ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্থলবন্দর নির্মাণ হবে শীঘ্রই

ফেনী নদীতে মৈত্রী সেতুর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে

প্রকাশিত: ০৯:৩৪, ৫ মার্চ ২০২০

ফেনী নদীতে মৈত্রী সেতুর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফটিকছড়ি, ৪ মার্চ ॥ রামগড়, ফটিকছড়ি ও সাব্রুম সীমান্তে ফেনী নদীর ওপর দ্রুত এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতুর নির্মাণ কাজ। মূল সেতুর কাজ শেষ হলে শুরু হবে দেশের ২৩তম রামগড় স্থলবন্দর স্থাপনের কাজও। এসব কাজ সম্পূর্ণ শেষ হলে দেশের অর্থনীতিতে উন্মোচন হবে নতুন দিগন্ত। বাংলাদেশ-ভারত (রামগড়-সাব্রুম) মৈত্রী সেতু-১ এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীরা জানান, ইতোমধ্যে সেতুটির ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। স্থাপিত ১০টি পিলারের ওপর স্প্যান বসানোর কাজ শেষ পর্যায়ে। চলছে স্প্যানের ওপর রড বাঁধাই ও ঢালাইয়ের কাজ। এছাড়া নদীর দু’পাশে এ্যাপার্টমেন্টে মূল সেতুর কাজ নির্মাণাধীন। চুক্তি অনুযায়ী, এ বছরের এপ্রিলের মধ্যে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। সেতুসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের প্রথম এই মৈত্রী সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হলে রামগড়-সাব্রুম স্থলবন্দরের কাজ শুরু হবে। এতে বিভিন্ন এলাকার খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত সব শ্রেণী-পেশার মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি সর্বত্র কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে। বৈদেশিক বাণিজ্যে এগুবে দেশ, সফল কানেক্টিভিটির মাধ্যমে যুক্ত হবে সমৃদ্ধির এক নতুন অধ্যায়। এই বন্দর চালু হলে ভারতের ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। ফলে দুই দেশের ব্যবসা, বাণিজ্য ও পর্যটনে প্রসার ঘটবে। মীরসরাইয়ে দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক জোন হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজার-চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম-মীরসরাই মেরিন ড্রাইভ এখন সময়ের ব্যাপার। তাই রামগড় হয়ে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের সঙ্গে এই অঞ্চলের কানেক্টিভিটি চট্টগ্রামের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে। অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে অবশেষে এটি আলোর মুখ দেখছে। ভারতের আগ্রহ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাবে। তাছাড়া, চট্টগ্রামে ফটিকছড়ি, মীরসরাই, হাটহাজারী, রাউজান উপজেলাসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে অর্থনৈতিক, ব্যবসা, কারখানা, সার্বিক উন্নয়নে নতুন ফলক উন্মোচিত হবে। এর আগে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রামগড় সফরকালে জানান, ‘রামগড় স্থলবন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সংযোগ সড়ক (রামগড়-বারৈয়ারহাট পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার) উন্নয়নের কাজ বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে জাপানী উন্নয়ন সংস্থা-জাইকা বাস্তবায়ন করছে। এজন্য খরচ হচ্ছে ৩ হাজার কোটি টাকা। সড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হবে। যার কাজ এখন এগিয়ে চলছে। অন্যদিকে আগরতলা থেকে সাবরুম পর্যন্ত রেললাইনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। চট্টগ্রাম মহানগরের সঙ্গে হাটহাজারী ও ফটিকছড়ির সীমানা পর্যন্ত সড়ক উন্নয়নে দুটি প্রকল্পে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা বরাদ্দের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। জানা যায়, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকারী প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে রামগড়ে স্থলবন্দর স্থাপনের ঘোষণা দেয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ১৯৯৬ সালের ২৮ জুলাই স্থলপথ ও অভ্যন্তরীণ জলপথে ভারত ও মিয়ানমার থেকে আমদানি-রফতানি বা খাদ্য ছাড়করণের উদ্দেশ্যে দেশে ১শ’ ৭৬টি শুল্ক স্টেশনের তালিকা ঘোষণা করে। ওই তালিকায় ৪৮ নম্বর ক্রমিকে ছিল রামগড় স্থল শুল্কস্টেশন। প্রসঙ্গত, সরকার ঘোষিত ১শ’ ৭৬টি স্থলবন্দরের বেশকিছু ইতোমধ্যে চালু হয়ে গেছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় রামগড় স্থলবন্দর স্থাপনের কাজ দীর্ঘদিন ফাইল চাপা থাকলেও ২০১০ সালে স্থলবন্দর স্থাপনের কাজে পুনরায় গতি আসে। অবশেষে গত বছরের ১৬ জুন ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাশ ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু-১ ও রামগড় স্থলবন্দর এলাকার নির্মাণাধীন কাজের অগ্রগতি সরেজমিন পরিদর্শন করেন। ওই সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে ত্রিপুরা, মেঘালয়, আসাম, মনিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং অরুণাচলের (সেভেন সিস্টার্স) সঙ্গে ব্যবসাবাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে বাংলাদেশ-ভারত সরকার বহু আগেই রামগড়-সাবরুম স্থলবন্দর স্থাপনে উদ্যোগী হয়। আর এ বন্দর চালু হলে দু’দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে। অর্থনৈতিকভাবে এ অঞ্চল হবে সমৃদ্ধ।
×