্যে। যার মধ্যে ৯১ শতাংশ কিশোর ও তরুণ। মাদকাসক্তদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। পথশিশুদের একটি বড় অংশ মাদকে আসক্ত। এদিকে ফ্যামেলি হেলথ ইন্টারন্যাশনালের পৃথক পরিসংখ্যান সূত্রে জানা যায় দেশে সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদকসেবীর সংখ্যা প্রায় এক লাখ। এ মাদকাসক্তরা শিরায় মাদক গ্রহণ কারায় এইচআইভি ঝুঁকির মধ্যে বেশি থাকে। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য মতে, পথশিশুদের ৮৫ ভাগই কোন না কোনভাবে মাদক সেবন করে। এর মধ্যে ১৯ শতাংশ হেরোইন, ৪৪ শতাংশ ধূমপান, ২৮ শতাংশ বিভিন্ন ট্যাবলেট ও ৮ শতাংশ ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশা করে থাকে। সংগঠনটির তথ্যানুযায়ী ঢাকা শহরে কমপক্ষে ২২৯টি স্পট রয়েছে যেখানে ৯-১৮ বছর বয়সী শিশুরা মাদক সেবন করে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ২১টি স্পটে সুচের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ, ৭৭টি স্পটে হেরোইন সেবন এবং ১৩১টি স্পটে গাঁজা সেবন করা হয়। যার প্রমাণ পাওয়া গেছে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে। অর্থাৎ কমলাপুর রেলস্টেশন, সদরঘাট, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশপাশের এলাকা ও বস্তিতে মাদকাসক্ত শিশুর সংখ্যা বেশি। আরও ভয়াবহ তথ্য হলো, শিশুরাই হচ্ছে শিশুদের পিতা-মাতা। অর্থাৎ পথ শিশুদের একটি অংশ অবাধ মেলা মেশার মধ্য দিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে। এক পর্যায়ে অপ্রাপ্ত বয়সে কন্যা শিশুরা মা হচ্ছেন। মাদকাসক্ত পিতা-মাতার কারণে বিকলাঙ্গ ও প্রতিবন্ধী শিশুরও জন্ম হচ্ছে। শহরের সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনজুড়ে আছে ভাসমান মানুষের বসবাস। যাদের একটি অংশ শিশু। অনেকের জন্ম এই উদ্যোনেই। বেড়ে ওঠা, ভবিষ্যত এখানেই। এমন একজন আবির। সে জানাল, আমি যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই আপন বলতে কেউ নেই। এক খালার কাছে থাকি। বাবা-মা কে; আমার খালাও বলতে পারেন না। আমি এ নিয়ে ভাবিও না। ভবঘুরে জীবনযাপনে টুম্পার সঙ্গে পরিচয় হয়। একসঙ্গে চলি, নেশা খাই। এভাবেই প্রেম। আর প্রেম থেকে বিয়ে। আমাদের একটি সন্তান আছে। তিন বছর হলেও শিশুটি কথা বলে না। চলন বলন মনে হয় প্রতিবন্ধী। যাক। ভাগ্যে যা আছে হবে। এই উদ্যোনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ঘুরতে আসা শিশুদের অবাধে সিগারেট, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের নেশা করতে দেখা গেছে। অথচ উদ্যোনটির চারপাশ জুড়ে আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক নজরদাড়ি। আরও বড় বিষয় হলো, উদ্যানের ভেতরেই সিগারেট, গাঁজা প্রকাশ্যে বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর কমলাপুর রেলস্টেশনসহ আশপাশের এলাকায় আছে তিন শতাধিক ভাসমান শিশু। যাদের প্রত্যেকেই বিভিন্ন ধরনের নেশায় আসক্ত। জড়িত হয়েছে নানা ধরনের অপরাধেও। মাদক নেয়া ও অপরাধের কথা অকপটে স্বীকারও করেছে বাদল, লিটন, সোহেল, পাপিয়াসহ নূপুর। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সূত্রমতে, ঢাকা বিভাগের মাদকাসক্ত শিশুর মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ ছেলে এবং ১৭ শতাংশ মেয়ে। গবেষণা বলছে, শিশু-কিশোররা প্রথমে সিগারেট দিয়ে নেশার জগতে প্রবেশ করে। এরপর তারা আস্তে আস্তে গাঁজা, হেরোইন, ফেনসিডিল, সিসা, ইয়াবা, প্যাথেড্রিন, ঘুমের ওষুধ, ড্যান্ডিসহ সব ধরনের মাদকে আসক্ত হয়। এর মধ্যে পথশিশুদের কাছে মাদক হিসেবে ড্যান্ডি বেশ জনপ্রিয়। ড্যান্ডি এক ধরনের আঠা, যা মূলত সলিউশন নামে পরিচিত। এতে টলুইন নামে একটি উপাদান আছে। এটি মাদক হিসেবে তালিকাভুক্ত। ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে এখন প্রকাশ্যে শিশুদের নেশার চিত্র দেখা যায়। নেশার ভয়াল ঢেউ এখন শহর ছাপিয়ে গ্রামেও দেখা মিলছে। অথচ শিশুদের মাদকাসক্ত হতে নিরাময়ের জন্য সরকারী নিরাময় কেন্দ্র আছে ৪টি। এতে সিট সংখ্যা ৫৫, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এছাড়া রাজধানীতে ব্যাঙের ছাতার মতো অনেক মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র গড়ে উঠলেও এদের অধিকাংশের নিবন্ধন নেই। তবে মাদকাসক্তের সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে সপ্তম। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডাঃ তাজুল ইসলাম বলেন, তিনটি কারণে বাংলাদেশে মাদক ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে, চাহিদার সঙ্গে পর্যাপ্ত যোগান, মানসিকভাবে বিপদগ্রস্ততা এবং কৌতুহলসহ হিরোইজম। শিশুদের দেহে মাদক কি ধরনের প্রভাব ফেলছে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান বলেন, শিশুদের ওপর মাদক সবচেয়ে বেশি ¯œায়ুর প্রভাব বিস্তার করে। এতে শিশুর স্বাভাবিক চিন্তা ক্ষমতা হ্রাস পায়, ঘুমের সমস্যা হয় ও অস্থিরতা বাড়তে পারে। তিনি বলেন, মাদক গ্রহণকারী শিশুদের ক্ষেত্রে ক্ষুধা মন্দা দেখা দিতে পারে। সব ধরনের অঙ্গ দুর্বল হয়ে নানা রকম অসুখে আক্রান্ত হতে পারে। এতে ভবিষ্যত ব্যাহত হয়। শিশু তখন মানসিক, সামাজিক সমস্যার মুখে পড়ে। তারমধ্যে তখন আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। তিনি বলেন, ভবিষ্যত আলোকিত প্রজন্ম গড়ে তুলতে চাইলে শিশুদের প্রতি অভিভাবকসহ রাষ্ট্রের আরও বেশি যতœবান হতে হবে। শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। অন্যথায় ভবিষ্যত প্রজন্ম বিপথগামী হলে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কেন শিশুরা মাদকে জাড়াচ্ছে জানতে চাইলে জাতীয় শিশু কিশোর সংগঠন কেন্দ্রীয় খেলাঘরের সাধারণ সম্পাদক প্রণয় সাহা বলেন, মাদকের ভয়াল থাবা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে বিপথগামী করে তুলছে। সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক চর্চার অভাব, অবাধ আকাশ সংস্কৃতির বিকাশ ও এর অপব্যবহার, অভিভাবকদের দায়িত্বে অবহেলা, অবাধে মাদক বিক্রির কারণে উঠতি বয়সী শিশুরা সহজেই মাদকাসক্ত হচ্ছে। অথচ শিশুদের মাদক থেকে দূরে রাখতে রাষ্ট্রের কঠোর কোন পদক্ষেপ নেই। নেই সামাজিক কোন আন্দোলন। ফলে পারিবারিক দ্বন্দ্ব থেকে শুরু করে সমাজে নানা ধরনের অপরাধ ও বিশৃঙ্খলা বেড়েই চলছে। সর্বোপরি কথা হলো, সংস্কৃতি সভ্য জাতি গঠনে সহায়ক শক্তি। যে জাতি যত সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চায় সিদ্ধ সে জাতি তত সমৃদ্ধ। কিন্তু আমাদের দেশে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চলছে। আকাশ সংস্কৃতি, মূল ধারার সংস্কৃতিকে গিলে ফেলেছে। মূল ধারার সংস্কৃতি রক্ষা করে শিশু কিশোরদের উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে জোরালো কোন পদক্ষেপ আমরা দেখি না। এখন শিশুদের হাতে হাতে মোবাইল, ট্যাব। যা দিয়ে অপসংস্কৃতি চর্চা হচ্ছে। একটি বেসরকারী মাদকাশক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের ম্যানেজার রিয়াদ রহমান বলেন, বর্তমানে যারা মাদকাসক্ত তাদের সন্তান প্রতিবন্ধী বা অস্বাভাবিকভাবে জন্ম নিচ্ছে এটা সঠিক। আমাদের কাছে এ ধরনের অনেক রোগী আছে। তারা চিকিৎসা নিচ্ছে। অনেকে গোপনে এসে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এক সময় মানুষ এসব বিষয়ে পরামর্শ করতে লজ্জা পেত। এখন অনেকে সচেতন তারা যে কোন সমস্যা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করছেন। সন্তানের অস্বাভাবিকতা নিয়েও কিভাবে সুস্থ করা যায় এ নিয়ে পরামর্শ করছেন।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান নাসরিন ওয়াদুদ বলেন, আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মাদক ঢুকে গেছে। এর জন্য কে দায়ী? দায়ী হলো এই সমাজের কিছু প্রভাবশালী মানুষ। যারা মাদক ব্যবসা করে নিজেরা কোটি কোটি টাকা বানিয়েছে। তারা সব সময় ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। আইন তাদের কিছুই করতে পারে না। আমি মনে করি এদের এখন থামানো উচিত। যত বড় ক্ষমতাধরই হোক জাতিকে, যুব সমাজকে রক্ষা করতে হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সিগারেটসহ অবাধে অন্যান্য মাদক বিক্রি বন্ধে শিশু আইন যুগোপযোগী করার দাবি জানিয়ে সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী মোঃ আবদুল মতিন বলেন, আমাদের দেশে হাত বাড়ালেই মাদক মেলে। শিশুরা সহজেই যে কোন মাদক সংগ্রহ করতে পারছে। অথচ উন্নত দেশে তা সম্ভব নয়। শিশুদের কাছে মাদক বিক্রির অপরাধে অন্যান্য দেশে জেল জরিমানা পর্যন্ত করা হয়। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ১৮ বছরের নিচে যে কোন শিশু চাইলেই মাদক কিনতে পারছে। জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে মাদক সেবন নিষিদ্ধ হলেও আইনের প্রয়োগ নেই। তাই শিশুদের মনেও ভয় নেই। তারা নির্ভয়ে মাদক গ্রহণ করছে। তিনি বলেন, শিশু আইনের অনেক দুর্বল দিক রয়েছে। এসব দুর্বলতার কারণে অনেক বিষয় অস্পষ্ট। সময় উপযোগী শিশু আইন করে তা কঠোরভাবে প্রয়োগ করলে শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
×