ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আগামীকাল চট্টগ্রাম দক্ষিণ

বিএনপি নির্বাচনে আসলে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি ॥ চট্টগ্রাম মহানগর

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৭ আগস্ট ২০১৮

বিএনপি নির্বাচনে আসলে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি ॥ চট্টগ্রাম মহানগর

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ‘চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব আমি নিজ হাতে নিলাম।’ বন্দর নগরীর ঐতিহাসিক লালদীঘি মাঠে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী সমাবেশে কথাটা বলেছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই প্রতিশ্রুতি তিনি ভুলে যাননি। জনগণের রায় নিয়ে ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর তাঁর সরকার গ্রহণ করে একের পর এক মেগা প্রকল্প, যার অনেকই ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। বাকিগুলোও বাস্তবায়নের পথে। চট্টগ্রামের গুরুত্ব বরাবরই আলাদা। কারণ এখানেই দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর, একক বৃহত্তম রাজস্ব যোগানদাতা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস, দেশের জ্বালানি সেক্টরের প্রধান স্থাপনা, বৃহত্তম ইপিজেড এবং ব্যবসা বাণিজ্যের মূল চালিকাশক্তি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর অর্থনীতি এবং শিল্পোন্নয়নে স্বার্থে দেশকে পূর্বমুখী করার পলিসি গ্রহণ করেছে। সম্পর্ক বেড়েছে চীন, জাপান, কোরিয়াসহ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে। চট্টগ্রাম বন্দরের সম্প্রসারণ ঘটছে। চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে উন্নয়নের মহাসড়কে ওঠা সম্ভব নয়। বরঞ্চ দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনায় এই জেলাকে গুরুত্ব দিতেই হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের দশ বছরে উন্নয়ন কার্যক্রম এগোচ্ছেও সেভাবেই। এবারের নির্বাচনেও উন্নয়নই প্রাধান্য পাবে বেশি। ভোটারদের বিবেচনায়ও থাকবে চট্টগ্রামকে ঘিরে কোন্্ দল কতটা ভাবছে সেই বিষয়টি। প্রার্থী মনোনয়নে প্রধান দুই দলই সতর্কতার পরিচয় দেবে, এটি স্বাভাবিক। চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) ॥ মহানগরীর চান্দগাঁও এবং সংলগ্ন বোয়ালখালী উপজেলা নিয়ে এই আসন। বর্তমান এমপি জাসদের কার্যকরী সভাপতি মঈনউদ্দিন খান বাদল। জোটগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলে এবারও তিনি নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হবেন, এটা অনেকটাই নিশ্চিত। তাই বলে থেমে নেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের তৎপরতা। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চান একান্ত নিজের দলের এমপি। দলীয় এমপি না হওয়ায় এলাকায় কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি বলে অভিযোগ তাদের। তবে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং বাগ্মিতার কারণে জাসদ নেতা বাদলের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে সাধারণের মাঝে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিএনপি প্রার্থী এরশাদুল্লাহকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য হন মঈনুদ্দিন খান বাদল। এরপর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি এই আসন থেকে সংসদ সদস্য হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোট অটুট থাকলে এবারও মঈনউদ্দিন খান বাদল মনোনয়নের জোরালো দাবিদার। আওয়ামী লীগের মধ্যে রয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিক নেতা। তারা হলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ, আওয়ামী লীগ নেতা বর্তমানে কুয়েতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত এসএম আবুল কালাম, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আবদুল কাদের সুজন এবং প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির পুত্র শিল্পপতি ও শিক্ষানুরাগী মুজিবুর রহমান। সকলেই বেশ আগে থেকেই তৃণমূল পর্যায়ের রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। এর মধ্যে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রবীণ নেতা মোছলেম উদ্দিন আহমদের সমর্থকরা চান তাদের নেতা অন্তত একবারের জন্য হলেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হোন। নির্বাচনের ব্যাপারে প্রস্তুতি রয়েছে এই নেতার। সে লক্ষ্যে তিনি গণসংযোগও চালিয়ে আসছেন। তবে দলের আদর্শে অনুগত একজন সিনিয়র নেতা হিসেবে তিনি হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তই মেনে নেবেন বলে জানিয়েছে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্র। বিএনপি থেকে ২০০৮ সালে নির্বাচন করেছিলেন এরশাদ উল্লাহ। ওয়ান ইলেভেন সরকারের ওই সময়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোর্শেদ খান ছিলেন না। কিন্তু গণতান্ত্রিক সরকারের সময়ে তিনি ফিরে এসে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। সিনিয়র নেতা মোর্শেদ খান তাঁর আসনটি ফিরে পেতে চাইবেন। তবে বয়স বেড়েছে বিএনপির এই নেতার। এই অবস্থায় অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতারা আসতে ইচ্ছুক ভোটের লড়াইয়ে। এক্ষেত্রে এরশাদ উল্লাহ আবারও মনোনয়ন চাইবেন। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আহমেদ খলিল খানও এ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে রাজনীতিতে তিনি আগের মতো সক্রিয় নন। নতুনভাবে এবার যে নামটি শোনা যাচ্ছে তিনি চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবু সুফিয়ান। বিগত সময়ে আন্দোলন সংগ্রামে তিনি চট্টগ্রামে রাজপথে সক্রিয়ভাবে নেতৃত্বে ছিলেন। তাঁর রয়েছে অনেক কর্মী ও সমর্থক। দলীয় হাইকমান্ড যোগ্য বিবেচনা করে মনোনয়ন দিলে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে চান বলে জানিয়েছেন আবু সুফিয়ান। চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) ॥ চট্টগ্রাম নগরীর মূল আসন বিবেচনা করা হয় এই আসনকে। কেননা নিউমার্কেট, রিয়াজউদ্দিন বাজার, আন্দরকিল্লা, কোতোয়ালিসহ শহরের সবচেয়ে পুরনো অংশটি এই আসনের অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে চট্টগ্রাম-৯ আসনের এমপি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। বিগত নির্বাচনে তিনি লাঙল প্রতীকে বিজয়ী হন। এই আসনে ১৪ দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা এ্যাডভোকেট আবু হানিফকে। তবে তাকে নৌকা প্রতীক দেয়া হয়নি। অর্থাৎ জোটের প্রার্থী থাকলেও নৌকার প্রার্থী ছিল না। প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি একজন বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী, যার পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হচ্ছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আওয়ামী লীগ নিজ দলের প্রার্থী দিলে সঙ্গত কারণে এবারও তিনি এ আসনটি চাইবেন। এরপর যার নামটি আলোচনায় রয়েছে দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেল। ব্যারিস্টার নওফেল সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পুত্র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ¯েœহের চোখে দেখেন। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নিজ হাতে গড়া রাজনীতির মাঠ রয়েছে পুত্র নওফেলের জন্য। সমর্থকরা তাকে কোতোয়ালি আসন থেকে এমপি প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাইছেন। এছাড়া যার নামটি বেশ আলোচিত তিনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। এর আগেও তাঁকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু জোটের কারণে তাঁর নির্বাচন করা হয়নি। চট্টগ্রাম নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে ২০০৮ সালে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন শিল্পপতি শামসুল আলম। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকলেও নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন না পেয়ে তিনি ভিড়েছিলেন বিএনপিতে। নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম বিএসসির কাছে পরাজিত হন। এরপর তিনি ক’বছর মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও এখন আর আগের মতো নেই। তারপরও এ আসন থেকে তিনিই মনোনয়ন চাইবেন। তবে এবার তিনি শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডাঃ শাহাদাত হোসেন এ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। নগর বিএনপির শীর্ষ পদে থাকায় কেন্দ্রে এবং তৃণমূলে এই নেতার আবেদনও