ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিমসটেক কার্যকর করতে শান্তি ও স্থিতিশীলতায় গুরুত্বারোপ

প্রকাশিত: ১২:০৩, ৩১ জুলাই ২০১৯

বিমসটেক কার্যকর করতে শান্তি ও স্থিতিশীলতায় গুরুত্বারোপ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিমসটেক কার্যকর করতে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সব সময় আন্তরিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মঙ্গলবার রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এ্যান্ড স্ট্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস-বিস) মিলনায়তনে ট্র্যাক ১.৫ বিমসটেক নিরাপত্তা সংলাপ ফোরামের দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব) তারিক আহমেদ সিদ্দিক প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিস পরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আব্দুর রহমান এনডিসি পিএসসি। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিস মহাসচিব রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম ও ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব কামরুল হাসান। দুই দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানে চারটি ওয়ার্কিং সেশনে বিমসটেক দেশগুলো থেকে আসা ১৯ জনসহ স্থানীয় প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন। মেজর জেনারেল (অব) তারিক আহমেদ সিদ্দিক বলেন, শক্তিশালী আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সব সময় আন্তরিক। শুধু তাই নয়, এ বিষয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সব সময়ই শক্তিশালী আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে আন্তরিক মনোভাব প্রদর্শন করেছে ও বিমসটেক (বে অব বেঙ্গল ইনেসিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল এ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন) সে মনোভাবেরই ফসল। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা আরও বলেন, বিদ্যমান বা সম্ভাব্য প্রথাগত-অপ্রথাগত নিরাপত্তার হুমকি বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দৃঢ় নিরাপত্তা ও সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে যথেষ্ট উৎসাহী। ট্র্যাক ১.৫ বিমসটেক নিরাপত্তা সংলাপ ফোরামের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে একে অপরকে সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত উপায় খুঁজে পেতে সহায়তা করবে। উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে বিমসটেক সদস্য দেশগুলোর মধ্যে মাদক নির্মূল, নিরাপত্তা ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশের মনোভাব প্রকাশ করেন মেজর জেনারেল (অব) তারিক আহমেদ সিদ্দিক। বিমসটেকের ঘোষণা অনুযায়ী, এতে ১৪ সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলো- বাণিজ্য-বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, জ্বালানি, জলবায়ু, পরিবহন ও যোগাযোগ, পর্যটন, মৎস্য, কৃষি, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জনস্বাস্থ্য, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং সন্ত্রাসবাদ দমন ও আন্তঃদেশীয় অপরাধ। কিন্তু গত ২১ বছরে বিমসটেকের সাফল্য এখনও আশানুরূপ নয়। তবে সদস্য রাষ্ট্রগুলো আন্তরিক হলে বিমসটেকের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী সাফল্য আনা সম্ভব। এদিকে, বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল এ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনকে (বিমসটেক) বলা হয় সার্ক ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সেতুবন্ধের একটি জোট। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশকে নিয়ে ১৯৯৭ সালে গঠিত হয় বিমসটেক নামে আঞ্চলিক জোট। বাংলাদেশ এ জোটের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। শুরুতে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডকে নিয়ে এ জোটের যাত্রা হলেও পরে মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটান বিমসটেকে যোগ দেয়। বিমসটেকের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের সমৃদ্ধি ও সহযোগিতার এক উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। প্রসঙ্গত, বিমসটেক সার্ক ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে একটি সেতুবন্ধ রচনা করেছে। বিমসটেকের মধ্যে রয়েছে সার্কভুক্ত পাঁচটি দেশ যথাক্রমে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কা এবং আসিয়ানভুক্ত দুটি দেশ থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার। বিমসটেক দেশগুলো একদিকে যেমন আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোকে পশ্চিমমুখী সার্কের বাজারে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে, তেমনি সার্কভুক্ত দেশগুলোকে পূর্বমুখী আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর বাজারে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, বিমসটেক অঞ্চলে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-পঞ্চমাংশ, অর্থাৎ ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা বিশ্বের ২২ শতাংশ লোকের বাস। কিন্তু এ অঞ্চলের মোট জিডিপি মাত্র ২ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার, যা বিশ্ব জিডিপির ৪ শতাংশ। সুতরাং বিশ্ব জিডিপিতে এ অঞ্চলের হিস্যা বাড়ানোর ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তার জন্য দরকার পারস্পরিক বোঝাপড়া। এশিয়ার উদীয়মান দেশগুলোর দিকে বড় বড় অর্থনীতির দেশের নজর পড়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে একমাত্র নেপাল ছাড়া বিমসটেকভুক্ত সব দেশের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে।
×