ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

আমরা পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার চেষ্টা করছি ॥ কৃষিমন্ত্রী

পেঁয়াজ নিয়ে এখন থেকেই ভবিষ্যত প্রস্তুতি নিতে হবে

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ১৯ নভেম্বর ২০১৯

পেঁয়াজ নিয়ে এখন থেকেই ভবিষ্যত প্রস্তুতি নিতে হবে

ওয়াজেদ হীরা ॥ পেঁয়াজের ঝাঁজে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় যখন নাভিশ্বাস তখন আশার আলো দেখা যাচ্ছে। আমদানি করা পেঁয়াজ আর নতুন পেঁয়াজ বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে ভূমিকা রাখবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টরা সবাই বলছেন দ্রুতই স্বাভাবিক হবে পেঁয়াজের দাম। ইতোমধ্যেই বাজারে উঠছে নতুন পেঁয়াজ। বিদেশের পেঁয়াজও আসছে, রয়েছে আসার পথে। সব মিলিয়ে সঙ্কটের সুরাহা হবে, শুধু সময়ের ব্যাপার। তবে পেঁয়াজ নিয়ে এবারের তিক্ত অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী দিনে আগাম প্রস্তুতি রাখার কথাও বলছেন কৃষি সংশ্লিষ্টসহ অন্যরাও। এখনই ভবিষ্যত প্রস্তুতি নিয়ে ভাবতে হবে, যাতে আর এমন পরিস্থিতি না হয়। ভোক্তাদের ওপরও অতিরিক্ত চাপ না পড়ে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের ওপর পেঁয়াজ আমদানি বেশিরভাগ নির্ভরশীল। তবে ভারত থেকে আমদানি বন্ধ হওয়ার পরই দেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠে। ২০ টাকা কেজির পেঁয়াজ দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেটি দুইশ’ উঠে যায়। যদিও ইতোমধ্যেই গত দুদিন ধরে পাইকারি বাজারে আগের দামের চেয়ে এখন অনেকটাই কমেছে। তবে খুচরা বাজারে প্রভাব একটু কম। বিদেশ থেকে আসা পেঁয়াজের চালান দেশের পথে রয়েছে। সেই পেঁয়াজ আসার পর দাম কতটা নি¤œমুখী হবে তাই এখন দেখার বিষয়। এদিকে, আজ মঙ্গলবার মিসর থেকে কার্গো বিমানযোগে আমদানিকৃত পেঁয়াজের প্রথম চালান ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্য আমদানিকারকদের আনা পেঁয়াজ কার্গো বিমানযোগে ঢাকায় পৌঁছাবে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আর কৃষি মন্ত্রণালয় মনে করছে ভবিষ্যতে এই ধরনের সঙ্কট এড়াতে এখন থেকেই ভাবতে হবে। পেঁয়াজেও যাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া যায় সে পথেই এগোতে হবে। এ বিষয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের যৌথ সভায় ভবিষ্যত করণীয়ও ঠিক করা হবে বলে জানা গেছে। কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের ভবিষ্যত প্রস্তুতি রাখতে হবে। কৃষকের ন্যায্য দামও দিতে হবে। আমরা এবার চিন্তা ভাবনা করেছি, মূল সিজনে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখব। তবে আমরা চিন্তা করছি এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। যাতে আমাদের চাষীরা সঠিক মূল্য পায়। ইতোমধ্যে আমরা এটা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের এখন নতুন পেঁয়াজ যেটা বাজারে আসছে তা দাম কিছুটা কমিয়ে দেবে। মূল পেঁয়াজটা আসে আরও পরে। তবে সে সময় আমদানি পেঁয়াজের কারণে আমাদের কৃষকরা দামও পায়না। পরের বার পেঁয়াজ করতে গেলে আগ্রহ হারায় চাষী। কৃষকরা মূল্য পেলে পরের বছর আরও বেশি আবাদ হবে। পেঁয়াজেও আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগ পেঁয়াজ দেশে উৎপাদন হয় জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, গতবছরও পেঁয়াজ আমাদের ভাল হয়েছিল। কিন্তু আগাম বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আমাদের কৃষকরা পেঁয়াজ ঘরে তুলতে পারেননি। বিদেশ থেকে আমদানি করে আমরা এটা মেটাতে পারতাম। কিন্তু ভারত হঠাৎ করে বন্ধ করে দেবে সেটা চিন্তা করিনি। কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাক বলেন, আমরা পেঁয়াজে কৃষকদের প্রণোদনা দিচ্ছি। বীজ দিচ্ছি, তাদের সহযোগিতা করব যেন উৎপাদন বাড়ে। আমরা পেঁয়াজেও স্বয়ংসর্ম্পূণ হওয়ার চেষ্টা করছি। কমতে শুরু করেছে রবিবারও পাইকারি বাজারে ২শ’ টাকার উপরে কেজিপ্রতি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে, যা সোমবার ছিল কম। রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে দাম কিছুটা কমেছে। ক্রেতাদের নাগালে আসবে কিছুদিনের মধ্যেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে খুচরা বাজারে এখনও ২০০ টাকার কাছাকাছি বা কোথাও কোথাও এর বেশি দামেও বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চড়া দামের কারণে ঘরে ঘরে এখন পেঁয়াজের ব্যবহার কমে গেছে। এতে বাজারে ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম। পেঁয়াজের সরবরাহ আসার খবরে এবং বিভিন্ন বাজারে ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযানে পেঁয়াজের ঝাঁজ কমতে শুরু করেছে। গত শুক্রবার ও শনিবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে ২৫০ টাকার আশপাশে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হয়। পুরান ঢাকার পাইকারিবাজার শ্যামবাজারেও পেঁয়াজের দাম কমেছে। কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকা দরে। মিয়ানমারের ভাল মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৭০ টাকা দরে। বিমানে পেঁয়াজ আসছে আজ মিসর, তুরস্ক ও চীন থেকে কেনা পেঁয়াজের প্রথম চালান কার্গো বিমানে করে আজ মঙ্গলবার দেশে এসে পৌঁছবে। আর এই পেঁয়াজ দেশের বাজারে পৌঁছালে দাম কমে আসবে বলে আশ্বস্ত করেছেন বাণিজ্য সচিব ড. মোহাম্মদ জাফর উদ্দীন। সোমবার সচিবালয়ে সচিব বলেন, এলসির মাধ্যমে সমুদ্রপথে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেড় মাসের মতো সময় লাগে। বর্তমানে উল্লেখযোগ্য পেঁয়াজের চালান সমুদ্রপথে দেশের উদ্দেশ্যে রয়েছে। তিনি বলেন, পেঁয়াজের রফতানি মূল্য চারগুণ বাড়িয়েছে মিয়ানমার। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপৎকালীন সমস্যা নিরসনে দ্রুত কার্গো বিমানে করে মিসর, তুরস্ক ও চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ অনুযায়ী এস আলম গ্রুপ মঙ্গলবার প্রথম চালান নিয়ে আসছে। পাশাপাশি এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় দেশী নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে বলে উল্লেখ করেন বাণিজ্য সচিব। পেঁয়াজের বাজার মনিটরিং করতে একাধিক টিম গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে বাণিজ্য সচিব জানান, এ পর্যন্ত আড়াই হাজার অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। উৎপাদনের গরমিল সরকারী দুটি প্রতিষ্ঠানের হিসাবে দুরকম তথ্য রয়েছে পেঁয়াজ উৎপাদন নিয়ে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) হিসাবে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন, অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, পেঁয়াজের উৎপাদন ১৮ লাখ ৩ হাজার টন। দুই সংস্থার হিসেবের ম্যারপ্যাঁচে তথ্যে গরমিল ৫ লাখ টনের বেশি। দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের পরিসংখ্যান তৈরি করে বিবিএস ও ডিএই। বিবিএসের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, তাঁরা জেলায় জেলায় নিজেদের কার্যালয়ের মাধ্যমে উৎপাদনের তথ্য সংগ্রহ করেন। একই পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করে ডিএই। ডিএই যেহেতু উৎপাদন বাড়ানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত, তাই তারা উৎপাদন বাড়িয়েও দেখাতে পারে। অন্যদিকে ডিএই কর্মকর্তারা মনে করেন, বিবিএসের চেয়ে তাঁদের জনবল অনেক বেশি। বিবিএসের হিসেবেই ভুল হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এদিকে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ও উৎপাদন নিয়েও রয়েছে বিভ্রান্তিকর তথ্য। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন দেশে ২৪ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা আর কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন ৩৩ লাখ টন। তবে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ টনের মতো পেঁয়াজ আমদানি করতে হয় সেটি বলছেন বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় কর্মকর্তারা। কৃষি সম্প্রসারণের সরেজমিন উইং মাঠ পর্যায়ের সব ধরনের ফসলের চাহিদা ও উৎপাদন হিসাব করে থাকে। সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক চ-ীদাস কু-ু জনকণ্ঠকে বলেন, দেশে ২ লাখ ১১ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়। এর মধ্যে গত অর্থবছরে উৎপাদন ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন। এর মধ্যে সংরক্ষণকালীন ক্ষতি আছে জানান তিনি। দেশে মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, পাবনা, রাজশাহী এলাকায় পেঁয়াজ বেশি উৎপাদন হয় বলেও জানান তিনি। বাঙালী অধিকাংশ খাবারে পেঁয়াজের ব্যবহার করে থাকে সে হিসাবে বছরে উৎপাদনের বাইরে ১০ লাখ টন আমদানি করতে হয়। কৃষি সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের সঙ্গে বিবিএসের কিছু গরমিল হয় এটা সত্য। তবে আমরা বলেছি এটা সমন্বয়টা যেন আরও ভাল হয়। আর দুটোই সরকারী প্রতিষ্ঠান হলেও আমরা বিবিএসটাকে অনুসরণ করি। তবে আমাদের হিসাবটাও সঠিক কেননা, আমাদের কতটুকু জমিতে কি উৎপাদন হচ্ছে সেটির ম্যানুয়াল হিসাব করা হয়। ভবিষ্যতে আশা করছি হিসেবের ফারাক থাকবে না। এদিকে চলতি সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জাতীয় সংসদ অধিবেশনে জানান, দেশে বর্তমানে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৪ লাখ টন। গত বছর পেঁয়াজ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৩ দশমিক ৩০ লাখ টন। তবে এর মধ্যে শতকরা ৩০ ভাগ সংরক্ষণকালীন ক্ষতি বাদ দিলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১৬ দশমিক ৩১ লাখ টন। টিপু মুনশি বলেন, উৎপাদিত পেঁয়াজের চাহিদা মেটানের পক্ষে যথেষ্ট না হওয়ায় বিদেশ থেকে, বিশেষ করে পাশের দেশ ভারত থেকে প্রতিবছর নির্দিষ্ট পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করতে হচ্ছে। সাম্প্রতিককালে ভারতের মহারাষ্ট্রে বন্যার পরিপ্রেক্ষিতে পেঁয়াজের ফলন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের বাজার দর বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের স্থানীয় বাজারে অস্বাভাবিক হারে পেঁয়াজের বাজার প্রেক্ষাপটে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত পেঁয়াজের রফতানি সম্পূর্ণ বন্ধ রেখেছে। এর ফলে বাংলাদেশের বাজার উর্ধগতি হওয়া