ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;কায়সারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি আগামীকাল

আজহারুলের মৃত্যুদ-ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপির অপেক্ষায় আসামিপক্ষ

প্রকাশিত: ১১:২৮, ১৭ নভেম্বর ২০১৯

আজহারুলের মৃত্যুদ-ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপির অপেক্ষায় আসামিপক্ষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপির জন্য অপেক্ষায় আসামি পক্ষ। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর আজহারুল ইসলামের সামনে দুটি পথ খোলা রয়েছে। প্রথমত, এ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করা, দ্বিতীয়ত, রিভিউ যদি খারিজ হয় সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন। গত ৩১ অক্টোবর আপীল বিভাগ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ- বহাল রাখে। ওদিন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহামুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপীল বেঞ্চ রায়ের সংক্ষিপ্তসার জানিয়ে দেয়। এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের আপীল শুনানি শেষ পর্যায়ে। আসামিপক্ষের শুনানির পর আগামীকাল ১৮ নবেম্বর এ আপীলের ওপর রাষ্ট্রপক্ষের শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া দ-ের বিরুদ্ধে আরও ৩০ মামলা আপীল শুনানি নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদ- আপীল বিভাগ বহাল রেখেছে। এখন পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণার অপেক্ষা! পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হবার পর এটিএম আজহারুল ইসলাম ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ করতে পারবেন। রিভ্উি যদি খারিজ হয়ে যায় তাহলে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন। রাষ্ট্রপতি আবেদন নাকচ করলে তাকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হবে। দেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম জানিয়েছেন, আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদ- বহাল রয়েছে। এখন রায় প্রকাশের অপেক্ষা। তবে, এটাও দেখার বিষয় যে, রায় প্রকাশের পর আসামিপক্ষ রায়ের রিভিউ আবেদন করবেন কিনা? রিভিউয়ের পর তা নিষ্পত্তি এবং রিভিউ নিষ্পত্তির পর পরোয়ানা জারি করবে ট্রাইব্যুনাল। পরে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিধান রয়েছে। এর পরপরই দ- কার্যকর হবে। শেষ পর্যন্ত প্রাণভিক্ষার আবেদনও যদি খারিজ হয়, তাহলে সরকার যে কোনদিন দ- কার্যকর করবে। কারাবিধির নিয়ম হলো, ২১ থেকে ২৭ দিনের মধ্যে মৃত্যুদ- কার্যকর করতে হয়। তবে মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনালের ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য নয়, এখানে সরকার যখন খুশি দ- কার্যকর করতে পারে। কায়সারের আপীল শুনানি কাল একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জাতীয় পার্টির নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের আপীল শুনানি শেষ পর্যায়ে। আসামিপক্ষের শুনানির পর আগামীকাল (১৮ নবেম্বর) আপীলের ওপর রাষ্ট্রপক্ষের শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। এদিকে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, শীঘ্রই মামলাটির শুনানি শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করছি। সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মামলা থেকে জানা যায়, ’১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধকালে নিজের নামে ‘কায়সার বাহিনী’ গঠন করে যুদ্ধাপরাধ সংঘটনকারী হবিগঞ্জের রাজাকার কমান্ডার ও শান্তি কমিটির সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে সর্বোচ্চ সাজাসহ ২২ বছরের কারাদ-াদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। মুক্তিযুদ্ধকালে ১৫২ জনকে হত্যা, দুই নারীকে ধর্ষণ, ৫ জনকে আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়, দুই শতাধিক ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন ও ষড়যন্ত্রের ১৬ মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে চৌদ্দটিই প্রমাণিত। যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে প্রথমবারের মতো অন্য অপরাধের পাশাপাশি ধর্ষণের দায়ে ফাঁসির দ-াদেশ দেয়া হয় কায়সারকে। সাঁওতাল নারী হীরামনি ও অপর নারী মাজেদাকে ধর্ষণের দুটি অপরাধও প্রমাণিত। ওই দুই নারী ও ধর্ষণের ফলে বীরাঙ্গনা মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়া যুদ্ধশিশু শামসুন্নাহার প্রথমবারের মতো ট্রাইব্যুনালে এসে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্য দেয়ার সে সময় যুদ্ধশিশু শামসুন্নাহারকে সাহসিকতার জন্য এবং সব নির্যাতিত নারী ও বীরাঙ্গনাকে স্যালুট জানায় ট্রাইব্যুনাল। ’১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ফাঁসির সাজা বাতিল ও বেকসুর খালাসের আর্জি জানিয়ে আপীল করেন কায়সার। ট্রাইব্যুনালের রায় বাতিলের পক্ষে মোট ৫৬ যুক্তি দেখান তিনি। আপীল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আরও ৩০ মামলা এ পর্যন্ত আপীল বিভাগে আটটি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর আগে আপীল বিভাগে আর সাত মামলা নিষ্পত্তি হয়। এই সাত মামলার মধ্যে ৬ জনের মৃত্যুদ- বহাল রাখা হয় । এর মধ্যে রয়েছে জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী, জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আপীল বিভাগের আরেক রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদ- দেয়া হয়েছে। শুনানি চলার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধকালে জামায়াত আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপীলের নিষ্পত্তি হয়ে যায়। এরপর আরও ৩০ মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দ-ের বিরুদ্ধে উচ্চ ্আদালতে আপীল করেছেন মোট ৩০। এর মধ্যে রয়েছেন জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুস সুবহান, জাপার সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ মোঃ কায়সার, আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা মোবারক হোসেন , জাপার সাবেক এমপি আব্দুল জব্বার, চাঁপাইর রাজাকার মাহিদুর রহমান, বাগেরহাটের সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার, খান মোঃ আকরাম হোসেন, পটুয়াখালীর ফোরকান মল্লিক, নেত্রকোনার ওবায়দুল হক তাহের, আতাউর রহমান ননী, হবিগঞ্জের মজিবুর রহমান (আঙ্গুর মিয়া), মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া, কিশোরগঞ্জের সামসুদ্দিন আহম্মেদ, এ্যাডভোকেট শামসুল হক, জামালপুরের এসএম ইউসুফ হোসেন, বিল্লাল হোসেন, মোসলেম প্রধান, আবদুল লতিফ, ইউসুফ আহম্মেদ, আমির আহম্মেদ ওরফে আমীর আলী, জয়নাল আবেদীন, আব্দুল কুদ্দুস,হামিদুর রহমান আজাদ, এ গনি ওরফে এ গনি হালদার, আকমল আলী তালুকদার, ইসহাক সিকদার, আব্দুল কুদ্দুস ও মাহবুবুর রহমান ।
×