ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাটিং ব্যর্থতায় লজ্জার হার

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৭ নভেম্বর ২০১৮

ব্যাটিং ব্যর্থতায় লজ্জার হার

মিথুন আশরাফ ॥ অসম্ভবকে সম্ভব করা গেল না। সম্ভব করা দূরে থাক, বাংলাদেশতো সেই সম্ভাবনার ধারে কাছেও যেতে পারল না। ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় এমনই হাল হলো, লজ্জা মিলল। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ১৫১ রানের বড় ব্যবধানে হারের লজ্জা পেল বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়ে প্রথম ইনিংসে ২৮২ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১৮১ রান করে। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ১৪৩ রানে গুটিয়ে গেলে টার্গেট দাঁড় হয় ৩২১ রানের। এই বিশাল টার্গেটে খেলতে নেমে ১৬৯ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। সাড়ে তিনদিনেই সিলেট টেস্ট শেষ হয়। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের অভিষেক টেস্টে হার হয় বাংলাদেশের। এই টেস্টটি হারায় দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে পিছিয়ে পড়ল বাংলাদেশ। ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ল। সিরিজে সমতা আনতে হলে, ড্র করতে হলে ১১ নবেম্বর মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে জিততেই হবে বাংলাদেশকে। হারলেই ২-০ ব্যবধানে সিরিজ হার হয়ে যাবে। ম্যাচটিতে ড্র করলেও সিরিজ হার হবে বাংলাদেশের। যে জিম্বাবুইয়ে দলটি গত ১৭ বছর ধরে বিদেশের মাটিতে কোন টেস্ট জিততে পারেনি, সেই দলটির বিপক্ষেই হারল বাংলাদেশ। বিদেশের মাটিতে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে ৩টি ম্যাচ জিততে পেরেছে জিম্বাবুইয়ে। দুটিই বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় রয়েছে। ১৯৯৮ সালে পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবার বিদেশের মাটিতে টেস্ট জিতেছিল জিম্বাবুইয়ে। এরপর ২০০১ সালে বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে হারিয়েছিল। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে বিদেশের মাটিতে জিম্বাবুইয়ে যে টেস্ট জিততে পারছিল না, সেই খরা মঙ্গলবার বাংলাদেশকে হারিয়ে কাটাল। বাংলাদেশ দলও কি লজ্জার মধ্যে পড়ল। শুধু কী তাই, গত পাঁচ বছর ধরে জিম্বাবুইয়ে কোন টেস্টই জিততে পারছিল না। ২০১৩ সালে নিজ দেশে পাকিস্তানকে সর্বশেষ হারিয়েছিল জিম্বাবুইয়ে। সেই খরাও বাংলাদেশকে হারিয়ে কাটাল জিম্বাবুইয়ে। বাংলাদেশের মাটিতে চার বছর পর টেস্ট খেলতে নেমে জয় তুলে নিল জিম্বাবুইয়ে। ২০১৪ সালে দুই দলের মধ্যকার সর্বশেষ টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল জিম্বাবুইয়ে। এবার বাংলাদেশকেই উল্টো সেই পথের দিকে ঠেলে দিয়েছে। কি করুণ অবস্থা বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের। এমন করুণ পরিস্থিতি এর আগে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে একবারই হয়েছিল। ২০১৩ সালে হারারেতে দুই ইনিংসেই ২০০ রানের (১৩৪ ও ১৪৭) নিচে করেছিল বাংলাদেশ। এবারও সেই পুরনো চিত্রই নতুন করে ফুটে উঠল। যে দলটি দেশের মাটিতে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল। টেস্টে দেশের মাটিতে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে হারিয়েছে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ড্র করেছে। সেই দলটি ওয়ানডেতে জিম্বাবুইয়েকে উড়িয়ে দেয়। অথচ টেস্টে এসে জিম্বাবুইয়ের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে। টেস্টে বাংলাদেশের অবস্থা এ বছর খুবই কাহিল। এ বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি টেস্টে অসাধারণ খেলে। এরপর থেকে যে বিপর্যয় শুরু হয়, টানা চার টেস্টের আট ইনিংসে ২০০ ছড়ানো কোন দলীয় ইনিংস নেই। আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৪৩ রানে অলআউট হওয়ার লজ্জাও মিশে আছে। কি দুর্দশায় আছেন ব্যাটসম্যানরা। এত বড় তারকা ব্যাটসম্যান সব দলে। অথচ নেই নৈপুণ্য। টেস্টে ব্যাটসম্যানদের এতটাই বেহাল অবস্থা। আশা ছিল, যেহেতু প্রতিপক্ষ জিম্বাবুইয়ে; ওয়ানডেতেও যাদের তুলোধুনো করা গেছে, তাদের বিপক্ষে ভাল করবে বাংলাদেশ দল। কিন্তু সাকিব, তামিমহীন দলতো মাথা তুলেই দাঁড়াতে পারল না। বাংলাদেশকে পাত্তাই দিল না জিম্বাবুইয়ে। বাংলাদেশ বোলাররা যা করতে পারেন, করে দিয়েছেন। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা কিছুই করতে পারলেন না। দুই ইনিংসে একজন ব্যাটসম্যানও হাফসেঞ্চুরি করতে পারেননি। দুই ইনিংস মিলিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে উদ্বোধনী জুটিই শুধু ৫০ রানের (৫৬) জুটি গড়তে পেরেছে। ব্যাটিংয়ে মূল ভরসা ছিল লিটন, ইমরুল, মুমিনুল, মাহমুদুল্লাহ, মুশফিকের ওপর। সবাই একযোগে ব্যর্থ হয়েছেন। প্রথম ইনিংসে অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা আরিফুল হক অপরাজিত ৪১ রান করে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর গড়েন। দ্বিতীয় ইনিংসেও আরিফুল ৩৮ রান করেন। এ ইনিংসে ইমরুল হাফসেঞ্চুরির (৪৩) কাছে যেতে পারেন। তৃতীয়দিন বিশাল টার্গেটে খেলতে নেমে ২৬ রান করতেই দিন শেষ হয়। দুইদিনে জিততে ১০ উইকেটে ২৯৫ রান দরকার ছিল। চতুর্থদিন অর্ধেকদিনও যায়নি। ১০ ব্যাটসম্যান মিলে ১৪৩ রান যোগ করতে পারেন। ১১১ রানে ৫ উইকেট পড়ার পর শেষ ৫ উইকেটে তো ৫৮ রানেই খতম হয়ে যায়। ব্যাটসম্যানরা আসা-যাওয়ার মিছিলেই নামেন। ৩০০ রান বা তারবেশি রান যখনই টার্গেট পড়েছে, বাংলাদেশ জিততে পারেনি। জিততে হলে অসম্ভবকেই সম্ভব করতে হতো। নিজেদের ইতিহাস গড়তে হতো। রেকর্ড গড়ে জিততে হতো। হারের সম্ভাবনাই উজ্জ্বল ছিল। তাই বলে এমন হার হবে। ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় লজ্জার হার হবে।
×