শাবি সংবাদদাতা ও স্টাফ রিপোর্টার সিলেট ॥ সিলেট নগরীকে বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম ডিজিটাল নগরী হিসেবে তৈরি করার ঘোষণা দিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সিলেটে আইসিটি পার্ক তৈরি করছে। ওসমানী বিমানবন্দরের কাছে আমরা একটি প্রাইভেট ইকোনমিক জোন তৈরি করছি। সিলেট শহরের যেকোন জায়গাতে সবাই বিনা পয়সাতে ওয়াইফাই পাবে। এভাবে উন্নয়নের মাধ্যমে সিলেট বাংলাদেশে প্রথম ‘ডিজিটাল সিলেট সিটি’ হবে।
বুধবার সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে ২০১৮-১৯ সেশনের ¯œাতকে ভর্তি হওয়া ‘এ’ ইউনিটের শিক্ষার্থীদের বরণ করতে গিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সকাল ৮টা থেকে নবীন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের পদচারণা শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, আগের থেকে বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। দেশে এখন আর মন্দাবস্থা নেই, দেশ অনেক অগ্রসর হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা এখন প্রতিষ্ঠিত। প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ এখন অনেক বেশি এগিয়ে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে মডেল ইকোনমি দাবি করে মোমেন বলেন, এসব সম্ভব হয়েছে আমাদের ডায়নামিক জনসাধারণের কারণে এবং আমাদের নেতৃত্বের কারণে। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে চাই যেখানে ধনী-গরিবের পার্থক্য থাকবে না এবং অন্ন, শিক্ষা ও বাসস্থানসহ অন্যান্য অধিকার নিশ্চিত করতে চাই।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ^বিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ^াস, ভর্তি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. শামসুল হক প্রধান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল গণি, অধ্যাপক ড. মোসাদ্দেক আহমেদ চৌধুরী, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদার, প্রক্টর ও ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ, রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেন। সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বিগত সময়ে শিক্ষা-গবেষণায় এ বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অর্জনকে তুলে ধরেন। বিশ^বিদ্যালয় নিয়ে আগামী দিনে তার পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা শিক্ষকদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা এবং লাইফ ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থা করেছি। পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীদেরও স্বাস্থ্যবীমা এবং লাইফ ইনস্যুরেন্সের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
ভিক্ষুকমুক্ত সিলেট ॥ এদিকে বুধবার সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, নতুন প্রজন্মের জন্য আমরা অধিকতর সুযোগ সৃষ্টি করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও এটি একটি অন্যতম অঙ্গীকার। তিনি বলেন, সিলেটে যে সকল প্রকল্প চলমান রয়েছে সেগুলোকেই আমি অগ্রাধিকার দেব। এর মধ্যে সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক সদর হাসপাতাল, সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমেদ হাসপাতালকে মা ও শিশু বিশেষায়িত হাসপাতালে উন্নীত, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে ৬ লেন করাসহ অন্যান্য প্রকল্পগুলোকে আমি অগ্রাধিকার দেব। সদ্য সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের কথা উল্লেখ করে বলেন আমার ভাইয়ের অঙ্গীকার ছিল আলোকিত সিলেট। আমি এই আলোকিতর সঙ্গে উন্নত ও সমৃদ্ধ সিলেটও গড়তে চাই।
আগামী ১০০ দিনের মধ্যে ডিজিটাল সিলেট ব্যবস্থা চালু করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, আমি চাই ভিক্ষুকমুক্ত সিলেট। সিলেটে অনেক ভিক্ষুক আছে। আগামীতে এসব ভিক্ষুকদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা পর্যটন শিল্পে অনেক দুর্বল। দেশের পর্যটন শিল্পের ক্ষেত্রে সিলেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই আমাদের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এর আগে সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন নগরীর সার্কিট হাউজে সিলেট বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। গত সরকারের মন্ত্রিসভায় থাকা যেসব মন্ত্রীদের এই সরকারে ঠাঁই হয়নি তারা সকলেই সফল ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। জেলা পরিষদ মিলনায়তনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমার বড়ভাই সাবেক অর্থমন্ত্রী বিগত ১০ বছরে সিলেটের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। একইরকমভাবে সারা বাংলাদেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলেও ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। যারা সরকারে ছিলেন তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘যারা মন্ত্রিসভা থেকে চলে গেছেন তারা কিন্তু সবাই সফল হয়েছেন। তারা সফল হয়েছেন বলেই দেশে এত উন্নয়ন হয়েছে। এটা আমাদের বিশ্বাস করতেই হবে। তাদের কারণেই আমরা সফলতা অর্জন করতে পেরেছি। তাই যারা মন্ত্রিসভা থেকে চলে গেছেন তাদেরকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তারা আমাদের দিক নির্দেশক হয়ে থাকবেন।’
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: