ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

দিল্লীতে সমাদৃত বাংলাদেশের দশ শিল্পীর প্রদর্শনী ‘ডিসপ্লেস’

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১ জানুয়ারি ২০১৯

দিল্লীতে সমাদৃত বাংলাদেশের দশ শিল্পীর প্রদর্শনী ‘ডিসপ্লেস’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ক্রমশই সমৃদ্ধ হচ্ছে এদেশের শিল্পকলার ভুবন। সেই সুবাদে দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও এখন সমাদৃত হচ্ছে এদেশের শিল্পীদের শিল্পকর্ম। আন্তর্জাতিক পরিসরে শিল্পরসিকদের নজর কাড়ছে বাংলাদেশের শিল্পীদের সৃজনশীলতা। সৃষ্টিশীলতায় ভিনদেশীদের কাছে প্রশংসিত হওয়া তেমনই এক শিল্পায়োজন ‘ডিসপ্লেস’। দেশের দশ শিল্পীর শিল্পসম্ভারে সজ্জিত প্রদর্শনীটি চলছে ভারতের নয়াদিল্লীর কোরিয়ান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে। পুরনো ঢাকার পরিবেশগত পরিবর্তন থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ্ব¦্যাপী চলমান অভিবাসন সংকট কিংবা অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের দৃশ্যকল্প মেলে ধরা হয়েছে প্রদর্শনীতে। রেখাচিত্র, স্থাপনাশিল্প, আলোকচিত্র ভিডিও ওয়ার্কসহ নানা মাধ্যমে এসব বিষয়কে উপস্থাপন করেছেন শিল্পীরা। সেই সঙ্গে প্রদর্শিত হচ্ছে একটি গবেষণা কেন্দ্রের শিল্পকর্ম। যৌথভাবে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বেঙ্গল আর্টস প্রোগ্রাম, কোরিয়ান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং ফিকা (দ্য ফাউন্ডেশন ফর ইন্ডিয়ান কনটেমপোরারি আর্ট)। এই প্রদর্শনীর দুই কিউরেটরের একজন তানজিম ওয়াহাব। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত এদেশের শিল্পীদের শিল্পকর্মে সাজানো প্রদর্শনীটি প্রথম দিন থেকেই সাড়া ফেলেছে সেখানকার শিল্পরসিকদের মাঝে। নানা বয়সী শিল্পীর বহুমত্রিক মাধ্যমে নিরীক্ষাধর্মী কাজগুলো উপভোগ করেছেন দর্শকরা। বিশেষ করে অনেকগুলো মাধ্যম এক আয়োজনে যুক্ত হওয়ায় বেড়েছে শিল্পায়োজনটির আকর্ষণ। এরই বাইরে আলাদাভাবে নজর কেড়েছে আর্কিটেকচার আর্কাইভ শীর্ষক প্রকল্পটি। নিরীক্ষাধর্মী রেখাচিত্রের মাধ্যমেত ক্রমাগত বদলে যাওয়া পুরান ঢাকার পরিবেশগত পরিবর্তনকে উপস্থাপন করেছেন নাজমুন নাহার কেয়া। ‘দ্য ভাইভ’ শীর্ষক মিনিয়েচার সিরিজ ড্রইংয়ে গ্রাফাইটের সঙ্গে সোনা ও রূপার পাতের সম্মিলন ঘটিয়েছেন এই শিল্পী। নানা নক্সায় আবৃত ঐতিহ্যের সাক্ষী ভবনগুলো ভেঙ্গে গড়ে ওঠা নতুন ভবনের পরিবেশগত পরিবর্তন ধরা দিয়েছে তার চিত্রকর্মে। আরেক শিল্পী তৈয়বা বেগম লিপি ভিডিও ওয়ার্কের আশ্রয়ে পূর্ব পুরুষের অস্তিত্বের সন্ধান করেছেন। তার গ্রামের বাড়ির শত বছরের পুরনো একটি কুয়ার সঙ্গে পারিবারিক কবরস্থানের সম্পৃক্ততা মেলে ধরে উপস্থাপন করেছেন ‘নো ওয়ান হোম’ শিরোনামের শিল্পকর্ম। একাধিক চ্যানেলের ভিডিওর সাহায্যে আসিফ মাহমুদের বিষয় হয়েছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন। রয়েছে বেঙ্গল ইনস্টিটিউট ফর আর্কিটেকচার, ল্যান্ডস্কেপস এ্যান্ড সেটেলমেন্টসের বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরের স্থাপত্যসংক্রান্ত পরিকল্পনার সীমাবদ্ধতা এবং এর থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে করা গবেষণালব্ধ কাজ। প্রদর্শনীতে গবেষণালব্ধ স্থানিক আর্কাইভ এবং শিল্পকর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশের ‘স্থান’ সংক্রান্ত বিষয়কে বোঝার পাশাপাশি এর ধারণাসংক্রান্ত পরিপ্রেক্ষিত বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। স্থানের সীমারেখা চিহ্নিত করার মাধ্যমে এর প্রচলিত ধারণাবিরোধী বক্তব্য হাজির করা হয়েছে প্রদর্শনীতে। জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন, প্রান্তিকীকরণ, অর্থনৈতিক কিংবা সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মতো স্থানীয় তথা বৈশ্বিক বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। তাছাড়া স্থান এবং সীমান্ত নিয়ে মালিকানা সংক্রান্ত রাজনীতি ছাড়াও অনুন্নত দেশের জনগণের বাধ্য হয়ে ইউটোপিয়াতে স্থানান্তরিত হওয়ার বিষয়টিও উঠে এসেছে শিল্পের আশ্রয়ে। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী দশ শিল্পী হলেন শহিদুল আলম, তৈয়বা বেগম লিপি, রনি আহমেদ, নাজমুন নাহার কেয়া, আফসানা শারমিন ঝুম্পা, শিমুল সাহা, জিহান করিম, সরকার প্রতীক, সৈয়দ আসিফ মাহমুদ ও শামসুল আরিফীন। প্রসঙ্গত, কোরিয়ান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সহায়তায় ভারতসহ সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশ থেকে জমা পড়া কিউরেটোরিয়াল প্রস্তাব থেকে ডিসপ্লেস নামক এই প্রদর্শনীকে অনুদানের জন্য নির্বাচন করা হয়। প্রদর্শনীর মাধ্যমে এই অঞ্চলের প্রেক্ষাপট উপস্থানের উদ্দেশে বাংলাদেশভিত্তিক কিউরেটর তানজিম ওয়াহাব এবং হেড্রিয়েন ডায়েজকে এই অনুদান প্রদান করা হয়। ফিকা এই অনুদান প্রদান সংক্রান্ত নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত ছিল। বেঙ্গল আর্টস প্রোগ্রাম প্রদর্শনীর লজিস্টিক, ম্যাট্রিয়াল এবং আর্টওয়ার্ক প্রোডাকশন সংক্রান্ত সহায়তা প্রদান করেছে। ৭ ডিসেম্বর শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি চলবে ২০১৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
×