ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বেদনাবিধুর স্মৃতিবিজড়িত বাহাদুর শাহ পার্ক নতুন রূপে

প্রকাশিত: ১১:৩৬, ১২ মার্চ ২০২০

বেদনাবিধুর স্মৃতিবিজড়িত বাহাদুর শাহ পার্ক নতুন রূপে

মামুন শেখ ॥ ঐতিহাসিক সিপাহী বিদ্রোহের বেদনাবিধুর স্মৃতি বিজড়িত বাহাদুর শাহ পার্ক অবশেষে নতুন রূপ পেল। ১৮৫৭ সালের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অকুতভয় বীর যোদ্ধাদের এই মাঠেই তদানীন্তন ইংরেজ শাসকেরা প্রকাশ্যে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। রাজধানীর পুরান ঢাকায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী বাহাদুর শাহ পার্ক নতুনভাবে সাজানো হয়েছে। এই সংস্কারের মধ্যে দিয়ে ঐতিহ্যবাহী পার্কটি ফিরে পেল তার আগেকার সেই রূপ। বুধবার দুপুর ২টায় ঢাকা দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন নবরূপে সজ্জিত বাহদুর শাহ পার্ক উদ্বোধন করেন। ডিএসসিসির উদ্যোগে সংস্কারের কাজ শেষ হওয়ায় সর্বসাধারণের জন্য পার্কটি খুলে দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহা মুহাম্মদ ইমদাদুল হক, প্রধান স্থপতি মোঃ রফিক আজম, ৪২, ৪৩ ও ৪৪ নং ওয়ার্ড সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর নাসিমা আহমেদ, ৪২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজিমুদ্দিন। এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, জল-সবুজের ঢাকা প্রকল্পের আওতায় রাজধানীতে ১২টি খেলার মাঠ ও ১৯টি পার্কের আধুনিকায়নের মধ্য দিয়ে পুরান ঢাকাকে নতুনভাবে সাজানোর ১টি প্রকল্প হাতে নিয়েছিলাম। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি খেলার মাঠ ও পার্ক উদ্বোধন করে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমার পরে যিনি দায়িত্বে আসবেন আমি আশা করব তার কর্মীবাহিনী এগুলোকে সুন্দরভাবে দেখভাল করবেন। এবং নতুন মেয়র ঢাকাকে আরও সুন্দর কিছু উপহার দিবেন। আমার আরও প্রত্যাশা, আজ এই ঢাকায় যে শিশুটি জন্মগ্রহণ করেছে, জন্মেই সে যেন একটি সুন্দর পরিবেশে বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়। রাজধানীর অনেক পার্ক এতদিন বেদখলে ছিল। এই ঢাকারই অধিবাসী আমাদের ছেলে-মেয়ে-ভাই-বোন এবং আমাদেরই মা-বোনের ঠিকমতো চলাফেরা করার, কোথাও বসে একটু নিশ্বাস নেয়ার, গল্প করার এমন খোলা জায়গা পেত না, পছন্দমতো উন্মুক্ত স্থানের খুবই অভাব ছিল। আবার অনেক খোলা জায়গা অসৎ ভূমিখোর প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছিল। অনেক জায়গায় ট্রাকস্ট্যান্ড গড়ে উঠেছিল। এসবের মধ্যে অনেক স্থানে সন্ধ্যা নেমে এলে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা- চলত। অবৈধ দখলে থাকা এই মাঠগুলো উদ্ধার করে আমরা উপরোক্ত দুরবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়েছি। এ জন্য অনেক কষ্ট, অনেক বেগ পেতে হয়েছে আমাদের। এসবের নেপথ্যে প্রভাবশালী লোকজন জড়িত ছিল বলে উচ্ছেদ করতে আদালতে আইনী লড়াই করতে হয়েছে আমাদের। কিন্তু অবশেষে সত্যের জয় হয়েছে, জনগণের জয় হয়েছে। তিনি বলেন, এই কাজে কম-বেশি ১০০ নবীন ও প্রবীণ স্থপতি অংশ নিয়েছে। জনগণ এই সমস্ত ড্রইং ডিজাইন দেখেছে সম্মতি দিয়েছে তারপর আমরা কাজ ধরেছি। কাজ করতে গিয়েও অনেক কষ্ট হয়েছে। অনেক প্রতিবন্ধকতা হয়েছে সবশেষে আমরা সফল হয়েছি এবং একে একে আপনাদের জন্য এই সমস্ত খেলার মাঠ আমরা খুলে দিচ্ছি। আপনারা মনভরে এসব জায়গা ব্যবহার করবেন। আমাদের ছোট-ছোট বাচ্চারা বিশেষ করে মাঠে এসে খেলাধুলা করছে। অনেকেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তারা হাঁটতে পারছেন। অনেকেই গল্প করতে পারছেন। ফলে জীবন-মানের কিছুটা হলেও উন্নয়ন ঘটছে, পরিবর্তন আসছে। মেয়র বলেন, শুধু একজন মানুষ সারাদিন কাজ করে বাসায় ফিরে যদি বসে থাকে তবে তার মানসিক একটা পরিবর্তন আসে। কিন্তু, সামান্য বিশ্রামের পর যদি সে একটু খোলা জায়গায় ঘুরতে যেতে না পারে, সে যদি একটু বুক ভরে নিশ্বাস নিতে না পারে, সে যদি একটু বন্ধুর সঙ্গে খোশ আড্ডায় মেতে উঠতে না পারে, যদি আরামে একটু হাঁটতে না পারে- তবে তার জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বেই। মানুষ প্রতিদিন একটু হাঁটবে, একটু খেলবে, একটু গল্প করবে, একটু চা খাবে এটা-ওটা খেয়ে জীবনকে উপভোগ করবে তার জন্যই আমাদের এই প্রয়াস। সাঈদ খোকন আরও বলেন, চেয়েছিলাম নতুন রূপে বদলে দিব পুরান ঢাকাকে। আজ এই পুরান ঢাকা নতুন রূপে সজ্জিত হয়েছে। এই পুরান ঢাকার আমরা যখন দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেছি, তখন রাস্তায় ঠিকমতো লাইট জ্বলত না অলিগলিতো দূরের কথা। আজকে দেখুন বড় রাস্তাতো বাদই দিলাম দেড় ফুট-দুফুট চওড়া অলিগলিতেও আমি এলইডি লাইটের ব্যবস্থা করেছি। পুরান ঢাকা আজ আলোয় আলোকিত হয়ে গেছে। আমরা পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছি। এই বাহাদুর শাহ পার্কে আপনারা যদি রাতের বেলায় আসেন তাহলে দেখতে পাবেন বিশ্বমানের যে কোন দেশের পার্কের তুলনায় এটি কোন অংশে কম নয়। আপনি এলেই দেখতে পাবেন চোখ ধাঁধাঁনো আলোয় ঝলমল করছে বাহাদুর শাহ পার্ক। এই পার্কটির এক সময় বেহাল দশা ছিল। সেই বেহাল দশা আজ আর নেই। আমাদের কাজের স্মৃতি এই পার্ক, খেলার মাঠ। এটা আপনাদের সম্পদ, দেখে রাখার দায়িত্বও আপনাদের। আপনারা এটাকে সুন্দরভাবে ব্যবহার করবেন যাতে বছরের পর বছর ধরে ছোট ছেলে-মেয়েরা এটা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে। আমাদের এখানে অনেকগুলো স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও বাসাবাড়ি আছে তারা যাতে এই জায়গাটি দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে পারে। যদি আমরা এটিকে দেখে শুনে না রাখি তাহলে অল্পদিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যাবে।
×