সমুদ্র হক, বগুড়া ॥ সরকারী নীতিমালা আছে। তারপরও জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের ধারে বিলবোর্ড স্থাপনে কোন নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। অনুমোদনও নেয়া হয় না। সড়ক ধারের শতকরা ৯০ ভাগ বিলবোর্ড অবৈধ। মহাসড়কে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো এলোমেলোভাবে এইসব বিলবোর্ড স্থাপন। হালে এলইডি স্ক্রিনের বিলবোর্ড স্থাপিত হচ্ছে। এই বিলবোর্ড অনেক সময় (বিশেষ করে রাতে) গাড়ির চালকের দৃষ্টিভ্রম করে। ঘটে অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা। এদিকে মহাসড়কের ধারের সরকারী ভূমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের আওতাধীন সকল সড়ক ও মহাসড়কের ধারের জমি ব্যবহার, বিলবোর্ড স্থাপন ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালার আওতায় আনা হয়েছে। সরকারীভাবে বলা হয়েছে, সরকারী অনুমোদন ছাড়া কোন ব্যক্তি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান জাতীয়, আঞ্চলিক মহাসড়কের ধারে এবং আন্তঃজেলা সংযোগের সড়কের ধারে স্থাপনা নির্মাণ ও বিলবোর্ড স্থাপন করতে পারবে না। সওজ অধিদফতর সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ে শর্ত সাপেক্ষে ইজারা দিতে পারবে। তবে তা যেন সড়কে যানবাহন চলাচলে বিঘœ না ঘটায়। বিলবোর্ড স্থাপনে ২০১৫ সালের নবেম্বর মাসে প্রণীত ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালার আওতায় এইসব সিদ্ধান্ত নিয়ে তা মেনে চলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্দেশের ব্যত্যয় ঘটলে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্দেশপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট এবং সওজ বিভাগের কর্মকর্তা আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের ধারে বিশাল বিলবোর্ড স্থাপন শুরু হয় আশির দশকের শুরুতে। প্রথমদিকে বিলবোর্ড স্থাপনে দূরত্ব এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বিচেনায় আনা হতো। যেখানে যানবাহনের গতি ধীর হয়ে যাত্রীদের দৃষ্টিতে আসে। পরবর্তী সময়ে কোন দূরত্বসীমা না মেনে সড়কের ধারে যে কোন স্থানে বিলবোর্ড বসানো শুরু হয়। কে কত বড় ঢাউস বিলবোর্ড বসাতে পারে তার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। হালে সড়কের বাঁকের নিকটে এমন আড়াআড়িভাবে বিশাল আকৃতির বিলবোর্ড স্থাপিত হয় যা গাড়ির চালকের দৃষ্টিকে ভ্রমের মধ্যে ফেলে দেয়। কখনও বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়িকে সহসা চোখে পড়ে না। বিশেষ করে রাতে এইসব বড় বিলবোর্ডে কখনও গাড়ির হেডলাইটের প্রতিফলনে, কখনও উল্টো দিক থেকে আসা গাড়ি না দেখতে পারায় চালকের গতি নিয়ন্ত্রণে বিঘœ ঘটছে। আবার বিলবোর্ডের কারণে পেছনের দ্রুতগামী গাড়ি বাঁক ঘোরাতে একটু বেখেয়াল হলে ধাক্কা দিচ্ছে। এভাবেও বেড়ে যায় দুর্ঘটনার হার। এদিকে ছোট, বড়, ভারি কোন গাড়ির হেডলাইটের অর্ধেক অংশ কালো রঙে ঢেকে না দেয়ায় দুর্ঘটনা ঘটছে। আরেকদিকে সড়ক ও মহাসড়কের ধারে সওজ অধিদফতরের ভূমি দখল করে অবৈধ স্থাপনা ও হাটবাজার গড়ে তোলা হচ্ছে। এভাবে সড়ক সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে।
