ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

পহেলা বৈশাখে কাফরুলে বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ড

প্রকাশিত: ১১:১১, ১৬ এপ্রিল ২০১৯

পহেলা বৈশাখে কাফরুলে বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ড

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার পহেলা বৈশাখের দিন গত রবিবার রাজধানীর কাফরুলের একটি বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুনে দশতলা ভবনটির দুইটি ফ্লোর ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। কাফরুলের বহুতল ভবনটির দুইটি ফ্লোর দুইটিতে গার্মেন্টস সামগ্রী ছাড়াও জুতা পলিশ করার কালি, ব্রাশসহ অন্যান্য মালামাল ছিল। ভবনটিতে অগ্নিকা-ের ঝুঁকি আছে বলে ফায়ার সার্ভিসের তরফ থেকে নোটিস টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে মগবাজারে একটি বহুতল বাড়ির কার পার্কিংয়ে আগুনে কয়েকটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত রবিবার রাজধানীর মিরপুর-১৪ নম্বর কাফরুল থানাধীন ইব্রাহিমপুরের পুলপাড়ের ২৮৪ নম্বর দশতলা ভবনে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল পাঁচটার দিকে ভবনটির ষষ্ঠতলা থেকে ধোঁয়া বের হতে থাকে। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই ভবনটির ষষ্ঠতলায় আগুন দেখা যায়। দেখতে দেখতেই ওপরের সাত তলায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় পুরো ভবন কালো ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যায়। ভবনটির নিচ তলায় থাকা র‌্যাংগস, তোশিবা, সনির শোরুম ও অন্যান্য শোরুমে থাকা লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভবনটির উত্তর দিকে থাকা দুইটি বহুতল ভবন ছাড়াও ভবনটি লাগোয়া ফুটওভার ব্রিজে থাকা লোকজন ভয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। বিশেষ করে ভবনটির সঙ্গে থাকা ওভারব্রিজের মধ্যে ঘটনার সময় আটকে পড়েছিলেন অন্তত ২৫ জন নারী পুরুষ। তারা পূর্বদিকের একটি গার্মেন্টসের কর্মচারী। এছাড়া ঘটনার সময় নববর্ষের আনন্দ উদযাপন করছিলেন শত শত নারী পুরুষ। কাছেই কচুক্ষেত ও ইব্রাহিমপুর বাজার। সেখানে শত মানুষের ভিড় ছিল। এছাড়া আগুন লাগা ভবনটির নিচে ও আশপাশের ফুটপাতের ওপর শত শত ভাসমান দোকান বসেছিল। আগুন লাগার পর পুরো এলাকা নিমিষেই ফাঁকা হয়ে যায়। সামনের ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে পুলিশ স্টাফ কলেজের দিকে যাওয়ার রাস্তায় যানবাহন ও মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুরো এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হাজার উৎসুক জনতা ভিড় করে সেখানে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর দায়িত্বশীলরা ঘটনাস্থলে ছুঁটে যান। পরে সম্মিলিতভাবে আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। কারণ ওইদিন ভবনটির ওপরের দিকে সব কাজ কর্ম বন্ধ ছিল। এজন্য সেখানে কোন লোকজনও ছিল না। যারা ছিলেন, তারা বৈশাখের আনন্দ উদযাপন করতে নিচে ছিলেন। ফলে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আগুন নেভানোর সময় একজন ফায়ারম্যান আহত হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশনস ও মেইনটেন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ জানান, যে ফ্লোরটিতে আগুন লেগেছিল, সেটি ছিল চামড়ার একটি গুদাম। ভবনটিতে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। এজন্য আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। ভবনটির মালিক নজরুল ইসলাম খান নামের এক ব্যক্তির। তার নামানুসারেই ভবনটির নাম খান ম্যানশন। যে ষষ্ঠতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত সেই ফ্লোরটি পাপ্পু নামে একজন গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করতেন। ভবনটিতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের চার জন্য কাউন্সিলরের কার্যালয় আছে। স্থানীয়রা বলছিলেন, অনেকেই ভবনটিকে মিলি মার্কেট হিসেবে চিনে। তবে মার্কেটটির সামনে বিশাল সাইনবোর্ড দিয়ে সিটি পার্ক চাইনিজ রেস্টুরেন্ট এ্যান্ড কনভেনশন সেন্টার লেখা। এজন্য অনেকেই এটিকে সিটি পার্ক ভবন বলে চিনেন। ভবনটির বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগ সোমবার বিকেল পর্যন্ত বন্ধ ছিল। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বশীলরা ভবনটি পরিদর্শন করেছেন। ভবনটি কাঠামোগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ কিনা সে বিষয়ে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন মতামত দেয়নি রাজউক। এদিকে সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে রাজধানীর রমনা থানাধীন মগবাজার কাজী অফিস গলির ১১৬ নম্বর বহুতল বাড়ির বেজমেন্টে একটি গাড়িতে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শী বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, বিকট শব্দে সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হওয়ার পর আগুন গাড়িতে লেগে যায়। আগুনে আরও কয়েকটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস জানায়, তাদের তিনটি ইউনিট আধ ঘণ্টার মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
×