ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফিরতি টিকেট ৫ আগস্ট শুরু

নানান অভিযোগের মধ্য দিয়ে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শেষ

প্রকাশিত: ১০:১২, ৩ আগস্ট ২০১৯

 নানান অভিযোগের মধ্য দিয়ে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শেষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রির শেষ দিনে শুক্রবার কমলাপুর স্টেশনজুড়ে ছিল উপচেপড়া ভিড়। চাহিদা বেশি। টিকেট কম। তাই শেষ পর্যন্ত অনেকে টিকেট না পেয়েই ফিরেছেন। কারও কারও অভিযোগ এসি চেয়ার ও কেবিনের টিকেট না পাওয়ার। তবে যারা বৃহস্পতিবার বিকেলে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তাদের খুশি যেন ধরছিলই না। টিকেট হাতে পেয়ে প্রিয়জনকে ফোন করে আগে খবরটা দেন, ‘...টিকেট পেয়েছি। চিন্তা করো না। বাড়ি যাওয়া নিশ্চিত। কোন সমস্যা নেই। এবার প্রস্তুতি নাও...।’ তবে শেষদিনে অনলাইনে টিকেট না পাওয়ার অভিযোগ ছিল বেশ। শুক্রবার সকাল নয়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত বিক্রি হয় ১১ আগস্টের টিকেট। ১২ আগস্ট সম্ভাব্য ঈদ উল আজহা ধরে এবারের টিকেট বিক্রি কার্যক্রম শুরু করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। যারা অফিস শেষে সবকিছু গুছিয়ে বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন তারাই শেষদিনে ভিড় করেন কমলাপুরে। ২৯ জুলাই থেকে অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়। পাঁচদিনে টিকেটযুদ্ধে যারা শামিল হন তাদের একটি বড় অংশই হাসিমুখে বাড়ি ফিরেছেন। যারা টিকেট পাননি তারা পরের দিনের জন্য চেষ্টা করেন। জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে জনপ্রতি চারটি করে টিকেট বিক্রি হয়। এবার টিকেট কালোবাজারি ঠেকাতে নানামুখী তৎপরতা নেয়া হয়। যাত্রীদের সুবিধার্থে এবারও কমলাপুর স্টেশন ছাড়া বিমানবন্দর, বনানী, তেজগাঁও ও ফুলবাড়িয়া (পুরনো) স্টেশন থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট দেয়া হয়। এসি টিকেট প্রত্যাশীরা কাউন্টারের সামনে অবস্থান নেন বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই। রাতভর সংবাদপত্রের বিছানায় শুয়ে সময় কাটে তাদের। অনেককে বাচ্চা নিয়ে কাউন্টারের সামনে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। সবার অপেক্ষা সকাল হওয়ার। নারী কাউন্টারের সামনে কথা হয় আফরোজার সঙ্গে। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলেই লাইনে দাঁড়াই। ছয় বছরের শিশুকে নিয়ে টিকেট কাটতে আসি। সারারাত কেটেছে পত্রিকায় ওপর শুয়ে। অবশ্য সকালে টিকেট হাতে পেয়ে বেশ ভাল লাগছে। ট্রেন ছাড়া নিরাপদ যাত্রা সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি। বনলতা এক্সপ্রেসের টিকেটের জন্য আগেরদিন রাতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন মিলন রহমান। তিনি বলেন, গত রাতে লাইনে দাঁড়িয়েছি এসি টিকেটের জন্য। কিন্তু কী বলব এত দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও এসি টিকেট পেলাম না। ঈদের সময় যাত্রা খুবই ভোগান্তিকর, তবুও বাধ্য হয়েই যেতে হয়। যেহেতু পরিবার পরিজন নিয়ে বাড়ি যাব তাই এসি টিকেটের প্রয়োজনীতা থেকেই দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু আমার সিরিয়াল আসতে আসতেই এসি টিকেট শেষ হয়ে গেছে বলে জানানো হলো। কাউন্টারে ধীর গতি ॥ কমলাপুরে প্রতি কাউন্টারের সামনে ছিল টিকেটপ্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইন। এ লাইনে কেউ এসে দাঁড়িয়েছে আগেরদিন সন্ধ্যায়, কেউবা রাতে। আর লাইনের শেষ অংশের দিকে যারা আছেন তারা দাঁড়িয়েছেন ভোরে অথবা টিকেট বিক্রি শুরুর আগে। সব মিলিয়ে প্রতি কাউন্টারে টিকেটপ্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়। একতা এক্সপ্রেসের টিকেটের জন্য লাইনে দাঁড়ান মানিক মিয়া। তিনি বলেন, আমাদের এই দীর্ঘ অপেক্ষার যেন কোন দামই নেই। প্রতিটি মানুষ গত রাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত বিরক্ত। সকাল নয়টায় টিকেট বিক্রি শুরু হলেও কাউন্টারে যারা আছেন তারা খুব ধীরগতিতে টিকেট দিচ্ছেন। নীলসাগর ট্রেনের টিকেটের জন্য লাইনে দাঁড়ানো হায়দার হোসেন বলেন, একজনকে টিকেট দিতে তারা যদি এতটা সময় নেয় তবে অন্যরা টিকেট পেতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। আসলে রেলওয়ের উচিত যারা কম্পিউটার বোঝে, এক্সপার্ট তাদের নিয়োগ দেয়া। তাছাড়া ঈদ উপলক্ষে নির্ধারিত সময় টিকেট দেয়া হয় কেনÑ এ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। এদিকে গত চারদিন অনলাইনে ঢুকতে পারলেও টিকেট না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন বেলাল হোসেন নামে এক যাত্রী। তিনি বলেন, অনলাইনে প্রবেশ করতে পেরেছি ঠিক, কিন্তু একদিনও টিকেট কাটতে পারিনি। টিকেট ক্রয়ের অপশনে গেলে দেখানো হয়েছে টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। একই অভিযোগ করেছেন অন্তত ৩০ যাত্রী। তারা প্রত্যেকেই টিকেট কাটতে ব্যর্থ হয়ে শেষদিনে লাইনে এসে দাঁড়ান। টিকেট বিক্রির সার্বিক বিষয়ে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল হক বলেন, প্রতিটি লাইনে মানুষ সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে টিকেট সংগ্রহ করছেন। অগ্রিম টিকেট বিক্রিতে যেন অপ্রীতিকর কোন ঘটনা যাতে না ঘটে সে লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ রেলওয়ের নিজস্ব বাহিনী তৎপর রয়েছে। কাউন্টারে যতক্ষণ টিকেট থাকবে ততক্ষণ যাত্রীরা পাবেন। পাঁচ আগস্ট থেকে ফিরতি টিকেট ॥ ঈদ শেষে ফিরতি টিকেটের ক্ষেত্রে ৫ আগস্ট দেয়া হবে ১৪ আগস্টের টিকেট। এছাড়া ৬ আগস্ট ১৫ তারিখের, ৭ আগস্ট ১৬ তারিখের, ৮ আগস্ট ১৭ তারিখের এবং ৯ আগস্ট ১৮ আগস্টের ট্রেনের অগ্রিম ফিরতি টিকেট দেয়া হবে। রেলে প্রতিদিন দুই লাখ ৭৭ হাজার মানুষ চলাচল করলেও ঈদের সময় তা বেড়ে প্রায় চার লাখে দাঁড়াবে। অন্যদিকে ঈদের আগে পরে ১০ দিন পর্যন্ত ট্রেনে ভিআইপিদের জন্য সেলুন সংযোজন করা হবে না। এছাড়া আগামী ১১ ও ১৪ আগস্ট ঢাকা-কলকাতা-ঢাকার মধ্যে মৈত্রী এক্সপ্রেস চলাচল করবে না। ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত যাত্রী চাহিদা মেটানোর জন্য এক হাজার ৪৩৭ যাত্রীবাহী কোচ সার্ভিসে যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
×