ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

দুই সিটির আজ মনোনয়নপত্র বাছাই

ভোটের হিসাব এখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ঘিরেই

প্রকাশিত: ১০:৫০, ২ জানুয়ারি ২০২০

ভোটের হিসাব এখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ঘিরেই

শাহীন রহমান ॥ মনোনয়নপত্র জমা শেষে এখন ভোটের হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের ঘিরেই। মেয়র পদে দুই দলের কোন বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোকে বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না। এর বাইরে অন্য দলের যারা মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তারা কোন আলোচিত প্রার্থীও নয়। এদিকে প্রার্থীদের চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামার আগে আজ মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে। মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হলেই নির্বাচনের ক্ষেত্রে আর কোন বাধা থাকছে না। দুই সিটিতে সংসদের বিরোধী জাতীয় পার্টির প্রার্থী থাকলেও ভোটের মাঠের তাদের প্রভাব কম বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটার। মঙ্গলবার শেষ দিনে দুই সিটিতে মেয়র পদে ১৪ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়নপত্র জমা শেষে ভোটে হিসাব-নিকাশ এখন ঢাকা উত্তরের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোঃ আতিকুল ইসলামের সঙ্গে বিএনপি প্রার্থী তাবিথ এম আউয়াল এবং ঢাকা দক্ষিণের ক্ষেত্রে ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে বিএনপি প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনের মধ্যে। তারাই মূলত নৌকা ও ধানের শীষের কা-ারি এখন। স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার আইন পাসের পর এবারই প্রথম ঢাকার দুই সিটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দলীয় ভিত্তিতে। এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদের উপনির্বাচন সর্বপ্রথম দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী কোন প্রার্থী না থাকায় মোঃ আতিকুল ইসলাম অনেকটা একতরফাভাবে মেয়র নির্বাচিত হন। এই প্রথম দলীয় ভিত্তিতে হওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা এবং বিএনপি প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ঢাকা উত্তরে মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম এবং তাবিথ এম আউয়ালের একবার করে নির্বাচনে অভিজ্ঞা থাকলেও দক্ষিণে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয় দলের প্রার্থী ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এবং ইশরাক হোসেন এবাই প্রথম নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। অপরদিকে এই সিটি জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক গত বারের নির্বাচনেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিলেন। অপরদিকে ঢাকা উত্তরের জাতীয় পার্টির জিএম কামরুল ইসলাম এবার প্রথম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি কয়েকদিন পূর্বে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। এছাড়া ঢাকা দুই সিটিতে বাকি ১০ জন মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিলেও তারা কোন আলোচনায় নেই। আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচনে ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে মোট ৭টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম ও বিএনপির তাবিথ এম আউয়াল ছাড়াও পিডিপির শাহীন খান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ফজলে বারী মাসউদ, জাতীয় পার্টির জিএম কামরুল ইসলাম, সিপিবির সাজেদুল হক ও এনপিপির আনিসুর রহমান দেয়ান। অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতেও মেয়র পদে ৭ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, বিএনপির প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন ছাড়াও রয়েছেন জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, ইসলামী আন্দোলনের মোঃ আবদুর রহমান, এনপিপির বাহরানে সুলতান বাহার, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোঃ আকতার উজ্জামান ওরফে আয়াাতুল্লা ও গণফ্রন্টের আব্দুস সামাদ সুজন। তফসিল অনুযায়ী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর জমা দেয়া মনোনয়নপত্র আজ বাছাই করা হবে। বাছাইয়ে যাদের মনোনয়নপত্র বৈধ বলে বিবেচিত হবে তাদের নির্বাচনের জন্য আর কোন বাধা থাকছে না। তবে কোন ক্ষেত্রে কারো মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করা হলে তিনি নির্বাচন কমিশনের আপীল বোর্ডে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপীল করতে পারবেন। আপীল বোর্ডে মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করা হলে তিনি আদালতের আশ্রয় নিতে পারবেন। তবে আদালত থেকে কোন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করা হলে তিনি আর নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এদিকে কাউন্সিলের পদের দুই সিটিতে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোতে থেকে একক প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে। তবে মেয়র পদে কোন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও জানা গেছে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে আইন অনুযায়ী কাউন্সিলর প্রার্থীরা কোন দলের প্রার্থী বা দলীয় প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন না। তা নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে ইসির নির্ধারিত প্রতীকে অংশ নেবেন। দুই সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে শেষ দিনে মেয়র পদে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের ৭ জন করে মোট ১৪ প্রার্থী ছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের জন্য ৪৫৪ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৯৯ প্রার্থী। অপরদিকে ঢাকা উত্তর সিটিতে কাউন্সিলর পদে ৩৭৪ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৮৯ প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আজ এই মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে। দুই সিটিতে নির্বাচনের জন্য মোট প্রার্থী সংখ্যা ১ হাজার ৩০ জন। এর আগেই প্রায় ২ হাজারের বেশি প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও শেষ পর্যন্ত প্রায় অর্ধেক প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ইসির হিসাব অনুযায়ী দুই সিটির তিন পদে দুই সিটিতে মনোনয়নপত্র তোলা হয়েছিল ২ হাজার ২৬০টি। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই আজ ২ জানুয়ারি, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৯ জানুয়ারি, প্রতীক বরাদ্দ হবে ১০ জানুয়ারি। আর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৩০ জানুয়ারি। বাছাইয়ে যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হবে তারা রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপীল কর্তৃপক্ষের কাছে আপীল করতে পারবেন ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। আপীল কর্তৃপক্ষ হিসেবে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারকে নিয়োগ করেছে নির্বাচন কমিশন। ঢাকার উত্তর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদসহ ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ড এবং ১৮টি সংরক্ষিত আসনের ভোটগ্রহণ করা হবে। উত্তর সিটিতে মোট ভোটার রয়েছেন ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১। এই সিটিতে ভোটগ্রহণের জন্য সম্ভাব্য কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৩৪৯টি। ভোটগ্রহণের বুথ সংখ্যা ৭ হাজার ৫১৬। অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে মেয়র পদসহ ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ড, ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণ করা হবে। এই সিটিতে মোট ভোটারের সংখ্যা রয়েছে ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮ জন। সম্ভাব্য ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ১২৪। বুথের সংখ্যা ৫ হাজার ৯৯৮। সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেয়া হবে। উল্লেখ্য, বিভক্তির পর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে একসঙ্গে ভোট হয়েছিল ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল। নির্দলীয় ওই নির্বাচনে ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আনিসুল হক এবং ঢাকা দক্ষিণেও ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত সাঈদ খোকন মেয়র নির্বাচিত হন। আনিসুল হকের মৃত্যুর পর বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের বর্জনের মধ্যে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম মেয়র নির্বাচিত হন। আইন অনুযায়ী ৫ বছর মেয়াদের শেষ ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন পরিচালনা করা বিধান রয়েছে।
×