ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফাঁসি দেখে যেতে চান গ্রেনেড হামলায় নিহত মামুনের বাবা-মা

দ্রুত রায় কার্যকর দাবি

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ১১ অক্টোবর ২০১৮

দ্রুত রায় কার্যকর দাবি

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা / নিজস্ব সংবাদদাতা, পটুয়াখালী ॥ মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও অবিলম্বে ওই রায় কার্যকরের দাবি করেছেন গ্রেনেড হামলায় নিহত মামুনের বাবা মোতালেব মৃধা ও মা মোরশেদা বেগম। নিহত মামুন মৃধার বাড়ি পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার আলীপুরা ইউনিয়নের পশ্চিম আলীপুরা গ্রামে। ২০০৪ সালে একুশ বছরের যুবক মামুন মৃধা ঢাকার কবি নজরুল কলেজে অনার্সের ছাত্র ছিলেন। বাবার সঙ্গে পুরান ঢাকার একটি মেসে থাকতেন। একুশে আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দিয়েছিলেন। ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় অন্যদের সঙ্গে মামুন মৃধাও মারা যান। একদিন পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সহায়তায় বাবা মোতালেব মৃধা একমাত্র ছেলে মামুনের লাশ নিয়ে বাড়ি ফেরেন এবং বাড়ির সামনে রাস্তার পাশে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করেন। বুধবার ওই গ্রেনেড হামলার রায় শোনার পরই বাবা মোতালেব মৃধা ছেলের আত্মার শান্তি কামনায় কবরের সামনে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করেন। এ সময় মা মোরশেদা বেগম, বোন রুনা ও রুবিনাসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। রায় শুনে এলাকাবাসীও মোতালেব মৃধার বাড়ি ছুটে আসেন এবং মামুনের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মোতালেব মৃধা (৬২) বলেন, দীর্ঘ ১৪ বছর অপেক্ষা করেছি এ দিনটির জন্য। ছেলে হত্যার বিচার পাব, এ আশা নিয়ে প্রতিটি মুহূর্ত পার করেছি। কতটা দুঃসহ অবস্থায় দিন কাটিয়েছি, তা ভাষায় বলে বোঝাতে পারব না। আজ আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্থ ও দীর্ঘ জীবনের জন্য মোনাজাত করছি। তিনি না হলে হয়ত আর ছেলে হত্যার বিচার পেতাম না। তিনি আরও বলেন, মামুন ছিল আমার একমাত্র ছেলে। ওর ওপর অনেক ভরসা ছিল। একদিন সংসারের হাল ধরবে। দুঃখ ঘোচাবে। এ আশায় অনেক কষ্টে লেখাপড়া করিয়েছি। কিন্তু গ্রেনেড হামলাকারীরা আমার একমাত্র নয়নের মণিকে হত্যা করে সব স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে। তাই রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশের পাশাপাশি অবিলম্বে রায় কার্যকরের দাবি জানাচ্ছি। যেসব খুনী পালিয়ে আছে, অবিলম্বে তাদের খুঁজে আনারও দাবি করছি। এছাড়া গ্রেনেড হামলায় যারা নেপথ্যে মদদ দিয়েছে, খুনীদের পালাতে সাহায্য করেছে, তাদেরও শাস্তি দাবি করছি। রায় প্রসঙ্গে মামুনের অসুস্থ মা মোরশেদা বেগম বলেন, একযুগের বেশি সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও যখন ছেলে হত্যার বিচার হয়নি তখন পরিবারের সবাই হতাশায় ছিলেন। রায় হবে কি-না, এ নিয়ে দোটানায় ছিলেন। কিন্তু সব আশঙ্কা উড়িয়ে এখন রায় হয়েছে। যারা আমার বুকের ধন মামুনকে হত্যা করছে, এখন সে রায় দ্রুত র্কাযকর করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হলে তবেই আমার ছেলের আত্মা শান্তি পাবে। বোন রুনা এবং রুবিনাও তাদের ভাইয়ের খুনীদের অবিলম্বে রায় কার্যকরের দাবি করেছে। একুশে আগস্ট অনেকটা চোখের সামনে মামুন মৃধার মৃত্যুর ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মোতালেব মৃধা জানান, একমাত্র ছেলে মামুন মৃধাকে নিয়ে তিনি ঢাকায় থাকতেন। ঢাকার একটি স মিলে শ্রমিকের কাজ করতেন। বাবা-ছেলে একই মেসে থাকতেন। মামুন মৃধা কবি নজরুল সরকারী কলেজের ছাত্র ছিলেন। মামুন মৃধা মনেপ্রাণে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে ভালবাসতেন। সবসময় পত্রপত্রিকা পড়তেন। ঢাকার যেখানেই শেখ হাসিনার জনসভা কিংবা সমাবেশ হতো সেখানেই মামুন মৃধা প্রাণের টানে ছুটে যেতেন। শেখ হাসিনাকে এক নজর না দেখে কিছুতেই মেসে ফিরতেন না। ওইদিন দুপুরে বাবা-ছেলে একত্রে ভাত খেয়েছেন। সেটাই ছিল শেষ দেখা। বাবা মোতালেব মৃধা চলে যান ‘স’ মিলে আর মামুন ছুটে যান বঙ্গবন্ধু এভিনিউর শেখ হাসিনার সমাবেশস্থলে। সন্ধ্যায় তিনি লোকমুখে শুনে ছুটে যান ঘটনাস্থলে। কিন্তু পুলিশের টিয়ারশেল আর লাঠিচার্জে ঘটনাস্থলে যেতে পারেননি। পরে রাতে ঢাকা মেডিক্যালে ছেলের লাশ শনাক্ত করেন। আখম জাহাঙ্গীর হোসাইন এমপির চেষ্টায় তিনি ছেলের লাশ নিয়ে বাড়ি ফেরেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সহায়তায় বাড়ির পুকুরপারে ছেলের দাফন করেন। মোতালেব মৃধা জানান, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগে যেমন তাদের পাশে ছিলেন। নিয়মিত খোঁজখবর নিতেন। এখনও সেভাবে খোঁজখবর নেন। শেখ হাসিনার একান্ত অনুগ্রহে ভাল আছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেশি কিছু চাওয়ার নেই। মাদারীপুরে নিহতের পরিবারে স্বস্তি নিজস্ব সংবাদদাতা মাদারীপুর থেকে জানান, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ-এ অনুষ্ঠিত শেখ হাসিনার সমাবেশে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে নিহত ও আহতদের পরিবারের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানিয়েছে এসব পরিবার। জানা গেছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় মাদারীপুরের ৪ জন নিহত ও ৩ জন আহত হয়। নিহতরা হলেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের চানপট্টি গ্রামের যুবলীগ নেতা নিহত লিটন মুন্সির, গ্রেনেড হামলায় অন্যদের মধ্যে নিহত রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের মহিষমারি গ্রামের সুফিয়া বেগম, কালকিনি উপজেলার কয়ারিয়া ইউনিয়নের রামারপুল গ্রামের শ্রমিক লীগ নেতা নাসিরউদ্দিন সরদার এবং ক্রোকিরচর গ্রামের যুবলীগ নেতা মোস্তাক আহম্মেদ ওরফে কালা সেন্টু। আহতরা হলেন কালকিনি পৌরসভার বিভাগদী গ্রামের হালান হাওলাদার, ঝাউতলা গ্রামের সাইদুল হক সরদার ও কৃষ্ণনগর গ্রামের কবির হোসেন। গ্রেনেড হামলায় নিহত নাসিরউদ্দিন সরদারের ছেলে মোঃ মাহাবুব হোসেন সরদার বলেন, ‘ঘটনার ১৪ বছর পর রায়ে আমরা মোটামুটি সস্তুষ্ট। এ বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা মূল পরিকল্পনাকারীকে ফাঁসি দিলে বেশি সন্তুষ্ট হতে পারতাম।’ নিহত লিটন মুন্সির একমাত্র মেয়ে নুসরাত জাহান মিথিলা বলেন, ‘আমার বাবার হত্যাকারীদের শাস্তি হয়েছে এতে আমরা সন্তুষ্ট। বাবাসহ সকলের আত্মা কিছুটা শান্তি পাবে।’ হামলায় আহত হালান হাওলাদার বলেন, ‘আমরা রায়ে পুরোপুরি খুশি হতে পারিনি। কারণ হামলার মূল পরিকল্পনাকারীর ফাঁসি হয়নি। রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানাই।’ রায়ের পরে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হোসেন অনিকের নেতৃত্বে মাদারীপুর পুরান বাজারে জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আনন্দ-উল্লাস ও মিষ্টি বিরতণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম বুধবার রায়ের পরে মাদারীপুরের নিজ বাসায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ রায়ে আমি একজন ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে বলতে চাই, হত্যাকা-ের মূল পরিকল্পনাকারী যারা হাওয়া ভবনে বসে পরিকল্পনা করেছিল তাদের ফাঁসির আদেশ কাম্য ছিল। আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে উচ্চ আদালতে আপীল করব।’
×