ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

৫২৫২ জন ভেরিফাইড ॥ ৫০ সন্ত্রাসীকে ফেরত চায় মিয়ানমার

রোহিঙ্গা ইস্যুর কার্যকর সমাধান বিশ্বশক্তির জন্য এসিড টেস্ট

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

রোহিঙ্গা ইস্যুর কার্যকর সমাধান বিশ্বশক্তির জন্য এসিড টেস্ট

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ জাতিসংঘের দিকে চেয়ে আছে বাংলাদেশে আশ্রিত এবং মিয়ানমারে বসবাসরত রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা। জাতিসংঘের এবারের অধিবেশনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কার্যকর সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়নে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিবাসী, আশ্রিত, রিফিউজি, নাগরিকত্ব লাভকারী রোহিঙ্গারাও এ নিয়ে ব্যাপকভাবে তৎপর। অনুরূপভাবে বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ইস্যুতে বিশ্ব বিবেকের কড়া পদক্ষেপ চাইবে। এই প্রক্রিয়ায় ইতোমধ্যে যুক্ত হয়েছে খোদ জাতিসংঘ, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা। সঙ্গত কারণে রাখাইনে সেনা বর্বরতা, গণহত্যা, গ্যাং রেপ, জ্বালাও-পোড়াও, গণকবরের সন্ধান এবং রোহিঙ্গাদের দলে দলে বিতাড়িত হতে বাধ্য করার বিপরীতে একটি সন্তোষজনক সমাধান প্রশ্নে ইস্যুটি বিশ্ব অভিভাবকের সংস্থার এবারের ৭৩তম অধিবেশনের কাছে একটি এসিড টেস্ট হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এদিকে, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বার্তা সংস্থার বরাতে জানা গেছে, এই অবস্থায় মিয়ানমারের বিতর্কিত সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং ঘোষণা দিয়েছেন, তার দেশের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ করার কোন অধিকার জাতিসংঘের নেই। রাখাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতনকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে মিয়ানমার সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক বিচারের মুখোমুখি করার জন্য জাতিসংঘের আহ্বান জানানোর বেশ কিছু সময় পর জেনারেল মিন অং হ্লাইং এ বক্তব্য দিলেন। গত রবিবার সেনাপ্রধানের বক্তব্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সে দেশের সেনা পরিচালিত দৈনিক মিয়াওডি। এর আগে গত ২৭ আগস্ট জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে মিয়ানমারে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত হয়েছে বলে রিপোর্ট প্রকাশের পরদিনই নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি সদস্য রাষ্ট্র মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্তাদের আন্তর্জাতিক বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানায়। এ আহ্বানের দুদিন পর মিয়ানমার সরকার জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে বলে ঘোষণা দেয়। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রিত ১২ লক্ষাধিক (নিবন্ধিত ১১ লাখ ১৮ হাজার ৬৭৫) রোহিঙ্গার মাঝেও সারা বিশ্ব মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং তাদের স্বদেশ প্রত্যাবাসন ও সেদেশে নিরাপদ অবস্থানে কী ভূমিকা গ্রহণ করছে তা নিয়ে তারা অধীর আগ্রহ রয়েছে। এই অধীর আগ্রহ এপারে আশ্রিত, ওপারে এখনও বসবাসরত এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সকল রোহিঙ্গাদের মাঝে প্রোথিত হয়ে আছে। গত বছরের ২৫ আগস্ট রাতের পর সেনা বর্বরতার সচিত্র দৃশ্য ও প্রতিবেদন বিশ্ববাসীর কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছে সত্য কিন্তু মিয়ানমার পক্ষ সত্যকে ঢেকে রাখার প্রাণান্তকর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। নোবেলবিজয়ী সেদেশের নেত্রী আউং সান সুচিও সেনা সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার যেন কোন জো নেই। সেনা মিথ্যাচারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিনিও যে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন তা কেবলই তার প্রতি নিন্দার ঝুড়িকে পূর্ণ করেই চলেছে। লাখে লাখে রোহিঙ্গা এদেশে পালিয়ে আসার পর বাংলাদেশের কোন কোন আহ্বানে মিয়ানমার পক্ষ এদের প্রত্যাবাসনে একটি সমঝোতা চুক্তিও করেছিল। তারিখও নির্ধারিত হয়েছে প্রত্যাবাসনে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে এখন প্রমাণিত যে সবই ছিল একটি চালবাজি। চালবাজির যে নাটক মিয়ানমার পক্ষ এখন মঞ্চস্থ করেই যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের তালিকা চেয়েছে। সরকার দুদফায় ৮ হাজার ৩২ জনের একটি তালিকাও প্রদান করে। সর্বশেষ বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে, এই তালিকায় ৫০ সন্দেহজনক সন্ত্রাসী রয়েছে। ওই ৫০ সন্ত্রাসীকে অবিলম্বে মিয়ানমারের হাতে তুলে দিতে হবে। অনলাইন মিয়ানমার টাইমস এই খবর দিয়ে জানিয়েছে, সেদেশের সরকার ৮ হাজার ৩২ অনুপ্রবেশকারীর মধ্যে ৫ হাজার ২৫২ জনের নাম ঠিকানা যাচাই-বাছাই করেছে। এতে ৪ হাজারের নাম নিশ্চিত হয়েছে যে তারা মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বসবাস করত। অবশিষ্টদের মিয়ানমারে বসবাসের কোন রেকর্ড তারা খুঁজে পায়নি। সঙ্গত কারণে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার বিশেষজ্ঞদের মতে, যেখানে ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা (নতুন পুরনো মিলিয়ে) বাংলাদেশে আশ্রিত এবং সেখান থেকে মাত্র ৮ হাজার ৩২ জনের প্রেরিত একটি তালিকা থেকে ৫ হাজার ২৫২ জনের পরিচয় ভেরিফাই করে সেখান থেকে ৪ হাজারের নাম সঠিক বলে নিশ্চিত করেছে সেক্ষেত্রে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার নাম প্রেরণ, যাচাই-বাছাই কার্যক্রম, নিশ্চিতকরণ এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পাদন নিয়ে কত দীর্ঘ সময় লেগে যেতে পারে তা অনুমান করাও দুঃসাধ্য। বিশেষজ্ঞ সূত্রগুলো জানিয়েছে, মিয়ানমারকে চাপের মুখে নত করা না গেলে তারা কখনও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে না। এছাড়া আগ্রহীরা সেদেশে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া ছাড়া নিজ দেশে ফিরে যাবেও না। পাশাপাশি জোরপূর্বক প্রত্যাবাসন না করার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের চাপও রয়েছে বাংলাদেশের ওপর। ওপারের সূত্রগুলো জানিয়েছে, মিয়ানমার পক্ষ চায় না বিতাড়িত রোহিঙ্গারা নিজ নিজ এলাকায় ফিরে আসুক। আর এখনও যেসব রোহিঙ্গা সেদেশে রয়েছে তারাও যাতে সে দেশ ছেড়ে যায় এমন প্রক্রিয়া এখনও অব্যাহত রেখেছে।
×