ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

২ লাখ ৫ হাজার ডলার গুনতে হবে

এলএনজি আমদানির অর্থ নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ না করায় জরিমানা

প্রকাশিত: ১১:০৮, ২ এপ্রিল ২০১৯

এলএনজি আমদানির অর্থ নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ না করায় জরিমানা

রশিদ মামুন ॥ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির অর্থ নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ না করায় দুই লাখ ৫ হাজার ডলার জরিমানা গুনতে হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকের জরিমানা পরিশোধ করার কথা থাকলেও ব্যাংক তা পরিশোধ করছে না। এ বিষয়ে জ¦ালানি বিভাগের হস্তক্ষেপ চাইছে পেট্রোবাংলা। জ¦ালানি বিভাগ এবং পেট্রোবাংলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে স্রেফ গাফিলতির কারণে ব্যাংক এলএনজি ক্রয়ের দাম পরিশোধ করেনি। কিন্তু কোন কারণে বিল পরিশোধে চুক্তির সময় পেরিয়ে গেলেই চড়া অঙ্কের লেইট পেমেন্ট ইন্টারেস্ট বা জরিমানা পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু গত নবেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে চারটি বিলের ক্ষেত্রে ব্যাংক বিক্রেতাকে অর্থ ছাড়ে গড়িমসি করেছে। যাতে দুই লাখ পাঁচ হাজার ৩৩৫ ডলার জরিমানা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন কোনভাবে একটি বিল পরিশোধের বেলায় হলে ধরে নেয়া যায় বিষয়টি ভুল হয়েছে। কিন্তু পরপর দুই মাসে দুটি বিলের ক্ষেত্রে একই রকম কাজ করলে সেটা মানা কঠিন। আর যেহেতু আন্তর্জাতিক আইনে বিষয়গুলো পরিচালিত তাই চাইলেও এখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়া কঠিন। পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) মহ. নজরুল ইসলাম জ¦ালানি বিভাগে যে চিঠি দিয়েছেন সেখানে দেখা গেছে অগ্রণী ব্যাংকের বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কর্পোরেট শাখা ৪ নবেম্বর, ১৪ নবেম্বর, ৬ ডিসেম্বর এবং ২৭ ডিসেম্বর চারটি বিল পরিশোধে বিলম্ব করেছে। কাতারের রাস লাফেন এলএনজি কোম্পানি লিমিটেডের রফতানির বিপরীতে চারটি ইনভয়েস-এর বিপরীতে এই জরিমানা হয়েছে। জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামসুল ইসলাম বলেন, এসব লেনদেনের ক্ষেত্রে আমাদের রেকর্ড খুব ভাল। তিনি বিভিন্ন জায়গাতে তার ব্যাংক খুব ভালভাবে অর্থ পরিশোধ করছেন উল্লেখ করেন। নির্দিষ্ট করে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব বিল শাখা থেকে পরিশোধ করা হয়। বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে বলতে পারবেন। এরপর আরও নির্দিষ্ট করে মাস উল্লেখ করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা সমস্যা হয়েছিল। সেটা নানা কারণেই হতে পারে। তবে সেটা পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে মিটে যাওয়ার কথা বলে আমি জানি। পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত দিনে বিল পরিশোধে ব্যর্থ হলে সাধারণভাবে মূল বিলের ওপর লাইবর-এর সঙ্গে ৪ ভাগ যোগ করে বিলম্ব পরিশোধ জরিমানা দিতে হবে। কোন কারণে সাত দিন বিলম্ব হলে লাইবরের সঙ্গে ৫ ভাগ যোগ করে জরিমানা দিতে হবে। এলএনজি ক্রয়ের সময় যে চুক্তি করেছে পেট্রোবাংলা তাতে এই বিধান উল্লেখ রয়েছে। এই ধারাকে উদ্ধৃত করে পেট্রোবাংলা গত বছর মে মাসে অগ্রণী ব্যাংকের বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কর্পোরেট শাখার সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে। ওই সমঝোতা স্মারকের ৬ নম্বরে উল্লেখ রয়েছে ব্যাংক অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে জরিমানার দায় ব্যাংককে বহন করতে হবে। পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক হিসাব মহ. নজরুল ইসলাম দাবি করেছেন তাদের হিসেবে টাকা জমা থাকলেও তা দেয়নি ব্যাংক। এর দায় কোনভাবে পেট্রোবাংলার নয়। কিন্তু ব্যাংককে বারবার বলা সত্ত্বেও এই অর্থ পরিশোধ করছে না। এজন্য জ¦ালানি বিভাগের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক অর্থ পরিশোধ করুক বা পেট্রোবাংলা করুক। রাষ্ট্রের অর্থ দিয়েই এই জরিমানা দিতে হবে। কিন্তু একটু সতর্ক হলেই এ ধরনের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব যা করেনি সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে দায়িত্বে অবহেলাকেই বড় করে দেখা হচ্ছে। ব্যাংক এলসি অর্থ পরিশোধ করতে না পারলে তারা বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য কোন বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার ধার করতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে উদ্যোগের অভাব ছিল কি না খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করা হচ্ছে। অগ্রণী ব্যাংকের এজিএম (ট্রেজারি ডিভিশন) মোখলেসুর রহমান জানান, পেট্রোবাংলা আমাদের টাকা দেয়। কিন্তু আমাদের বিল পরিশোধের সময় ডলারে দিতে হয়। তখন আমাদের ডলারের সঙ্কট ছিল বলেই আমরা যথাসময়ে বিল দিতে পারিনি। পরে অনুরোধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার এনে দেয়া হয়েছে। এতে সাত দিনের মতো দেরি হয়েছিল। এখানে কোন গাফিলতি ছিল না। প্রসঙ্গত দেশের জ¦ালানি সঙ্কট মেটাতে সরকার প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করছে। এর একটি বড় অংশ কাতারের রাস গ্যাসের কাছ থেকে কেনা হচ্ছে। এছাড়া স্পট মার্কেট এবং ওমান থেকেও এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে।
×