
স্টাফ রিপোর্টার ॥ মোবাইল চুরির কথিত অভিযোগে ঠাঁকুরগাঁওয়ে দুই শিশু নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে জাতীয় শিশু কিশোর সংগঠন কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর। রবিবার দেশের বৃহত্তম এই শিশু সংগঠনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
গত ২২ মে মোবাইল চুরির অভিযোগ তুলে স্থানীয় ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলাম, মোতালেব আলীসহ অন্যরা মিলে সালিশে হাত-পা বেঁধে দুই শিশুকে মধ্যযুগীয় কায়দায় লাঠিপেটা করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। এই লাঠিপেটার দৃশ্য ক্যামেরাবন্দিও করা হয়। ঘটনায় ৫ জুন জেলার পীরগঞ্জ থানায় ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলাম, তার সহযোগী মোতালেব আলীসহ সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা হলে ইতোমধ্যে ছয়জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় খেলাঘরের সভাপতিমন্ডলীর চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা পান্না কায়সার ও অধ্যাপক প্রণয় সাহা বলেন, আইন অনুযায়ি ১৮ বছরের নীচে সবাই শিশু। শিশুদের উপর নির্যাতন দেশের প্রচলিত ও শিশু আইনের সুষ্পষ্ট লংঘন। তাছাড়া নির্যাতনের কারণে শিশুরা মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
ঠাকুরগাঁওয়ে শিশুদের উপর নির্যাতনের মামলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দ্রুত বিচারকাজ শেষ করে আসামীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে খেলাঘর। ফলে ভবিষ্যতে অন্যেরা শিশুদের উপর নির্যাতন করতে ভয় পাবে। পাশাপাশি শিশুরাও বেড়ে ওঠার জন্য পাবে নিরাপদ পরিবেশ।
মামলার বরাতে পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার রায় বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পীরগঞ্জ উপজেলার সেনগাঁও ইউনিয়নের দেওধা গ্রামের বাসিন্দা মোতালেব আলী তার প্রতিবেশীর স্ত্রীকে অশালীন প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। এতে রাজি ছিলেন না ওই গৃহবধূ।
এরই জের ধরে গত ২২ মে ওই গৃহবধূর ছেলে (১৩) ও তার ভাতিজাকে (১৬) মোবাইল চোর অপবাদ দেন মোতালেব আলী। ওই দিনই স্থানীয় ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলাম, মোতালেব আলীসহ অন্যরা মিলে ওই দুই শিশুকে মামলার ৭ নম্বর আসামি আব্দুল লতিফের বাড়ি নিয়ে যান।
সেখানে স্থানীয় গণ্যমান্যদের নিয়ে সালিশ হয়। তাতে ওই দুই শিশুর হাত-পা বেঁধে মাটিয়ে ফেলে লাঠিপেটা করেন ইউপি সদস্য ও তার সহযোগীরা। আর নির্যাতনের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দিও করেন তারা।
ওসি প্রদীপ কুমার রায় বলেন, মারপিটের এক পর্যায়ে ইউপি সদস্য ও তার সহযোগীরা ওই দুই শিশুর বাড়িতে গিয়ে ১৩ বছর বয়সী ওই শিশুর মাকে ভিডিও দৃশ্য দেখান এবং ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ইউপি সদস্যসহ তার সহযোগীরা ওই গৃহবধূর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন এবং গৃহবধূর বাড়ি থেকে একটি গরু নিয়ে যান।
এছাড়াও ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলামসহ তার সহযোগীরা সাদা কাগজে ওই গৃহবধূ, তার ছেলে ও ভাতিজার স্বাক্ষর নেন এবং এরপর ওই দুই শিশুকে ছেড়ে দেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।