সন্ত্রাসীদের দাপটে পর্যটন আকর্ষণ হারাচ্ছে সাজেক ভ্যালি
মোঃ খলিলুর রহমান মজুমদার সাজেক ভ্যালি থেকে ফিরে ॥ পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির ‘সাজেক ভ্যালি’ দেখার মতো একটি পর্যটক কেন্দ্র। সাজেক ভ্যালি পাহাড়ের উচ্চতা ১৮শ’ ফুট। একসময় সাজেকের কমলা ছিল সুস্বাদু ও বিখ্যাত। বাঘাইহাট সেনা ক্যাম্প থেকে সাজেক ভ্যালির দূরত্ব ৩৩ কিমি.। এ সড়ক পথটি সন্ত্রাসীদের জনপথ হিসেবে খ্যাত। সাজেক ভ্যালি পর্যটক কেন্দ্রে যাওয়া আসার পথে ৪টি সন্ত্রাসী দল পর্যটকদের চাঁদের গাড়ি হাইজ্যাক করে নিয়ে যায়। তারপর পর্যটকদের টাকা পয়সা ও অর্থ সম্পদ লুণ্ঠন। অর্থ সম্পদ না দিলে অপহরণ করে লুকিয়ে রাখে। কোন কোন সময় নিখোঁজ করে ফেলে। এই জন্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনী এ অঞ্চলকে ক্রাইম জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। টুরিস্টদের জন্য এ পথে চলাচল নিরাপদ নয়। এ কারণে সেনাবাহিনী ও বিজেবি পাহারা দিয়ে বাঘাইহাট থেকে সাজেক ভ্যালি পর্যটক কেন্দ্রে নিয়ে আসে এবং পরের দিন বাঘাই সেনা ক্যাম্পে পৌঁছে দেয়। স্থানীয় পাহাড়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাজেক ভ্যালি পর্যটক কেন্দ্রে প্রতিদিন শ’ শ’ মানুষ আসা যাওয়া করে। সাজেকে বড় বড় পাহাড় পর্বত বিদ্যমান। তাই সাজেককে টুরিস্টের জন্য আকর্ষণীয় পর্যটক কেন্দ্র গড়ে তুলতে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। সেনাবাহিনী পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ করে সাজেক ভ্যালিকে আকর্ষণীয় পর্যটক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলে। সাজেক ভ্যালি প্রায় ৩ কিমি. এলাকাজুড়ে। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ সাজেক ভ্যালি পর্যটক কেন্দ্রে উদ্বোধন করেন।
রাঙ্গামাটি জেলার রুইলুইপাড়া ইউনিয়নে অবস্থিত সাজেক ভ্যালি। এ অঞ্চলে ৪টি সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে। এ গ্রুপগুলোর নাম হচ্ছে ইউডিএফ, ইউএসএস, ইউপিডিএফ ও জেএসএস। এ ৪টি গ্রুপকে এলাকার ৪ গডফাদার নিয়ন্ত্রণ করে। এ পর্যটক কেন্দ্রে বিদেশী টুরিস্টদের আসা যাওয়ার সময় দুর্গম এলাকার সন্ত্রাসীরা অপরণ করে নিয়ে যায়। তারপর মুক্তিপণ হিসেবে চাঁদা দাবি করে। অনেককে গুম করে হত্যা করা হয়। এ কারণে বাঘাইহাট সেনা ক্যাম্প থেকে সাজেক ভ্যালি পর্যটক কেন্দ্র পর্যন্ত সেনাবাহিনী ও বিজেবির যৌথভাবে ৪ চেকপোস্ট রয়েছে। এছাড়াও পাহাড়ী বিভিন্ন সংগঠন কাজ করে। এ অঞ্চলে ত্রিপুরা (সনাতন) লুসাই (খ্রীস্টান), চাকমা (বৌদ্ধ), মুসলমান (ইসলাম ধর্ম) বসবাস করে। মুসলমানদের জন্য সাজেকে একটি জামে মসজিদ রয়েছে। তবে এ অঞ্চলে ঘনবসতি খুব কম। এ এলাকার অধিবাসীদের প্রধান খাদ্য সাপ, ব্যাঙ, ব্যাম্বো মুরগি ও পরোটা। এ এলাকার মানুষের জুম চাষ প্রধান পেশা। পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকাজুড়ে কমলার চাষ করা হয়। এক সময় কমলার ফলন ছিল খুব ভাল। এখন কমলার চাষ তেমন হয় না। ফলনও ভাল আসে না। এ অঞ্চলের প্রধান সমস্যা পানির সমস্যা। পানির সমস্যার কারণে ধান ও শাকসবজির চাষ খুব কম হয়। পানির সমস্যায় চাষাবাদ করা যায় না। স্থানীয়রা আরও জানায়, বড় বড় পাহাড় পর্বত ও পাথরের কারণে টিপটিউবওয়েল বাসানো যায় না। তাছাড়াও রয়েছে আর্থিক সমস্যা। আমরা এলাকার জনগণ আর্থিক সাহায্য ও ঋণ পেলে নিজেরা চাষাবাদ করে কিছুটা স্বাবলম্বী হতে পারব। সরকার আমাদের সহযোগিতা করলে আমরা স্বাস্থ্য সেবা, চিকিৎসা সেবা ও লেখাপড়া এগিয়ে যেতে পারব। পর্যটকদের রাত্রী যাপনের জন্য এখানে প্রায় ২৩০ থেকে ২৫০টি আবাসিক রিসোট বা হোটেল রয়েছে। আবাসিক হোটেলের প্রতিটি রুম প্রতি রাতের জন্য ১৫শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে। ডেঙ্গু জ্বর থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সেনাবাহিনীর উদ্যোগে মশারি ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে। এ এলাকায় বিজিবির উদ্যোগে একটি জুনিয়র স্কুল ও ১টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। যাতে এখানকার শিশুরা লেখাপড়া করতে পারে। সাজেকে একটি সরকারী কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। টুরিস্ট ও স্থানীয়দের মাসে একবার ফ্রি চিকিৎসা দেয়া হয়। এখানে সেনাবাহিনীর এক বেটেলিয়ন ও বিজিবির এক বিটেলিয়ন সারাক্ষণ কাজ করে। সাজেকের হেলিকপ্টার ওঠানামার জন্য ২টি হেলিপেড রয়েছে। হেলিপেডে সকালের সূর্য উদয়ের সময় ও বিকেলে সূর্যাস্তের সময় শ’ শ’ পর্যটক সমবেত হয়ে একে অপরের ছবি তোলে।