ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মিটার রিডারকে আটকে নির্যাতন

নাটোরে ভৌতিক বিদ্যুত বিল

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

নাটোরে ভৌতিক বিদ্যুত বিল

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর, ৪ সেপ্টেম্বর ॥ নাটোরে ভৌতিক বিদ্যুত বিলের কবলে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নাটোর পল্লী বিদ্যুত সমিতি-১’র গ্রাহকরা। গ্রাহকদের ব্যয়কৃত ইউনিট ও তার বিলের পরিবর্তে পল্লী বিদ্যুত সমিতি তৈরিকৃত বিলের তারতম্যে ক্ষিপ্ত ও অতিষ্ঠ গ্রাহকরা। এমন অবস্থায় মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে নাটোর সদর উপজেলার শংকরভাগ বাজারে গ্রাহকদের মাঝে বিদ্যুত বিলের কপি সরবরাহ করতে গেলে হাফিজুর রহমান নামে সমিতির এক মিটার রিডারকে ভৌতিক বিলের কারণ জানতে চেয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটকে রাখে গ্রাহকরা। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। এদিকে নাটোর পল্লী বিদ্যুত সমিতির প্রস্তুতকৃত ভৌতিক বিদ্যুত বিলের সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেছেন সংশ্লিষ্ট গ্রাহকরা। ভৌতিক বিলের রহস্য উদ্ঘাটন ও তার সমাধান করা না হলে বিল পরিশোধ করবেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গ্রাহকরা। তবে এই ধরনের সমস্যা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়েছেন নাটোর পল্লী বিদ্যুত সমিতির জিএম সোহরাব হোসেন। মিটার রিডার হাফিজুর রহমান জানান, বিদ্যুত অফিস বছরে একবার গ্রাহকদের ৫ থেকে ২০ ইউনিট বেশি লিপিবদ্ধ করার জন্য নির্দেশ দেয়। আমি সরেজমিনে গ্রাহকদের প্রকৃত ইউনিট ও বিল লিখে অফিসে জমা দিয়েছি। পরে অফিস যদি গ্রাহকদের ইউনিট ও বিলে তারতম্য তৈরি করে বেশি বিল প্রস্তুত করে তবে আমি কি করতে পারি? আমাকে আটকে রাখার পরে অফিসে অবহিত করলেও সেখান থেকে কেউ আমার মতো তুচ্ছ কর্মচারীকে বাঁচাতে আসেনি। নাটোর সদর থানার উপ-পরিদর্শক আকরামুল ইসলাম ও স্থানীয় গ্রাহকরা জানান, মঙ্গলবার সকালে নাটোর সদর উপজেলার শংকরভাগ বাজারে গ্রাহকদের মাঝে মিটার রিডার হাফিজুর রহমান বিদ্যুত বিলের কপি সরবরাহ করতে যান। এ সময় নাটোর পল্লী বিদ্যুত সমিতি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত বিগত মাসের ভৌতিক বিদ্যুত বিলের কপিসহ হাজির হন স্থানীয় গ্রাহকরা। পরে হাফিজুর রহমানকে ভৌতিক বিদ্যুত বিলের কারণ জানতে চেয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটকে রাখেন বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকার পরিবেশ শান্ত করে তাকে উদ্ধার করে। গ্রাহকরা জানান, হাফিজুর রহামান এর আগের মাসে এসে মিটার রিড করে গেছেন। কিন্তু তার হিসাব আর সমিতির বিলের হিসাবে গড়মিল রয়েছে। বিলের এমন তারতম্যে সকল গ্রাহকই কমবেশি ভুক্তভোগী। বিদ্যুত বিলে তারতম্যের বিষয়টি স্বীকার করে নাটোর পল্লী বিদ্যুত সমিতির জিএম সোহরাব হোসেন জানান, গ্রাহকরা কেন বেশি বিদ্যুত বিল দিতে যাবেন? প্রতিটি লাইনে নতুন নতুন মিটার রিডার পাঠানোসহ, কিছু কারণে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে গ্রাহকদের ওপর বাড়তি বিল চাপিয়ে দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি জানান, তবে সমস্যা সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আশা করছি, এই সমস্যা আর থাকবে না। নওগাঁয় ঘুষ না দেয়ায় মিটার লাগছে না নিজস্ব সংবাদদাতা নওগাঁ থেকে জানান, মান্দায় ঘুষের টাকা না দেয়ায় মিটার সংযোগ পাচ্ছেন না উপজেলার পশ্চিম নুরুল্লাবাদ গ্রামের ৬৫ গ্রাহক। মান্দা পল্লী বিদ্যুত সমিতির জুনিয়র প্রকৌশলী আব্দুস সালামের দাবিকৃত ২০ হাজার টাকা না দেয়ায় গত ৫ মাস ধরে তারা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। মঙ্গলবার দুপুরে মান্দা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওই গ্রামের অর্ধশতাধিক গ্রাহক এসব অভিযোগ করেন। গ্রাহকদের অভিযোগ, অন্তত ৫ মাস আগে ওই গ্রামে বিদ্যুতের খুঁটি, তারসহ গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি ড্রপতার টানা হয়েছে। কিন্তু ৫ কেভি’র ৪টি ট্রান্সফর্মার না থাকার অজুহাত দেখিয়ে গ্রাহকদের বিদ্যুত সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়। ঈদের আগে সংযোগের জন্য সমিতির কার্যালয়ে একাধিকবার ধর্ণা দিয়েও তারা সংযোগ পাননি। পরবর্তীতে মান্দা পল্লী বিদ্যুত সমিতির জুনিয়র প্রকৌশলী আব্দুস সালাম ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ৫ কেভি’র ৪টি ট্রান্সফর্মার সরবরাহ করেন। গ্রাহকরা জানান, মঙ্গলবার সকালে ট্রান্সফর্মার ও গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি মিটার সংযোগ দেয়ার জন্য পল্লী বিদ্যুত সমিতির কার্যালয় থেকে লাইনম্যান পাঠানো হয়। লাইনম্যানরা ওই গ্রামে গিয়ে ট্রান্সফর্মার ও মিটার লাগানোর আগেই গ্রাহকদের নিকট ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ওই গ্রামের গ্রাহক জসিম উদ্দিন দাবি করেন, এ সময় তারা ৫ হাজার টাকা লাইনম্যানদের হাতে তুলে দেন। কিন্তু জুনিয়র প্রকৌশলী আব্দুস সালামের দাবিকৃত ২০ হাজার টাকা না দেয়ায় লাইনম্যানদের কাজ করতে না দিয়ে তাদের অফিসে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। এ সময় আফজাল হোসেন, আয়নাল হক, সাইদুর রহমান, আমজাদ হোসেন, আজিজুল ইসলাম, আবুল কালাম, জাহাঙ্গীর আলম, টুটুল হোসেন, মোজাফফর হোসেন, আব্দুর রাজ্জাকসহ অর্ধশতাধিক গ্রাহক উপস্থিত ছিলেন। মান্দা পল্লী বিদ্যুত সমিতির জুনিয়র প্রকৌশলী আব্দুস সালাম মিটার সংযোগ দেয়ার নামে টাকা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেন। মান্দা পল্লী বিদ্যুত সমিতির ডিজিএম মিলন কুমার কুন্ডু জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। নওগাঁর পল্লী বিদ্যুত সমিতির জিএম এনামুল হক প্রামানিক জানান, বিষয়টি তদন্তের জন্য মান্দা জোনাল অফিসের ডিজিএম মিলন কুমার কুন্ডুকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
×