ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

এবার প্রভাবশালীদের দখলে রাখা সরকারী জমিতে বসতি গাড়ল ভূমিহীনরা

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  এবার প্রভাবশালীদের দখলে  রাখা সরকারী জমিতে  বসতি গাড়ল ভূমিহীনরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ, ২ সেপ্টেম্বর ॥ ভূমিহীনদের জন্য সরকার যখন জায়গা-জমি এমন কি মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সে সময়ে এক শ্রেণীর প্রভাবশালী জোতদার সেই সরকারী জায়গা-জমি জবরদখল করছে। এমনি জবরদখল করা সরকারী খাস জমিতে রাতারাতি বসতি স্থাপন করেছে নিয়ামতপুর উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের ভাতকু- গ্রামের কিছু ভূমিহীন পরিবার। ওই গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের পুত্র ভূমিহীন বৃদ্ধ রিয়াজউদ্দিন বলেন, আমাদের থাকার জায়গা নেই, তাই সরকারের জায়গায় বাড়ি করলাম। আমরা ভূমিহীন, আমাদের থাকার জায়গা নেই আর প্রভাবশালী ধন-সম্পদশালী ব্যক্তিরা সেই সরকারের জায়গা জবর দখল করে খাবে এটা কি হতে পারে? আমরা নিরুপায় হয়ে রাতের মধ্যে বাড়ি করে জায়গা দখল করলাম। একই গ্রামের আরেক ভূমিহীন সেতাব উদ্দিনের ছেলে নূর ইসলাম বলেন, আমরা ভূমিহীন, মাথা গোঁজার ঠাঁই পর্যন্ত আমাদের নেই। পরের জায়গায় দুটি ঘরে চার ভাই কোন রকমে বাস করি। আমরা যখন জানতে পারলাম যে, ভাতকুন্ড মৌজায় প্রায় ৫ বিঘা জায়গা সরকারের ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত, তখন আমরা সবাই দলবদ্ধভাবে এসে বাড়ি করার উদ্দেশে আশ্রয় নিয়েছি। সরকার আইনগতভাবে আমাদের বাড়ি করার জায়গা দেবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। নিয়ামতপুর উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের ভাতকুন্ড গ্রামের ভাতকুন্ড মৌজার জেএলনং- ২৭৯, দাগ নং ৩৩১, পরিমাণ-১.৭৫ সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত সম্পত্তি। পাশে একটি পুকুর রয়েছে যার দাগ নং ৩৩০। পুকুর ও উক্ত সম্পত্তি আদমপুর গ্রামের মৃত ফরজ আলী মন্ডলের ছেলে রফিক ম-ল অনেক দিন যাবত তার নিজের সম্পত্তি বলে ভোগ দখল করে আসছিল। এলাকার অধিকাংশ লোক অশিক্ষিত হওয়ায় কেউ কোন দিন বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর নেয়নি। কিন্তু ভাতকুন্ড গ্রামের তনজের মাস্টার প্রথমে বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে ৩৩০ (পুকুর) ও ৩৩১ (ডাঙ্গা) সম্পত্তি সরকারের ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত। বিষয়টি জানাজানি হলে রিয়াজ উদ্দিন নিজে নিয়ামতপুর ভূমি অফিসে যোগাযোগ করে জানতে পারেন সম্পত্তিগুলো সরকারের। তখন গ্রামে প্রায় ৩০টি ভূমিহীন পরিবার একত্রিত হয়ে শুক্রবার ভোরে ৩৩১ নং দাগে বাড়ি নির্মাণের উদ্দেশ্যে পলিথিন দিয়ে ছাউনি বানিয়ে দখল করে। রিয়াজ উদ্দিনের অভিযোগ সরকারের সম্পত্তি দখলকারী ভূমিদস্যু রফিক আমাদের উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে ১০/১২জন লোক নিয়ে এসেছিল। কিন্তু আমরা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় তারা চলে যায়। তবে আমাদের বিভিন্নভাবে উচ্ছেদ এবং হত্যার হুমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার জানা মতে জায়গাটি খাস ছিল। কিন্তু রফিক মন্ডলের ছেলেরা পত্তন নিয়েছে। তাদের দলিল রয়েছে আমি দেখেছি। আর যারা দখল করেছে তাদের কোন কাগজ নেই জোরপূর্বক দখল করেছে। তারা দখল করে অন্যের কাছে বিক্রি করে চলে যায় এটাই তাদের স্বভাব। দুপক্ষই আমার কাছে এসেছিল। রফিক মন্ডলের ছেলে মনোয়ার হোসেন বলেন, এই সম্পত্তি ১৯৭৮ সালে ৯৯ বছরের জন্য আমাদের বাবা লিজ নেয়। তখন থেকেই আমরা ভোগ দখল করে আসছিলাম। ২০১৬ সালে আমাদের বাবা আমাদের সাত ভাইয়ের নামে রেজিস্ট্রি করে দেন। সম্পত্তিটির খাজনা খারিজ সবই করা আছে। এদিকে ওই জমি নিয়ে উভয়পক্ষে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
×