ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

দশ নাটকে সজ্জিত আইডিএলসি নাট্যোৎসব শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

দশ নাটকে সজ্জিত আইডিএলসি নাট্যোৎসব শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নাটক নিয়ে চমৎকার আয়োজন। দর্শকনন্দিত দশটি নাটকে সাজানো হয়েছে উৎসব। অংশ নিচ্ছে স্বনামধন্য নাট্যদলের পাশাপাশি ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ। এসব দলের পরিবেশিত নাটক বিনা দর্শনীতে দেখার সুযোগ পাবেন দর্শকরা। অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে একজন দর্শক একটি করে নাটক উপভোগ করতে পারবেন। ‘নাট্যমঞ্চ হোক আনন্দ উৎস’ স্লোগানে পাঁচ দিনের আইডিএলসি নাট্য উৎসব শুরু হলো মঙ্গলবার। বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে উদ্বোধন হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসব উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ খান ও শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞাপনী সংস্থা এফসিবি বিটপির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সারাহ আলী। উদ্বোধনী বক্তব্যে নাটকে বাণিজ্যিক পৃষ্ঠপোষকতাকে স্বাগত জানিয়ে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, এটি একটি ভাল উদ্যোগ। অনেকেই কর্পোরেট সংস্থাকে নাটকের সঙ্গে যুক্ত করতে চান না। অথচ মঞ্চনাটক একটি ব্যয়বহুল শিল্পমাধ্যম। এদেশে শুধু মঞ্চনাটক করে কেউ জীবিকা নির্বাহ করতে পারে না। সবাই নিজের পকেটের পয়সা খরচ করেই যুক্ত থাকেন মঞ্চনাটকে। সেক্ষেত্রে এ ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নাটকের পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে; যেটা নাট্যচর্চাকে আরও বেগবান করবে। পৃথিবীজুড়েই কর্পোরেট সংস্থাগুলো শিল্প-সংস্কৃতিকে পৃষ্ঠপোষকতা করে। পাশ্চাত্যেও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো পৃষ্ঠপোষকতা করে মঞ্চনাটকে। সুতরাং এ ধরনের আয়োজনকে স্বাগত জানানো উচিত। নাট্যদলগুলোকে নাটকের মান বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, অনেকেই মঞ্চনাটকে দর্শকখরার খোঁড়া অজুহাত দেয়। অথচ ভাল নাটক হলে ঠিকই দর্শক আসে। বর্তমান মঞ্চনাটকের ক্ষেত্রে অনেক আধুনিক সুযোগ-সুবিধা যুক্ত হয়েছে। অথচ আমরা যখন মহিলা সমিতি মিলনায়তনে নাট্যচর্চা শুরু করেছিলাম তখন মিলনায়তনে ছিল না শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। লাইট কিংবা সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবহারেও অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হতো। সেই তুলনায় এখন রাজধানীতে আধুনিক নাট্যমঞ্চ গড়ে উঠেছে। দর্শকের সুবিধার্থে উত্তরায় মঞ্চ তৈরি হচ্ছে। ভবিষ্যতে মিরপুরেও মঞ্চ নির্মিত হবে। তাই শুধু মঞ্চ হলে চলবে না বরং ভাল নাটক নির্মাণের মাধ্যমে দর্শক তৈরি করতে হবে। আরিফ খান বলেন, শিল্প-সংস্কৃতির দায়বদ্ধতা থেকেই এ ধরনের আয়োজনে যুক্ত হয়েছে আইএলডিসি। এখন থেকে প্রতিবছর এ উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে লুবনা মরিয়মের নির্দেশনায় নৃত্য পরিবেশন করে সাধনার নৃত্যশিল্পীরা। নৃত্যশিল্পীর মুদ্রা ও অভিব্যক্তির সম্মিলনে উঠে আসে রাধা-কৃষ্ণের অভিসার থেকে বাউল দর্শন কিংবা চর্যাপদের কথা। এরপর সন্ধ্যায় শুরু হয় উদ্বোধনী দিনের নাট্য প্রদর্শনী। নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে নাট্যদল প্রাঙ্গণেমোর মঞ্চস্থ করে ‘হাছনজানের রাজা’। শাকুর মজিদের রচনায় প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন অনন্ত হীরা। নাটকের কাহিনীতে দেখা যায়, বর্ণিল জমিদারি জীবন ছেড়ে হাছন রাজা যান ভাটি অঞ্চলে, খুঁজে বেড়ান নিজেকে আর সৃষ্টিকর্তাকে। এই খুঁজে পাওয়ার মাধ্যমেই শুরু হয় হাছনজানের রাজা’র আত্ম-উপলব্ধি। রাতে নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার এ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের নাটক ‘দ্য লোয়ার ডেপথ্স’। ম্যাক্সিম গোর্কি রচিত ‘লোয়ার ডেপথ্স’ নাটকটির অনুবাদ করেছেন তানভীর মোকাম্মেল। নির্দেশনা দিয়েছেন থিয়েটার এ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক তানভীর নাহিদ খান। এতে অভিনয় করেছেন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের পঞ্চম সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা। নাটকটির কাহিনীতে দেখা যায়, নিরাশার অন্ধকারে কিছু মানুষ ডুবে থাকে। তবু জরা-মৃত্যুর মাঝে তরুণ মন স্বপ্ন দেখায়। কিন্তু সময়ের বিপরীতে ক্ষীণ আশার সঙ্গে জীবনগুলো এক এক করে হারিয়ে যায়। ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এ উৎসব। প্রতিদিন বিকেল ও সন্ধ্যায় দুটি করে নাটকের প্রদর্শনী হবে। আজ বুধবার উৎসবের দ্বিতীয় দিনে বিকেল ৫টায় এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হবে ঢাকা পদাতিকের নাটক ‘ট্রায়াল অব সূর্যসেন’। সন্ধ্যা সাতটায় নাট্যশালা মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হবে পালাকারের নাটক ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’। বটতলার নাটক ‘ক্রাচের কর্নেল’ মঞ্চস্থ হবে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় এক্সপেরিমেন্টাল হলে। একই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মঞ্চে উঠবে ঢাকা থিয়েটারের ‘পঞ্চনারী আখ্যান’। শুক্রবার বিকেল ৫টায় এক্সপেরিমেন্টাল হলে মঞ্চে উঠবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের নাটক ‘দ্য এ্যালকেমিস্ট’। এদিন জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মঞ্চস্থ হবে নাট্যদল থিয়েটারের নাটক ‘মুক্তি’। উৎসবের শেষ দিন ৮ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টায় এক্সপেরিমেন্টাল হলে মঞ্চস্থ হবে প্রাচ্যনাটের ‘সার্কাস সার্কাস’ এবং রাত সাড়ে ৮টায় নাট্যশালার মূল হলে মঞ্চস্থ হবে নাগরিকের নাটক ‘ওপেন কাপল’।
×