ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

জেলা উপজেলায় রেড জোন ও লকডাউন ঘোষণা

প্রকাশিত: ২২:৪২, ১৭ জুন ২০২০

জেলা উপজেলায় রেড জোন ও লকডাউন ঘোষণা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ কয়েকটি জেলা-উপজেলা ও থানা এলাকায় করোনা আক্রান্তের হার অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ সেসব এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে লকডাউন ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে বগুড়া, লক্ষ্মীপুর, মাদারীপুর, পিরোজপুর, সুনামগঞ্জ, পটুয়াখালী বাউফল ও কলাপাড়া এবং ফেনীর কোম্পানীগঞ্জে ১৬ থেকে ৩০ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বগুড়াসহ কোন কোন রেড জোন ঘোষিত এলাকায় সরকারের বিধিনিষেধ ঠিকমতো মানা হচ্ছে না। লক্ষ্মীপুর জেলা সদরসহ ৫ উপজেলায় ফের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। মাদারীপুরে ৪ পৌরসভা ও ২২ ইউনিয়ন রেড জোন ঘোষণার পাশাপাশি বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে লকডাউন করা হবে বলে জানা গেছে। সুনামগঞ্জে ৮ উপজেলার ১৫ এলাকা এখন লকডাউনে। পিরোজপুরের ভা-ারিয়া পৌর শহরকে রেড জোন ঘোষণা করে লকডাউন। পটুয়াখালীর বাউফল পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ডকে রেড জোন ঘোষণাসহ নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। জানা গেছে, বগুড়ায় করোনা সংক্রমণের সংখ্যা প্রতিদিনই নতুন রেকর্ড করছে। সংক্রমণ উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চললেও রেড জোন হিসেবে ঘোষিত এলাকাগুলোতে কড়াকড়ি দেখা যায়নি। যানবাহনসহ অনেক এলাকায় লোকজনের চলাচলসহ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা দেখা গেছে। ফলে শিথিল রেড জোনের বিষয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিযেছে। মানা হচ্ছে না রেড জোনের বিধিনিষেধ। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, করোনাার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সিভিল সার্জন বগুড়া সদরের ৯ এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করলে জেলা প্রশাসন রবিবার গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে রেড জোন এলাকার বিধিনিষেধ মেনে চলার আহ্বান জানায়। তবে রেড জোন ঘোষিত বেশির ভাগ এলাকাতেই জনচলাচল স্বাভাবিক লক্ষ্য করা গেছে। যানবাহন চলাচলেও তেমন নিয়ন্ত্রণ ছিল না। কয়েকটি সড়ক মুখে বাঁশ দিয়ে বেরিকেড থাকলেও ছিল শিথিলতা। এবিষয়ে জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ জানান, তিনিও বিষয়টি জেনেছেন। সংক্রমণ রোধে রেড জোন এলাকায় বিধিনিষেধ কঠোরভাবে পালনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে বলে জানান। তিনি আরও জানান, জেলায় করোনা সংক্রমণ রোধে রেড জোনের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। লক্ষ্মীপুর ॥ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় লক্ষ্মীপুরের ৫টি উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আবারও লকডাউন দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে এ লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে। এর মাঝে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, জেলা সদরের প্রাণকেন্দ্র সদর উপজেলাধীন পৌরসভার ৬, ৭, ১৫ এবং ৫নং ওয়ার্ডের আংশিকসহ ৪টি ওয়ার্ড এবং ৭টি ইউনিয়ন। সদর উপজেলাধীন ইউনিয়নগুলোর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ হামছাদী, দালাল বাজার, পাবর্তীনগর, বাঙ্গাখাঁ, কুশাখালী, মান্দারী, ও চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন। অপর ৩টি পৌরসভার মধ্যে রামগতি পৌরসসভা, রামগঞ্জ পৌরসভা ও রায়পুর পৌরসভা এবং কমলনগর উপজেলার চারটি ইউনিয়নকে রেড জোন বা অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে লকডাউন চলছে। এ চারটি ইউনিয়নের মধ্যে রয়েছে হাজিরহাট, তোরাবগঞ্জ, চরলরেন্স ও কালকিনি ইউনিয়ন। এর আগে কমলনগর উপজেলার চারটি ইউনিয়নে সোমবার থেকে লকডাউন শুরু হয়। এ ব্যাপারে প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে প্রচার চলছে। গত কয়েকদিন থেকে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হার বেড়ে যাওয়ায় এলাকাগুলোকে রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করেছে জেলা ও স্থানীয় প্রশাসন এবং জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর সদর ও রায়পুর উপজেলা তৃতীয় বার এবং অপর ৩টি উপজেলায় দ্বিতীয়বারের মতো লকডাউন চলছে। জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জন চন্দ্র পাল এবং সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুল গফ্ফার এর কথা হলে তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মাদারীপুর ॥ করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাদারীপুর জেলার ৪ পৌরসভা ও ২২ ইউনিয়নকে রেড জোন ঘোষণা ফের লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে পৌরসভায় এক জরুরী বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে লকডাউন কার্যকর হবে। দুপুরে পৌর ভবনে এক জরুরী সভার আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সরকারের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলার ৪ পৌরসভার ২০ ওয়ার্ড ও ৪ উপজেলার ২২ ইউনিয়নকে রেড জোন ঘোষণা করেন স্বাস্থ্য বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা সিভিল সার্জন ডাঃ শফিকুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে রেড জোন এলাকায় লকডাউন বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এসব এলাকায় চালু থাকবে জরুরী সেবা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে কালকিনি উপজেলার পৌরসভার ৬ ওয়ার্ড ও ৪ ইউনিয়নকে রেড জোন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে কালকিনি উপজেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার রেড জোন এলাকা চিহ্নিত করে কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কালকিনি উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মোঃ আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন। বুধবার থেকে জোন ভিত্তিক লকডাউন শুরু হচ্ছে। এদিকে শিবচরে বুধবার থেকে জোন ভিত্তিক লকডাউন শুরু হচ্ছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অনুসারে স্বাস্থ্য বিভাগ রেড জোনে পৌরসভার ৩ ওয়ার্ডসহ ৯ ইউনিয়ন ঘোষণা করেছে। সুনামগঞ্জ ॥ সুনামগঞ্জের ৮ উপজেলার ১৫ এলাকা লকডাউনে থাকবে তিন সপ্তাহ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সুনামগঞ্জের ৮টি উপজেলার ১৫টি এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ শামস উদ্দিন। মঙ্গলবার থেকে আগামী তিন সপ্তাহর জন্য এসকল এলাকাগুলোতে কঠোরভাবে রেড জোনিং কার্যক্রম শুরু এবং মানুষকে ঘরমুখী করতে কঠোরভাবে মাঠে অবস্থান করছে পুলিশ। এ সময় বিনা কারণে কেউ ঘর থেকে বের হলে তাকে আটক করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। অপরদিকে রেড জোন করা এলাকাগুলোতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ছাড়া সকল প্রকার দোকান ও গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। শুধু ওষুধের দোকানগুলো সার্বক্ষণিক খোলা রাখা যাবে। রেড জোন করা এলাকাগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জরুরী প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে তা না হলে বিনা কারণে কেউ ঘর থেকে বের হলে তাকে আটক করা হবে উল্লেখ করে এলাকায় এলাকায় মাইকিং করা হয়। অন্যদিকে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়ন, জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনাবাজার ইউনিয়ন, দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও ও নরসিংপুর ইউনিয়ন, ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়ন এবং জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নকে হলুদ জোন করা হয়েছে। পিরোজপুর ॥ হঠাৎ করে করোনায় আক্রান্ত রোগী বেড়ে যাওয়ায় ভা-ারিয়া পৌর শহরকে রেড জোন ঘোষণা করে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করেছে প্রশাসন। সোমবার একদিনে পৌর শহরে ৯ ব্যক্তির শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাস শনাক্ত হয় এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে পর পর ৩ জন মারা যাওয়ার ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা (প.প.) কর্মকর্তা ডাঃ এইচ এম জহিরুল ইসলাম স্বাস্থ্য অধিদফতদের নির্দেশনা অনুযায়ী মঙ্গলবার একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ভা-ারিয়া পৌর এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করে বলে তিনি জানান। এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার সকাল থেকে মাইকিং করে শহরের দোকানপাট বন্ধ করা হয় এবং জনসাধারণকে সতর্ক করা হয়। বাউফল, পটুয়াখালী ॥ বাউফল পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ডে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় রেড জোন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেন। আদেশে বলা হয়েছে মঙ্গলবার সকাল থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বাউফল পৌরসভার ২, ৪ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড রেড জোনের আওতায় থাকবে। এ আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আদেশটি চিঠির মাধ্যমে পৌরসভার সচিবকে অবহিত করা হয়েছে। কলাপাড়া, পটুয়াখালী ॥ করোনার প্রভাব বিস্তার রোধে কলাপাড়া পৌরসভার ছয় নম্বর ওয়ার্ডের নাইয়াপট্টিকে রেড জোনে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া এক, তিন ও সাত নম্বর ওয়ার্ডের আংশিক এলাকা ইয়েলো জোন চিহ্নিত করা হয়েছে। উপজেলা করোনা প্রতিরোধ বিষয়ক কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ চিন্ময় হাওলাদার জানান, রেড জোনের কোন মানুষ ঘর থেকে বিশেষ প্রয়োজন ব্যতিরেকে বের হওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া ইয়েলো জোনের মানুষকে সীমিতভাবে চলাচলের নির্দেশনা রয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া ঘরে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
×