ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের রফতানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ॥ মিয়ানমার তুরস্ক মিসর চীন থেকেও আমদানি হচ্ছে

অবশেষে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ৪ নভেম্বর ২০১৯

  অবশেষে পেঁয়াজের  দাম কমতে  শুরু করেছে

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ অবশেষে বেড়ে যাওয়া পেঁয়াজের মূল্য কমা শুরু হয়েছে। বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রবিবার থেকে এ দাম কমা শুরু করেছে। এছাড়া ভারত সরকার সে দেশের চাষীদের দাবির মুখে রফতানি নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়ায় খুব শীঘ্রই সেখান থেকেও পেঁয়াজ আসা শুরু হবে। মূলত মিয়ানমার থেকে আমদানি দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় মূল্য হ্রাস পেতে শুরু করেছে বলে চট্টগ্রামে ভোগ্যপণ্যের একক বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে, ঢাকার একটি শিল্প গ্রুপের পক্ষে তুরস্ক থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের বড় একটি চালান আজ সোমবার চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছার কথা রয়েছে। এছাড়া চলতি সপ্তাহের শেষ নাগাদ আরও দুটি শিল্প গ্রুপের আমদানির পেঁয়াজ চলে আসার কথা রয়েছে। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানানো হয়েছে, রবিবারও জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট পেঁয়াজের বাজারে অভিযান চালিয়েছে। যেসব দোকানে মূল্য তালিকার সঙ্গে বিক্রয়ের সামঞ্জস্য পাওয়া যায়নি তাদের বিভিন্ন অঙ্কের অর্থের জরিমানা করা হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, পেঁয়াজের আড়তে পাইকারি মূল্য কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। মূল্য হ্রাসের এ ঘটনা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম ও ঢাকার বেশ কয়েকটি শিল্প গ্রুপ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির এলসি খুলেছে ইতোমধ্যে। তন্মধ্যে একটি গ্রুপের আমদানির পেঁয়াজ আজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এদিকে, মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি দ্বিগুণ হয়েছে, যা চট্টগ্রামের আড়তে প্রতিদিন পৌঁছাচ্ছে। এ অবস্থায় তুরস্ক, মিসর এবং চীন থেকে আমদানির পেঁয়াজ বাজারে আসার আগেই মিয়ানমারের পেঁয়াজে বাজারমূল্য কমতে শুরু করেছে। এর পাশাপাশি পুনরায় ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি হয়ে আসার বিষয়টিও বাজারে চাউর হয়ে আছে। যেহেতু, ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়ার খবর হয়েছে সেক্ষেত্রে আমদানিকারকরাও সে দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাজার সূত্রে জানা গেছে, চলতি সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের খুচরা বাজার ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পেঁয়াজ যেহেতু পচনশীল পণ্য সেহেতু এটি গুদামজাত করে রাখার কোন সুযোগ নেই। এমনিতেই তুরস্ক, মিসর এবং চীন থেকে জাহাজ বোঝাই করে আনার পথে পেঁয়াজের পচন শুরু হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে দেশে এসে পৌঁছার পর আড়তে নিয়ে দীর্ঘসময় আটকে রাখার কোন সুযোগ থাকে না। আরও পচনের শঙ্কায় আড়তদাররা যত দ্রুত সম্ভব খোলাবাজারে, অর্থাৎ খুচরা পর্যায়ে ছেড়ে দিয়ে থাকে। উল্লেখ করা যেতে পারে, গত দেড়মাসের বেশি সময় আগে ভারত হঠাৎ কর পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ওই সময় এমনিতেই পেঁয়াজের মূল্য উর্ধগতি ছিল। ভারত রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে এতে আগুনে ঘি ঢালার অবস্থা হয়। লাফিয়ে লাফিয়ে পেঁয়াজের দর বেড়ে গিয়ে কোথাও ১১০, কোথাও ১২০, আবার কোথাও ১৩০ টাকায় উন্নীত হয়। এমনও ঘটনা ঘটেছে, দেশের কয়েকটি স্থানে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের কেজি ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এর ফলে বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে পেঁয়াজের মূল্যের উর্ধগতির বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়। সরকার টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করলেও তা বাজারদরের উর্ধগতিকে পরাজিত করতে পারেনি। এর ফলে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে দেশের শীর্ষস্থানীয় ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ আমদানির অনুরোধ জানালে বেশকিছু শিল্প গ্রুপ এতে সাড়া দিয়েছে। যার ফলে আজ থেকে শিল্প গ্রুপের আমদানির পেঁয়াজ পৌঁছানো শুরু হচ্ছে। বিষয়টি অনুধাবনে এনেই আড়তদাররা পেঁয়াজের দর হ্রাস করতে শুরু করেছে। রবিবার পেঁয়াজের বাজারে প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযান চলাচলে আড়তারদের জানানো হয়েছে, মিয়ানমার থেকে রবিবার চট্টগ্রামে যে পেঁয়াজ এসে পৌঁছেছে তার কেজিপ্রতি মূল্য দিতে হয়েছে ৯০ টাকা হারে। সঙ্গত কারণে সে পেঁয়াজ ৯৫ থেকে ১শ’ টাকা বিক্রি না করলে তাদের মুনাফার বিষয়টি থাকে না। এরপরও ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালিয়ে এমন কিছু আড়তারকে জরিমানা করায় ব্যবসায়ীরা নাখোশ। তবে প্রশাসনের পক্ষে জানানো হয়েছে, যেসব আড়তদার মূল্য তালিকায় এক দর দেখিয়েছে আবার বিক্রিকালে দর বেশি নেয়া হয়েছে সেসব ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হয়েছে।
×