শুরু করে। মন্ত্রী আরও জানান, ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে প্রতিদিন চারটি করে মোট ২৮টি টিম ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন বাজারে মূল্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত রয়েছে। মন্ত্রী বলেন, বাজারে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় টিসিভি ডিলারদের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে ঢাকা মহানগরীর ৩৫টি পয়েন্টে ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। আশার আলো নতুন পেঁয়াজ পেঁয়াজের জন্য বিখ্যাত এলাকা মানিকগঞ্জ। সকাল সকাল জমে উঠে জেলার স্থানীয় বাজার। গত কয়েকদিনে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার কয়েকটি বাজারের তথ্যে জানা গেছে নতুন পেঁয়াজে এখন সয়লাব হচ্ছে বাজার। ক্রমেই নতুন পেঁয়াজ বাড়ছে। স্থানীয় হাট থেকে সেসব আসছে রাজধানীতেও। এতে করে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। জয়ম-প বাজারের কতিপয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে নতুন পেঁয়াজ পাওয়া গেলেও এখন ক্রমেই তা বাড়ছে। দাম বেশি পাওয়ায় চাষীরা ক্ষেত থেকে অপরিপক্ব পেঁয়াজ তুলেই বাজারে পাঠাচ্ছেন। স্থানীয় বাজারে পাতাসহ এই পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাওরানবাজারে এই পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৮০-১০০ টাকা কেজি। জয়ম-প ইউনিয়নের কৃষক কেরামত বলেন, আগাম পেঁয়াজ চাষে এবছর বেশ লাভবান তিনি। বাজারে ভাল দাম পাওয়ায় কিছুদিন আগেই উঠিয়েছেন। মানিকগঞ্জ বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা তাদের আগাম পেঁয়াজ উঠিয়ে বিক্রি করছেন। একটু বেশি দাম পেয়ে খুশি তারা। রহিজ উদ্দিন, জুলহাস, সবুর মিয়াসহ আরো কতিপয় কৃষক বলেন, আশ্বিন মাস থেকে তারা পেঁয়াজ আবাদ শুরু করেছেন। আগাম এই পেঁয়াজ মুড়ি জাতের। দেখতে মুড়ির মতো। ছোট ছোট দানা হয়। তবে ঝাঁঝ অনেক। শুকনো পেঁয়াজের চেয়ে স্বাদেও ভাল। এ কারণেই অনেক চাহিদা বাজারে। কৃষকরা আরও বলেন, গত বছর যেখানে এই পেঁয়াজ ১২-১৫ টাকা কেজি বিক্রি করতে হয়েছে সেটি এবার স্থানীয় বাজারে ৪০-৫০ টাকার মধ্যে। গতবার কম দাম পেয়ে অনেকে চাষও করেনি। ফলে যারা চাষ করেছে তারা বেশ লাভবান। জেলার একাধিক কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, রাজধানী নিকটে হওয়ার কারণে সবজিসহ প্রায় সবই ঢাকামুখী। এখানে এবার মুড়ি জাতের পেঁয়াজ চাষ করে কৃষকরা বেশ লাভবান হয়েছেন। স্থানীয় বাজারগুলোতেও অনেকটা স্বস্তি ফিরেছে। অপরিপক্ব পেঁয়াজ তুলে বাজারে পাঠানোয় পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্র পূরণে কোন ব্যাঘাত ঘটবে কি-না? এমন প্রশ্নে সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক জানান, এটি আসলে মুড়িকাটা পেঁয়াজের জন্য উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কোন ব্যাঘাত ঘটবে না। কৃষি সচিব নাসিরুজ্জামানও বলেন, আমাদের মূল পেঁয়াজ যেটি সংরক্ষণ হয় সেটি উঠবে আরও পরে। তাই টোটাল উৎপাদনে কোনো সমস্যা হবে না। দিনাজপুরের হিলিতে বাজারে উঠতে শুরু করেছে দেশী জাতের পাতা পেয়াঁজ। সরবরাহ বাড়ায় পেঁয়াজের দামও কিছুটা কমতে শুরু করেছে স্থানীয় হাটবাজারে। শ্যামবাজারের কমিশন এজেন্টরা জানান, অনেক আমদানিকারক ভারত ছাড়াও অন্য জায়গা থেকে পেঁয়াজ আমদানি করার জন্য এলসি খুলেছে। এলসি খোলা, ওসব দেশে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা, তারপর জাহাজে করে আনা এসব তো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কাওরানবাজারের আড়তদার কাজী মোঃ মোস্তফা বলেন, কম দামে পেঁয়াজ আমদানি করে সিন্ডিকেট করে মানুষের বিরুদ্ধে হতাশা সৃষ্টি করে। যারা আমদানি করছে তারা ১০ জন আমদানি করলে দুজন বাজারে ছাড়ে। বাকি আটজনেই বেশি লাভের আশায় পেঁয়াজ গোডাউনে মুজদ করে রাখে। সরকারকে এ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানান তিনি। অন্যান্য আড়তদার বলেন, আমাদের পণ্য বেশি দামে কিনলে বিক্রিও হয় বেশি দামে। তবে নতুন পেঁয়াজের প্রভাব খুব দ্রুতই পড়বে আশা করেন আড়তদাররা। খুচরা বাজারে ক্রেতাবিক্রেতাদের চিত্র বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণে বিক্রিতেও কিছুটা ভাটা পড়েছে। বিশেষ করে একেবারে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কম কম পেঁয়াজ এনে বিক্রির চেষ্টা করছেন। বেশি পেঁয়াজ আনলে যদি বিক্রি না হয় সেই ভয়েই তাতে কম আনছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সবুর উদ্দিন বলেন, পেঁয়াজের দাম শুনে মানুষ গালি দেয়, মুখ কালো করে চলে যায়। মনে মনে অভিশাপও দেয় হয়তো। বেচা বাদ দিছি। মানুষও খুব একটা কিনতে চায় না। আর নি¤œবিত্ত, মধ্যবিত্ত ক্রেতারা খুব হিসেব করে পেঁয়াজ কিনছেন। কেউ কেউ দাম শুনেই হাঁটা দিচ্ছেন সামনের দোকানে, যদি একটু কম পাওয়া যায় সে আশায়। আবার অনেকেই দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকছেন টিসিবির দেয়া ট্রাকের সামনে। একাধিক ক্রেতা জানান, পেঁয়াজ আসছে শুনতেছি। নতুন পেঁয়াজও কিছু কিছু উঠেছে। তাই কয়েকদিন একটু কম কম পেঁয়াজ খাচ্ছি। ক্রেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে এক কথায় বলে দেন ‘পেঁয়াজ না খেলে কি এমন হবে’, ‘কয়েক দিন পেঁয়াজ খাবো না’ ইত্যাদি। এছাড়াও পাইকারি বাজারে কিছুটা কমলেও খুচরায় প্রভাব পড়ছে কম। এখনও টিসিবির ট্রাকের সামনে ভিড় লেগে থাকছে। আগামীর সঙ্কট এড়াতে হবে অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করা পেঁয়াজের ঝাঁজ যেন ভবিষ্যতে যাতে আর না বাড়ে সেজন্য এখন থেকেই ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছেন অনেকেই। একাধিক কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন কৃষকরা যেন ভাল দাম পায় আর উৎপাদন বাড়ানোয় আগ্রহ দেখায় সে পথে যেতে হবে। আবার আমদানি পণ্যের জন্য শুধু ভারতের ওপর নির্ভরশীল না হওয়ার পরামর্শ দেন তারা। কৃষিমন্ত্রীর মতো কৃষি সচিবও মনে করছেন পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। কৃষি সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান বলেন, পেঁয়াজ উৎপাদনে আমরা কৃষকদের প্রণোদনা দেব। তবে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিটিং করেছি আরো করবো। দেশী পেঁয়াজটা যখন বাজারে আসে একই সময় ভারতের পেঁয়াজটাও আসে। তবে আমাদের পেঁয়াজের মানটা ভাল হওয়ায় ক্রেতাদের চাহিদা থাকে দেশী পেঁয়াজের প্রতি। তবে ভারতীয় পেঁয়াজের সঙ্গে দামের পার্থক্যটা একেবারেই কম। আমদানি পেঁয়াজের কারণে সেটি আরও কমে যায়। সে সময় আমরা চাই কৃষক যেন দাম পায়। হয় আমদানি বন্ধ থাকুক নয়তো শুল্ক বেশি করা হোক। যাতে এবার মূল্য পেলে পরের বছরে কৃষক আগ্রহ নিয়ে চাষ করে। সরকারের নানামুখী উদ্যোগ আর আমদানি করা পেঁয়াজ ও নতুন পেঁয়াজের চিত্র বলে দিচ্ছে দ্রুতই বাজারের চিত্র পাল্টাবে। তবে কতটা নি¤œমুখী হয় তার অপেক্ষায় ভোক্তারা।
×