স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ অপরিচ্ছন্ন ড্রেনেজ, নিয়মিত বর্জ্য অপসারণ না করা, সড়ক দখল করে নির্মাণ সামগ্রী রাখা, সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা, প্রধান সড়কগুলোতে মাঝারি যানবাহনের স্ট্যান্ড, অধিকাংশ সড়কে দিনভর যানজট, জন চলাচলের ফুটপাথ দখলসহ নানাবিধ সমস্যায় বগুড়া নগরীর মানুষের ভোগান্তি কমছে না। কেউ হেঁটে পথ চলতে গেলে পদে পদে হোঁচট খেতে হয়। রাস্তা পারাপার দুরূহ হয়ে পড়ে। কখনও দুর্ঘটনা ঘটে। রয়েছে ফিডার সড়কগুলোর দুরবস্থা। অনেক স্থানে সড়ক বাতি নেই। বলাবলি হয় বাসযোগ্য আর থাকল না।
দেশের অতি পুরাতন দেড়শ’ বছরের বেশি সময়ের বগুড়া পৌর সভাকে সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তরের দাবি উঠেছে। নাগরিক সুবিধার বেহাল অবস্থার মধ্যেই ২০০৪ সালে ১৪ দশমিক ৭৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বগুড়া পৌরসভাকে রাতারাতি ৬৯ দশমিক ৫৬ বর্গকিলোমিটারে সম্প্রসারিত হয়। ১২টি ওয়ার্ড পরিণত হয় ২১ ওয়ার্ডে। দুই ইউনিয়ন পৌরসভার সঙ্গে একীভূত হয়। কয়েকটি জায়গায় ইটভাঁটি পৌর এলাকার মধ্যে পড়ে। দেড় লাখ জনসংখ্যার পৌর এলাকা হয়ে যায় প্রায় ৬ লাখ জনসংখ্যার। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বাস ৭ হাজার ৮শ’জনের।
বগুড়া পৌর এলাকার সমস্যাগুলো দূরীভূত করতে এক বছর আগে ১৪টি সমস্যা চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ ও পৌরসভা। সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে চিহ্নিত সমস্যাগুলো দিনে দিনে আরও বেড়েছে। ঐতিহ্যবাহী এ্যাডওয়ার্ড পার্কের অবস্থান গোহাইল রোডের ধারে। পার্ক পর্যন্ত বলা হয় পার্ক রোড। পার্কের দুই গেটের আশেপাশে রাস্তার ওপর বসেছে সিএনজিচালিত অটোরিক্সার স্ট্যান্ড। যা পৌরসভা অনুমোদিত নয়। পৌরসভা যে মার্কেট করে দিয়েছে সেই দোকানঘরের সামনের প্যাসেজেও সামগ্রী রেখে পথচারি চলাচলে বিঘœ ঘটানো হয়। শেরপুর রোডের ধারে শেরপুরগামী মিনি বাসস্ট্যান্ড, তার অল্প দূরে সিএনজিচালিত অটোরিক্সা ও ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক (অটো) স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। যার কোন অনুমতি নেই। রেলস্টেশনের কাছে হকার্স মার্কেট ও প্রেসক্লাবের সামনে সিএনজিচালিত অটোরিক্সার স্ট্যান্ড দিনে ও রাতে পথ চলতে প্রতিনিয়ত বিঘœ ঘটাচ্ছে। কবি নজরুল ইসলাম সড়কের দুই ধারে সন্ধ্যার পর মোটরসাইকেলের অঘোষিত পার্কিং স্পটে পরিণত হয়েছে। রেলগেট বন্ধ হলে যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিস ও এ্যাম্বুলেন্সয়ে আটকে থাকে অনেকটা সময়। কাঁঠালতলা এলাকা থেকে ফতেহ আলী ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তার ওপর বসে ভাসমান দোকানপাট। মোড়ের ওপর একটি বহুতল রেস্তরাঁয় রাস্তার ধারে এলপিজির বড় সিলিন্ডার গ্যাস ও চুলায় রান্না করা হয়। বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কার থাকার পর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। করতোয়া সেতুর অপর প্রান্তে চেলোপাড়া এলাকায় গাবতলি ও চন্দনবাইশা রোডের দুই ধারে গড়ে উঠেছে সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ইজিবাইকের স্ট্যান্ড।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা এতটাই বেহাল যে সামান্য বৃষ্টিতেই নিচু অঞ্চল জলাবদ্ধতায় পরিণত হয়। প্রধান সড়ক জলমগ্ন হয়ে পড়ে। মাঝেমধ্যেই পৌর এলাকায় বর্জ্য অপসারণ না করায় পথের ধারে স্তূপ হয়ে থাকে। সাতমাথা কৃষ্ণচূড়া চত্বর ও নবাববাড়ি সড়কের ধারে ফুচকা চটপটির বড় দোকানগুলোর সঙ্গে ক্রেতাদের বসার ব্যবস্থা করে দিয়ে রাতের অনেকটা সময় রাস্তা সঙ্কুচিত হয়ে থাকে। শেরপুর রোডরে ইয়াকুবিয়ার মোড় থেকে কালিবাড়ি পর্যন্ত শহীদ আব্দুল জব্বার সড়কের দুই ধারে শোরুম, কাস্টমার কেয়ার সেন্টার, শপিংমল, ফাস্ট ফুডের দোকানের পাশাপাশি যেখানে সেখানে কোচিং সেন্টারগুলো এমনভাবে স্থাপিত দিন ও রাতের অনেকটা সময় জ্যাম লেগেই ধাকে। প্রধান সড়কের ওপর ভারি যানবাহনের মালামাল ওঠানামা, প্রধান সড়ক ও ফিডার রোডগুলোর ওপর নির্মাণ সামগ্রী রাখা ও নির্মাণ কাজ করায় যান চলাচলে বিঘœ ঘটে।
এদিকে বগুড়ায় বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করে কখনও নক্সার পাল্টিয়ে নির্মিত হচ্ছে বহুতল ভবন। এত বড় নগরীতে কার পার্কিংয়ের নির্ধারিত কোন স্থান নেই। কেন্দ্রস্থল সাতমাথায় জিলা স্কুলের ধারে স্বল্প পরিসরের কার পার্কিং আছে। যানবাহন বেড়ে যাওয়ায় এই পার্কিং স্পট কুলাচ্ছে না।
সমস্যা খুঁজে বের করার পর সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেয়া হয়। তারপর অবস্থা যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে যায়।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: