ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আজ খনন কাজ শুরুর চুক্তি সই

পায়রা বন্দরের ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ১৪ জানুয়ারি ২০১৯

 পায়রা বন্দরের ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অর্থায়ন জটিলতা কাটিয়ে পায়রা বন্দরের ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) এর আওতায় পায়রা ড্রেজিং কোম্পানি ৮ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। এজন্য আজ সোমবার বিকেলে খনন কাজ শুরুর চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে। বন্দরের চেয়ারম্যান কমোডর জাহাঙ্গির আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, ফাইন্যান্সিয়াল ক্লোজিং (অর্থায়ন নিশ্চিত) হওয়ার পর ড্রেজিং শুরু হবে। এজন্য আরও ৬ মাস সময় প্রয়োজন হবে বলে জানান তিনি। বন্দরের ড্রেজিং কাজের জন্য আড়াই বছরেরও বেশি সময় আগে বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি বেলজিয়াম ভিত্তিক কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে। এরপর ২০১৭ এর ডিসেম্বরে বেলজিয়ামের ওই কোম্পানির সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষ যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠন করে। কিন্তু অর্থায়ন জটিলতায় এত দিন খনন প্রকল্পটি ঝুলে ছিল। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে বন্দর কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার কারণেই দীর্ঘ আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে প্রকল্পটি ঝুলে ছিল। সরকারের ১০টি অগ্রাধিকার প্রকল্পের মধ্যে পায়রা বন্দর অন্যতম। এমন প্রকল্পে অর্থায়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আরও জোরালো ভূমিকা রাখা উচিত ছিল। বন্দর কর্তৃপক্ষ যা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। ইতোমধ্যে বন্দরের পাশে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ কাজ শেষের পথে। এই কেন্দ্রের কয়লা খালাসের জন্য বন্দর চ্যানেলে নাব্য থাকা দরকার থাকলেও তা নেই। এখন ড্রেজিং শুরু হলেও তা শেষ হতে প্রায় চার বছর সময় প্রয়োজন হবে। ক্যাপিটাল ড্রেজিংসহ প্রাথমিক রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং কাজটি ৩ টি ধাপে ৩৪ মাসে শেষ হবে। প্রথম ধাপে (১৪ মাস) চ্যানেলে পলি জমার সঠিক পরিমাণ নির্ধারণের জন্য ২টি ড্রেজার ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আনা হবে, ৫টি ড্রেজিং টেস্ট পিট খনন, জোয়ার ভাটা, সমুদ্রে স্রোতের দিক ও প্রবাহ মাত্রা, বাতাসের গতিবেগ ইত্যাদি নির্ণয়ের লক্ষ্যে সাগরে তিনটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র তৈরি ও পর্যবেক্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের প্রকৌশল সমীক্ষা করা হবে এবং চ্যানেল এলাইনমেন্ট ও চূড়ান্ত ডিজাইন করা হবে। উল্লেখিত সকল কার্যাদি সম্পন্ন ও পর্যবেক্ষণ করে ড্রেজিং এলাইনমেন্ট তৈরি, পলি জমার হার নির্ধারণসহ ক্যাপিটাল ও রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং এর সর্বোত্তম কৌশল নির্ধারণ করা হবে । দ্বিতীয় ধাপে ১১টি ড্রেজার ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আনা হবে। ভেতর ও বহির্চ্যানেলের মূল ক্যাপিটাল ড্রেজিং কাজ ১৪ মাসে শেষ করা হবে। এছাড়া এ সময়ে উপকূল কাছাকাছি সাগরে ভূমি উদ্ধারের জন্য স্টকপাইল প্রস্তুত, অফশোর রিক্লেমেশন-এর জন্য ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ-এর কাজ ও জাহাজ চলাচলের সহায়তার জন্য বাতিসহ বয়া স্থাপন করা হবে। তৃতীয় ধাপে প্রকল্প কোম্পানি কর্তৃক ছয় মাসের জন্য বন্দরের চ্যানেলে প্রাথমিক রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং করা হবে। ক্যাপিটাল ড্রেজিং চলাকালীন আনুমানিক ১১১ দশমিক ৩৯৯ মিলিয়ন ঘনমিটার ড্রেজিং বালু অপসারণসহ তিনটি ধাপে আনুমানিক ১৫২ দশমিক ৩৯৯ মিলিয়ন ঘনমিটার ড্রেজিং বালু অপসারণ করা হবে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নে সরকার পায়রা বন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। বন্দরের মূল অবকাঠামো নির্মাণের জন্য সাড়ে ছয় হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। বন্দরের পাশাপাশি এখানে বিদ্যুত কেন্দ্র, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল, তেল পরিশোধনাগার নির্মাণ এবং রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। এখানে বিদ্যুত কেন্দ্র এবং এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। তবে এসব প্রকল্প নির্মাণের জন্য বন্দরের চ্যানেল ড্রেজিং এবং রক্ষণাবেক্ষণ জরুরী বলে মনে করা হচ্ছে। একই সঙ্গে অবস্থানগত দিক দিয়ে পায়রা বন্দর ব্যবহার করে আমদানি রফতানি সুবিধা ভোগ করতে পারবে প্রতিবেশী দেশগুলো। প্রসঙ্গত ২০১৩ সালের ১৯ নবেম্বর পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় লালুয়া ইউনিয়নে দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর হিসেবে পায়রা বন্দরের ভিত্তি ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট পায়রা বন্দরের বহির্নোঙ্গর থেকে পণ্য খালাসের মাধ্যমে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
×