ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সকল ষড়যন্ত্র ভেদ করেই এগিয়ে যাচ্ছে দেশ ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১৩:২৪, ১৫ নভেম্বর ২০১৯

সকল ষড়যন্ত্র ভেদ  করেই এগিয়ে  যাচ্ছে দেশ ॥ প্রধানমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, সকল চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ভেদ করেই বাংলাদেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। দেশের চলমান উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে অচিরেই দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। আমরা দারিদ্র্য ২১ ভাগে নামিয়ে আনতে পেরেছি, আরও কমাব। বাংলাদেশে দারিদ্র্য বলে কিছু থাকবে না। আর চলমান দুর্নীতি-সন্ত্রাস-মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। সন্ত্রাস-মাদকের দুষ্টচক্র থেকে সমাজকে আমাদের রক্ষা করতেই হবে। কোন দল করে আমরা দেখতে চাই না, অপরাধী অপরাধীই। কাউকে ছাড় দেইনি। এটা আমার নীতির ব্যাপার। সমাজকে দুষ্টচক্র থেকে রক্ষা করতেই হবে। পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের মাত্র একটি রাজ্য ছাড়া গোটা ভারতে পেঁয়াজ একশ’ রুপী কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ভারতও পেঁয়াজ আমদানি করছে। এক্ষেতেও আমরাও বসে নেই। মিসর, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমরা পেঁয়াজ আমদানি করছি। অল্প দিনের মধ্যেই মিসর ও তুরস্ক থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ চলে আসবে। আসলেই তা জেলায় জেলায় পাঠিয়ে দেয়া হবে, টিসিবি ট্রাকে করে তা বিক্রি করবে। আর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই, রামপালের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে সুন্দরবনের পরিবেশ নষ্ট হওয়ার কোনই আশঙ্কা নেই। সময় ও গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতেই হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার রাতে একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে একটা মর্যাদার আসনে নিয়ে এসেছি। আমি জানি দেশের কিছু লোকের এটা পছন্দ হয় না। একটি চক্র আছে যারা নানাভাবে একটা ঘটনা ঘটিয়ে দেশের বিরুদ্ধে একটা বদনাম করতে পারলেই বেশি খুশি হয়। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর মতো একটি বড় প্রকল্প বন্ধ করার জন্য যারা বিদেশে তদ্বির করে বিশ্বব্যাংকের টাকা বন্ধ করে দেয়, তারা দেশের কতবড় শত্রু সেটা সবাইকে বিবেচনা করতে হবে। এরা কখনো জনগণের স্বার্থ দেখে না, নিজের স্বার্থ দেখে। কিন্তু সকল চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ভেদ করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ইনশাল্লাহ বাংলাদেশকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা পালন করবো ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে। বাংলাদেশ বিজয়ের পতাকা নিয়েই বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে। তিনি বলেন, গ্রামের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত মানুষ দেশের উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে। গ্রামের মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর শিক্ষিত জাতিই পারে দারিদ্র্যমুক্ত দেশ ও সমাজ গড়তে। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা শিক্ষাখাতে বিনামূল্যে বই বিতরণসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি। তার সুফল জাতি পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর কঠোর অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, সমাজ থেকে অনিয়ম দূর করার জন্য সন্ত্রাস-দুর্নীতি-মাদক বিরোধী অভিযান চলছে, তা অব্যাহত থাকবে। মাদক-সন্ত্রাসনামক দুষ্টচক্র থেকে সমাজকে রক্ষা করতে হবে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি প্রবেশ করেছে, তার কারণ সামরিক স্বৈরাচাররা অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করতে দুর্নীতিকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছিল, দুর্নীতির সুযোগ করে দিতে একটা এলিট শ্রেণী তৈরি করেছিল। ট্রেন দুর্ঘটনা নিয়ে বিরোধী দলের নেতার বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই। কুয়াশার কারণে বিবাড়িয়ার কসবায় রেল দুর্ঘটনায় কিছু মানুষ মারা গেছে। সঙ্গে সঙ্গে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে আমরা আছি। উল্লাপাড়ায় আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিছু মানুষ আহত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনার পেছনে কোন চক্রান্ত বা দুরভিসন্ধি আছে কি না, তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। কারণ দেশে একটা ঘটনা ঘটার পর পরই আরও ঘটনা ঘটে। এর পেছনেও কিছু আছে কি না, তা খুঁজে বের করতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপির আমলে রেল যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমরা রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিক করে দিচ্ছি। রেলে জনবল নিতে হবে, প্রশিক্ষণও দিতে হবে। তবে একটা দুটো ট্রেন দুর্ঘটনার কারণে যদি ট্রেন বন্ধ করতে হয়, তবে গাড়ি দুর্ঘটনার পর কী গাড়িও বন্ধ করে দিতে হবে? খাদ্য ভেজাল সম্পর্কে তিনি বলেন, মানুষের চরিত্র বদলায় না। সরকার অভিযান চালাচ্ছে বলেই মানুষ জানতে পারছে খাদ্যে ভেজাল রয়েছে। এসব অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযান চলমান আছে, চালিয়ে যাব। তবে ভেজাল খেয়ে খেয়ে আমরা মনে হয় অভ্যস্ত হয়ে গেছি, কারণ গড় আয়ু বেড়ে গেছে। গড় আয়ু এখন ৭২ বছরে উন্নীত হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, একটা সময় চিংড়ি মাছে লোহার টুকরা ঢুকিয়ে, সুজি ঢুকিয়ে ওজন বাড়ানোর কারণে ইউরোপে রফতানি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমাদের সরকারের আমলে তা হয় না। আমাদের সময় রফতানি বন্ধ হয়নি। অসাধুদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। শিক্ষকদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার আসার পর সবার যত বেতন বাড়িয়েছি, অন্য কোন সরকার কোনদিন বাড়াতে পারেনি পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র প্রসঙ্গে সংসদ নেতা বলেন, বিশ্বের বহু দেশে পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতেও তিন-চারটি পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র রাশিয়া নির্মাণ করছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে, সকল বর্জ্য রাশিয়াই নিয়ে যাবে। এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। তিনস্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি। বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের ট্রেনিং দিয়ে নিয়ে আসছি। এক্সপার্ট আমরা তৈরি করছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিকভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যে কোন ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হয়। বুয়েটে আন্দোলনের আগেই আইজিপিকে ফোন করে নির্দেশ দেই, ফুটেজগুলো সংগ্রহ ও জড়িতদের গ্রেফতার করতে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি বিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, একজন ভিসি নিয়োগ দিলেই তার বিরদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। শিক্ষকরা তাদের স্বার্থের জন্য ছাত্রদের ব্যবহার করবে কেন? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা বন্ধ করে ছাত্রদের লেখাপড়া নষ্ট করা হচ্ছে। অনেক কষ্ট করে আমরা সেশনজট বন্ধ করেছি। কিন্তু চক্রান্ত করে সেটা আবার সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। দুর্নীতিবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে- রওশন ॥ সমাপনী বক্তব্যে বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ চাঞ্চল্যকর নুসরাত হত্যাকান্ড সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের সমাজে কী ধরনের অত্যাচার হচ্ছে। এসব হত্যাকান্ড মানুষের বিবেককে নাড়া দিচ্ছে। ধর্ষণ করে নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকা-ের দ্রুত বিচার হয়েছে, কিন্তু নুসরাতের কথা জনগণ কখনও ভুলবে না। বুয়েটের ছাত্র আবরার, সাগর দম্পতি সাগর-রুনী, মাহবুবা খানম হত্যাকান্ড হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে কিছু বিচার দ্রুত করা হয়, আবার কিছু বিচার দীর্ঘদিনেও শুরু হয় না। এতে মানুষের মনে ভুল বার্তা যায়। তিনি বলেন, বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা ও ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক ধারাটা আমরা জাতীয় পার্টি বদলে দিয়েছি। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের চেহারা আরও বদলে যাবে বলে আমি আশাবাদী। বিচারিক প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে আইনমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিচার যত বিলম্ব ঘটবে ততই মানুষের মধ্যে বিচার পাওয়ার ন্যায্য দাবি ভুলুণ্ঠিত হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান চলছে। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে বিপুল পরিমাণে অর্থ, অস্ত্র, মাদক পাওয়া যাচ্ছে। নিজেদের দলের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ করতে প্রধানমন্ত্রীর নিজ ঘর থেকে এই কঠোর অভিযান দেশের জনগণ প্রশংসা করছে। সব শ্রেণী-পেশার মানুষ সাধুবাদ জানাচ্ছে। তবে আমার প্রশ্ন, এতোদিন ধরে ক্যাসিনো চলেছে, পুলিশ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কারোরই তা চোখে পড়েনি? প্রধানমন্ত্রীর কঠোর পদক্ষেপে এই অভিযান দেশ থেকে দুর্নীতি অবশ্যই কমবে। কারণ দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল। তবে এ অভিযান বন্ধ হলে দুষ্কৃতকারীদের দৌরাত্ম বাড়বে, তাই অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।
×