ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

অক্টোবরে আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনিশ্চিত

প্রকাশিত: ১১:০২, ১০ আগস্ট ২০১৯

 অক্টোবরে আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনিশ্চিত

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আগামী অক্টোবরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। দেশে চলমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি ও বিভিন্ন এলাকা বন্যাকবলিত হওয়ায় নির্ধারিত সময় অর্থাৎ অক্টোবরে দলটির ত্রি-বার্ষিক ২১তম সম্মেলন অনুষ্ঠানে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দলটির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে অতি অল্পসময়ের মধ্যে সম্মেলন আয়োজন সম্ভব নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে সম্মেলনের দিনক্ষণ কিছুটা পিছিয়ে নতুন সময় চূড়ান্ত করা হতে পারে। গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে যথাসময়ে অর্থাৎ আগামী অক্টোবরের মধ্যেই সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজও শুরু হয়। কিন্তু পরবর্তীতে সেগুলো আর এগোয়নি। সারাদেশেই আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তিকে ব্যবহার করা হয়েছে চলমান ভয়াবহ ডেঙ্গু ও বন্যা মোকাবেলায়। আগস্ট শেষ হতে চলেছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেয়ার জন্য সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি নিউইয়র্কে যাবেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ভারত সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। যে কারণে অতি অল্পসময়ে সম্মেলন আয়োজন সম্ভব না হতে পারে বলেই মনে করছেন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, গত বৃহস্পতিবার লন্ডন থেকে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনও ভয়াবহ। প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এখন পুরো সরকার এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দম ফেলার সময় নেই। এ পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু মোকাবেলায় ব্যস্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতারা। পুরো আগস্ট মাস জুড়ে রয়েছে শোকের কর্মসূচী। তাই থমকে আছে সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি। তবে সুবিধামতো সময়ে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ২১তম সম্মেলনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করতে পারেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত এক দশক ধরে নির্ধারিত সময়েই সম্মেলন করে আসছে দেশের অন্যতম প্রধান ও বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। দলটির সর্বশেষ কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর। সে হিসেবে আগামী অক্টোবরের ২৩ তারিখে শেষ হচ্ছে তিন বছরের জন্য গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ। তবে দলটির গঠনতন্ত্রে উল্লেখ রয়েছে, অনিবার্য কারণবশত যদি নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন অনুষ্ঠান সম্ভব না হয় তবে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বর্তমান কমিটির মেয়াদ কিছুটা বৃদ্ধি করে নতুন সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত করতে পারবে। আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, সম্মেলনের প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে সাংগঠনিক সফরের জন্য দলের আটটি শক্তিশালী টিম গঠন করা হয়। ঈদ-উল-আজহার আগেই দু’একটি জেলায় সফরেও যান নেতারা। কিন্তু রমজান মাসে সফর বন্ধ হয়ে যায়, যা এখনও বন্ধ রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি সম্মেলনের আগে তৃণমূল তথা ইউনিয়ন, থানা, জেলা পর্যায়ের সম্মেলন শেষ করে এরপর কেন্দ্রীয় সম্মেলন হয়। এবার হাতে গোনা দু’একটি থানা ছাড়া এখনও কোথাও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে আগামী মাস সেপ্টেম্বরে কয়েকটি জেলায় সম্মেলন করার বিষয়ে আলোচনা করছেন দলটির নেতারা। এছাড়া কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনগুলোরও সম্মেলন করা হয়। আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ তিন সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ এবং ভাতৃপ্রতীম সংগঠন শ্রমিক লীগের মধ্যেও কোন সম্মেলনের প্রস্তুতি নেই। এছাড়া গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র প্রতি সম্মেলনের আগে হালনাগাদ করা হয়। এবার এখনও এ সংক্রান্ত কোন আলোচনা বা উদ্যোগ দেখা যায়নি। আর সম্মেলনের আবশ্যিক প্রস্তুতি কাউন্সিলর তালিকা তৈরি, মঞ্চ সাজানো, বিভিন্ন প্রকাশনা বের করার কাজ তো থাকছেই। তবে দেশের বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, এখনও দেশের অনেক স্থান বন্যাকবলিত। রাজধানীসহ সারাদেশেই ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ আকারে বেড়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা বন্যা মোকাবেলা ও ত্রাণ বিতরণের কাজ করছেন। সেদিক থেকেও সাংগঠনিক কার্যক্রম আপাতত শিথিল। এদিকে সম্মেলন করার আগে জরুরী বিষয় হলো সদস্য সংগ্রহ অভিযান। এতে নতুন সদস্য সংগ্রহ এবং পুরনো সদস্যদের সদস্যপদ নবায়ন করা হয়। এখন পর্যন্ত দেশের কোথাও সেভাবে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়নি। এ পরিস্থিতিতে অক্টোবরে জাতীয় সম্মেলন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেক জ্যেষ্ঠ নেতাও। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তারা এ বিষয়ে বলতে নারাজ। সম্মেলনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা দুজন যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদক এ প্রসঙ্গে বলেন, ডেঙ্গু ও বন্যা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বর্তমানে দলের সকল সাংগঠনিক কর্মকান্ড বন্ধ। ডেঙ্গু পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে, সেটিও দেখার বিষয়। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করলে অক্টোবরে সম্মেলন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা খুবই কম। সেক্ষেত্রে সম্মেলন অক্টোবর থেকে সামান্য পিছিয়ে নবেম্বরে নেয়া হতে পারে। তবে এখনি চূড়ান্তভাবে বলা যাচ্ছে না সম্মেলন পেছাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও বন্যা মোকাবেলায় আমরা (আওয়ামী লীগ) সম্প্রতি খুবই ব্যস্ত। তাই দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়ে বর্তমানে কাজ করতে পারছি না। তবে তিনি মনে করেন, দেশের সর্ববৃহৎ ও প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের পক্ষে যেকোন সময়ে একটি সম্মেলনের আয়োজন করা সম্ভব। তবে আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, বন্যা ও ডেঙ্গু পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেই সাংগঠনিক কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। সেক্ষেত্রে আগামী মাস অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে একযোগে তৃণমূল সম্মেলন, সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন, সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হতে পারে। তাই সিদ্ধান্ত থাকলেও বাস্তবতার নিরিখে এবং যৌক্তিক কারণে অল্প কিছুদিন পিছিয়ে সম্মেলনের নতুন সময় ঘোষণা করা হতে পারে বলেই তাদের ধারণা।
×