সওজ অধিদফতর বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান উল্লেখিত ঘটনার কথা মেনে নিয়ে জানান, গত মাসে তিনি বগুড়ার মাটিডালি এলাকায় ক্রসরোডের ধারে বড় বিলবোর্ড গ্যাসকাটারে সরিয়ে দিয়েছেন। মাঝে মধ্যেই বগুড়া সওজ অভিযান চালিয়ে এইসব অননুমোদিত বিলবোর্ড কেটে সরিয়ে ফেলছে। তারপরও অনুমতি না নিয়ে বিলবোর্ড স্থাপিত হচ্ছে। বর্তমানে নগরীর ভেতরে জায়েন্ট স্ক্রিনে (বিশাল পর্দায়) ডিজিটাল এলইডি বিলবোর্ড স্থাপিত হচ্ছে। রাতে ডিজিটাল বিলবোর্ডগুলোর চলমান ছবি যানবাহনের চালক ও পথচারীদের দৃষ্টিতে ভ্রম এনে দিচ্ছে। ডিজিটাল বিলবোর্ড দিনে দিনে মহাসড়কের ধারেও বসানো শুরু হয়েছে। মোটরগাড়ির চালক বগুড়ার মোজাহার আলী বললেন, রাতে এই ডিজিটাল বোর্ডে চোখ পড়ার পর সামনে তাকালে হঠাৎ ঝাপসা হয়ে যায়।
বর্তমানের নীতিমালায় বলা আছে, মহাসড়কের বাঁকের ভেতরের দিকে, কি পয়েন্ট ইন্সটলেশন (কেপিআই) এলাকার ভেতরে, ফুট ওভারব্রিজ, ফ্লাইওভার, বহুতল ভবন ও চলাচলে দৃষ্টিভ্রম হয় এমন কোন ভবনের ওপরে, সড়কের দুই ধার জুড়ে, আড়াআড়িভাবে কোন বিলবোর্ড স্থাপনের অনুমতি দেয়া যাবে না। নগরী ও শহরের ভেতরেও এলইডি ডিজিটাল বিলবোর্ড স্থাপনে নিরাপত্তার ঝুঁকি, স্থান ও সড়কের অবস্থান বিচেনায় আনতে হবে। জাতীয় মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও জেলার সড়কগুলোতে সড়ক নিরাপত্তায় ঝুঁকি সৃষ্টি করে না, পথচারী ও গাড়ি চালকের দৃষ্টিভ্রম ও বিভ্রাট ঘটায় না এমন স্থানে বিলবোর্ড স্থাপনের অনুমতি দেয়া যেতে পারে। সওজ অধিদফতরের জমিতে সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে বেসরকারী বিলবোর্ড স্থাপনে ইজারা মিলবে সর্বোচ্চ তিন বছর মেয়াদে। ইজারা নেয়া ভূমির ওপর স্থাপিত বিলবোর্ডে সরকারী নীতির পরিপন্থী, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এবং অশালীন কোন বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা যাবে না। প্রতিটি বিলবোর্ডের ওপর সরকারী যে স্মারকমূলে ইজারা বা ভাড়া নেয়া হয়েছে তার নম্বর ও মেয়াদকাল এমনভাবে উল্লেখ থাকতে হবে যা দৃষ্টিতে আসে। বিলবোর্ড ইজারা হবে বর্গফুটের নির্দিষ্ট হারে ভাড়া অনুযায়ী। জাতীয় মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও জেলা সড়কের জন্য এই হার নীতিমালা অনুযায়ী ধার্য হবে। ডিজিটাল এলইডি স্ক্রিনে স্ক্রল ভিশন, ভিডিও চিত্র, ট্রাইভিশন ইত্যাদির জন্য হার আলাদা। বিলবোর্ড ইজারার এককালীন ফি ও বার্ষিক ইজারা ফি উভয়ই প্রদান করতে হবে। প্রতি ক্ষেত্রেই ফি হবে বর্গফুট ভিত্তিক। যা সড়ক ও মহাসড়কের শ্রেণী অনুযায়ী নির্ধারিত। এককালীন ফির হার আলাদা। ইজারা গ্রহীতাকে যাবতীয় কর, ভ্যাট, এসডি কর এবং বিদ্যুত খরচ বহন করতে হবে। বেসরকরী বিজ্ঞাপন, কোন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন বিলবোর্ড একই নীতিমালার আওতায় থাকবে। সরকারী প্রয়োজনে বিনা ভাড়ায় বিলবোর্ড রাখা যাবে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত।
সূত্র জানায়, মহাসড়কের ধারের অনেক জমি বেহাত হয়ে যাচ্ছে। গড়ে উঠছে অবৈধ স্থাপনা। সূত্র জানায়, দেশজুড়ে মহাসড়ক আছে অন্তত ২১ হাজার ৩শ’ কিলোমিটার। এর মধ্যে সওজ অধিদফতরের আওতাধীন জাতীয় মহাসড়ক তিন হাজার ৮শ’ ১২ কিলোমিটার। আঞ্চলিক মহাসড়ক ৪ হাজার ২শ’ ৪৬ কিলোমিটার। জেলার সংযোগে মহাসড়ক আছে ১৩ হাজার ২শ’ ৪২ কিলোমিটার।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: