ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

পরকীয়ায় সব হারিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে এক নারী

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৪ নভেম্বর ২০১৮

পরকীয়ায় সব হারিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে এক নারী

গাফফার খান চৌধুরী ॥ বাড়ি ভাড়ার সূত্র ধরে পরিচয়। পরিচয় থেকে পরকীয়া প্রেম। প্রেম থেকে অবৈধ সম্পর্ক। বাড়ির মালিকের সন্দেহ হলেই ভাই-বোন বা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে নতুন নতুন বাসায় বসবাস। প্রেমের টানে এভাবেই জলে ভাসা পদ্ম ফুলের মতো ভেসে ভেসে কেটে গেছে দীর্ঘ দুই বছর। অবৈধ মেলামেশার ছবিকে পুঁজি করে প্রেমিক ততদিনে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার মিলিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে অন্তত দশ লাখ টাকার মালামাল। এখানেই শেষ নয়, প্রেমিকের কথায় দুই দুই বার গর্ভে জন্মে নেয়া দুইটি ভ্রƒণকে হত্যা করেছে প্রেমিকা। বিদেশ ফেরত স্বামী আর তাকে গ্রহণ করেননি। এখন নিঃস্ব হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বিচারের আশায়। ঢাকার সিএমএম আদালতে এ সংক্রান্ত মামলা দায়ের হয়েছে। পিবিআইয়ের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রোর উপপরিদর্শক (এসআই) মোঃ আলমগীর ভূঁইয়া জনকণ্ঠকে জানান, তরিকুল ইসলাম ওরফে আরিফুল (২৫) নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিবি ফাহিমা (৩২) নামের এক নারী একটি প্রতারণার মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তে বেরিয়ে আসে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। তদন্তে জানা যায়, ঘটনাটির সূত্রপাত ২০১৬ সালের ১৫ জানুয়ারি। ফাহিমা নামের ওই নারী একটি ফ্ল্যাট খুঁজছিলেন। বাড়ি খোঁজার সূত্রধরে আবদুর রশিদ নামের এক দারোয়ানের সঙ্গে পরিচয় হয়। দারোয়ানের মধ্যস্থতায় শেষ পর্যন্ত ওই নারী মাসিক ১৩ হাজার টাকায় তিন রুমের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। বাসায় স্বামী ও দুই সন্তানের থাকার কথা। ওই বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে ওই নারী বসবাস শুরু করেন। দারোয়ানের মাধ্যমে আরিফুলের সঙ্গে পরিচয় হয় ওই নারীর। ঘটনার সময় ওই নারীর স্বামী বিদেশ ছিলেন। স্বামী না থাকায় নিজে দুই রুম রেখে এক রুম ব্যাচেলর হিসেবে ভাড়া দেন। যদিও বিষয়টি তিনি বাড়ির মালিক বা ব্যাচেলরদের জানাননি। আরিফুলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। ঘনিষ্ঠতা থেকে দু’জনের মধ্যে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে ওঠে। প্রেম থেকে তারা অবৈধ সর্ম্পকে জড়িয়ে যায়। ওই নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তারা স্বামী-স্ত্রীর মতো ওই বাসায় বসবাস করতে থাকে। অবৈধ সম্পর্কের নানা ছবিও ভিডিও করে রাখে আরিফুল। ওই নারীর স্বামী বিদেশ ছিলেন। তিনি বিদেশ থেকে নিয়মিত টাকা পাঠাতেন স্ত্রীর জন্য। স্ত্রীর জন্য পাঠানো টাকা নিয়মিত নিয়ে খরচ করতে থাকে আরিফুল। বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাওয়ার পর থেকে তারা কখনও নিজেরা স্বামী স্ত্রী আবার কখনও ভাই-বোন পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকে। ততদিনে আরিফুল ওই নারীর কাছ থেকে মাছ চাষের কথা বলে এক লাখ টাকা নিয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত আরিফ ওই নারীকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। নারীও রাজি হয়। বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ওই নারীকে দিয়েই দুই দুইবার তার গর্ভে জন্ম নেয়া দুইটি ভ্রƒণকে হত্যা করিয়েছে। আরিফ একদিন ওই নারীকে বলে, নতুন বাসা ভাড়া করা হয়েছে। নতুন বাসার ভাড়া ও ফার্নিচারসহ অন্য মালামাল কেনার জন্য ৬০ হাজার টাকা নেয় ওই নারীর কাছ থেকে। ফার্নিচার কিনে ঘরে সাজানো হয়েছে। এরপর আরিফুল ওই নারীকে স্বর্ণালঙ্কারগুলো গোপনে নতুন ভাড়া বাসায় রাখার কথা বলে। আরিফ বলে, আগে আগে নিয়ে না রাখলে শেষ দিকে নেয়ার সময় কেউ সন্দেহ করলে চোর ডাকাত পিছু নিতে পারে। এমন কথায় বিশ্বাস করে ওই নারী তার ৮ ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার আরিফুলকে দেয়। আরিফুল সেগুলো নিয়ে বাসায় রাখার কথা বলে বের হয়। এর পর থেকেই আরিফুলের আর হদিস নেই। পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ জনকণ্ঠকে জানান, বাড়ি ভাড়া দেয়ার সময় অবশ্যই ঢাকা মহানগর পুলিশের তরফ থেকে সরবরাহকৃত ভাড়াটিয়া তথ্য ফরম পূরণ করে নেয়া উচিত। ভাড়াটিয়া সম্পর্কে সঠিক তথ্য থাকলে এ ধরনের প্রতারণা হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। আবার অপরাধীদেরও শনাক্ত করা সহজ হয়। বাড়ি ভাড়া আইন যথাযথভাবে না মানলে এ ধরনের প্রতারণার ঘটনা এড়ানো প্রায় অসম্ভব। প্রতারকদেরও আইনের আওতায় আনা কঠিন।
×