ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

গলাচিপায় ভেঙ্গেপড়া সেতুর ওপর বাঁশের সাঁকো

প্রকাশিত: ১২:০৬, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

গলাচিপায় ভেঙ্গেপড়া সেতুর ওপর বাঁশের সাঁকো

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ গলাচিপার আমখোলা ইউনিয়নের বাঁশবুনিয়া খালের ওপর লোহার সেতুটি গত চার বছর ধরে ভেঙ্গে পড়ে আছে। স্থানীয় লোকজন ভাঙ্গা সেতুর ওপর কাঠের সরু তক্তা বিছিয়ে নিয়েছে। বানিয়েছে বাঁশের সাঁকো। এর ওপর দিয়েই চলছে লোকজনের যাতায়াত। কিন্তু এতে খাল পারাপারে বেড়েছে ঝুঁকি। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। বিশেষ করে স্কুলে যাতায়াতে শিশু শিক্ষার্থীদের জীবন হাতে নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ কেবলমাত্র খাল পারাপারে দুর্ভোগের কারণে অনেকেই শিশুদের স্কুলে পাঠাচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, আমখোলা ইউনিয়নের বাঁশবুনিয়া গ্রামের বাঁশবুনিয়া খালের ওপর প্রায় ৩০ বছর আগে ৩৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে স্টিলের এ সেতু নির্মাণ করা হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর এ সেতু নির্মাণ করে। কিন্তু নির্মাণের পর থেকে সেতুটিতে আর কোন ধরনের সংস্কার কিংবা মেরামতের ছোঁয়া লাগেনি। ফলে সময়ের পরিক্রমায় সেতু জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে চার বছর আগে সেতুটি ভেঙ্গে পড়ে। খালের মাঝের একাধিক খুঁটি ভেঙ্গে পড়ে দেবে যায় সেতু। সিমেন্টের সিঁড়ি রোদে পুড়ে, বর্ষায় ভিজে ভেঙ্গে পড়ে। দীর্ঘদিন সেতুটি এভাবে পড়ে থাকে। খাল পারাপার এক রকম বন্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে স্থানীয় লোকজন নিরুপায় হয়ে কাঠের সরু তক্তা বিছিয়ে নেয়। পরে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁশবুনিয়া গ্রামের ১৫০ নম্বর দক্ষিণ-পূর্ব বাঁশবাড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে খালের দুই পাড়ে অন্তত আরও ৪টি গ্রাম রয়েছে। পূর্ব-পশ্চিম দিকে নির্মাণ করা এ সেতুর দুই দিকের অংশের আরসিসি নির্মিত পাটাতন ভেঙ্গে খালের পানিতে পড়ে ডুবে রয়েছে। এছাড়া সেতুর উত্তর দিকের অংশ কিছুটা হেলে রয়েছে। স্থানীয়রা ভেঙ্গে থাকা সেতুর অংশে তক্তা বিছানো ছাড়াও বাঁশের সাঁকো বানিয়ে নিয়েছে। তারওপর দিয়েই চলছে পারাপার। এলাকাবাসী জানায়, সেতুর পূর্ব পাড়ে বাঁশবুনিয়া ও কালাইকিশোর গ্রাম ও পশ্চিম পাড়ে ছৈলাবুনিয়া ও সিঁড়িসুহরী। এই চার গ্রামের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এ সেতু। এছাড়া পার্শ¦বর্তী বরগুনার আমতলী উপজেলার গেরাখালী গ্রামের মানুষও এ সেতু ব্যবহার করে। সেতু ভেঙ্গে পড়ায়, শুধু স্থানীয় বাসিন্দারাই নয়, শিক্ষার্থীরাও দুর্ভোগে পড়েছে। শিশু শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করছে। সেতুর পশ্চিম পাড়ের বাসিন্দা সাইদুর রহমান জানান, তার ছেলে বাঁশবুনিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ছে। প্রতিদিনই ছেলের জন্য চিন্তায় থাকতে হয়। কারণ ঝুঁকিপূর্ণ সেতু পার হয়ে স্কুলে যেতে হয়। দক্ষিণ-পূর্ব বাঁশবাড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা খালেদা ইয়ামিন জুলিয়া জানান, তার বিদ্যালয়ে ১৬০ শিশু শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬০ জনই ঝুঁকিপূর্ণ সেতু পেরিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করছে। ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর কারণে খালের অপর পাড়ের শিশুদের উপস্থিতি কমে যাচ্ছে। কাছাকাছি স্কুল থাকলেও অনেকে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর কারণে ছেলেমেয়েদের অন্য স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হয়েছে। অভিভাবক আবদুল খালেক বলেন, জরাজীর্ণ এ সেতুটি খালে ভেঙ্গে পড়ায় দুই পাড়ের মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা স্থানীয়রা সেতুর ভাঙ্গা অংশে বাঁশ ফেলে সাঁকো বানিয়ে নিয়েছি। এভাবে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হলেও আমাদের তা নিয়েই চলতে হচ্ছে। এ বিষয়ে আমখোলা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মনির বলেন, আসলেই সেতুটি জনগুরুত্বপূর্ণ। অন্তত চার-পাঁচ গ্রামের মানুষ এখন দুর্ভোগে পড়েছে। নতুন সেতু নির্মাণের জন্য এলজিইডির সঙ্গে যোগাযোগ করে অবহিত করা হয়েছে। এলজিইডির গলাচিপা উপজেলা প্রকৌশলী আতিকুর রহমান তালুকদার জানান, ৩০ বছর আগে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। সেতুটি পুরানো ও নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। ওই স্থানে নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে। ঠাকুরগাঁওয়ে সুকানি সেতু নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও থেকে জানান, জেলার সীমান্তবর্তী হরিপুর উপজেলার আমগাঁও ইউনিয়নের সুকানি ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় মারাত্মক দুর্ঘটনার আশঙ্কার মধ্য দিয়ে লোকজন চলাচল করছে। ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়লে ওই এলাকার ১০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ দুর্ভোগে পড়বেন। জানা যায়, আবাদি জমিতে সেচ সুবিধার লক্ষ্যে ৩২ বছর আগে হরিপুরের আমগাঁও ও বকুয়া ইউনিয়নের মাঝে সুকানি গ্রামের মধ্যে যমুনা খাল খনন খনন করা হয় এবং ওইসময় লোকজনের যাতায়াতের সুবিধার্থে সে খালের ওপর আরডিআরএস বাংলাদেশ নামে একটি বেসরকারী সংস্থা সুকানি ব্রিজটি নির্মাণ করে দেয়। সম্প্রতি ব্রিজের নিচের মাটি সরে গিয়ে ব্রিজের একাংশ দেবে গেছে। এরফলে যে কোন সময় ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী আহসান হাবীব জানান, ইটভাটার লোকজন ব্রিজের তলার মাটি কেটে নেয়ায় ব্রিজটি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। ব্রিজটি নির্মাণের সময় ঠিকাদারকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল ব্রিজের উভয় পার্শ্বে ২০ মিটার মাটি রেখে খাল খনন কাজ করতে কিন্তু নিদের্শনা তোয়াক্কা না করায় এবং ব্রিজের পাশে মাটি খনন করায় ব্রিজটির এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
×