বেশি। আন্দোলনে, সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব থাকায় ডাঃ শাহাদাত বেশ ভাল অবস্থানে রয়েছেন। অনুসারীরা মনে করছেন, তিনিই ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন। এ আসনটিতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনের নামও আলোচিত হচ্ছে। একদা চট্টগ্রামের মেয়র ও মহানগর বিএনপির সভাপতি ছিলেন বিধায় তাঁরও ব্যাপক পরিচিতি এবং ভিত্তি রয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকায় তিনিও চেষ্টা চালাবেন মনোনয়ন লাভের। হাইকমান্ডের আশীর্বাদে এ আসনে মীর নাসির ধানের শীষের টিকেট পেয়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর) ॥ চট্টগ্রাম নগরীর এ আসনটির সংসদ সদস্য ডাঃ আফসারুল আমীন। একদা বন্দর এবং পতেঙ্গাসহ ছিল এই আসনটি। বিএনপির আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন। ২০০৮ সালে বাদ পড়ে বন্দর-পতেঙ্গা এলাকা। ডবলমুরিং এবং হালিশহর নিয়ে এই আসন গঠিত হয়। নির্বাচনে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। প্রথমবার নির্বাচিত হয়েই লাভ করেন মন্ত্রিত্ব। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। মহানগর আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা, সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য হিসাবে এবারও তিনি মনোনয়নের সবচেয়ে জোরালো দাবিদার। তবে এবার আরও একাধিক নেতা রয়েছেন, যারা মনোনয়ন চাইবেন। সে কারণে কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে এ নেতা। দলীয় কর্মকা-ে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তাছাড়া তার নির্বাচনী এলাকাটি উন্নয়নের দিক দিয়েও বেশ পিছিয়ে। নতুন যারা মনোনয়ন চাইছেন তারা এ বিষয়গুলো প্রচারে আনছেন। চট্টগ্রাম-১০ আসলে এবার আওয়ামী লীগের আরও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু, যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ ফরিদ মাহমুদ এবং বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সহচর এমএ আজিজের পুত্র মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যকরী কমিটির সদস্য সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার। সকলেই প্রচার ও সাংগঠনিক কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে নিজকে উপস্থাপন করার চেষ্টায় রয়েছেন। এর মধ্যে সাবেক মেয়র মনজুর আলম ২০০৮ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন। বিএনপির সমর্থনে মেয়র নির্বাচিত হলেও এলাকায় তার পরিবারটি আওয়ামী পরিবার হিসেবে পরিচিত। এ পরিবারের পরিচালনায় বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের নামে বিভিন্ন শিক্ষা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। বিএনপির সমর্থনে মেয়র নির্বাচিত হলেও তিনি কখনই বিএনপি নেতা হতে পারেননি বলে অভিযোগ ছিল দলীয় নেতাকর্মীদের। মেয়র থাকাকালে আওয়ামী সরকারবিরোধী কোন আন্দোলন সংগ্রামে তাকে নামানো যায়নি। বর্তমানে তিনি আর বিএনপির সঙ্গে নেই। নিজকে যুক্ত রেখেছেন সমাজ সেবামূলক কাজে। নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেলে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন এম মনজুর আলম। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুও এ আসন থেকে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী। তিনিও প্রচারে এবং সাংগঠনিক তৎপরতায় বেশ এগিয়েছেন। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, আশির দশক থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় আছি। ডবলমুরিং ও হালিশহর এলাকায় সড়ক যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এলাকার জনগণ পরিবর্তন চায়। কেন্দ্রের আশীর্বাদ পেলে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রস্তুত। বিএনপিতে অবশ্য মনোনয়ন নিয়ে অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা তেমন একটা নেই। কারণ এখানে রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। এর আগে তিনি সব সময় নগরীর কোতোয়ালি আসন থেকে নির্বাচন করে এলেও বর্তমানে তার আসন চট্টগ্রাম-১০। এবারও এ আসন থেকেই লড়বেন। তার মনোনয়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা না থাকায় ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেতে অন্য কারও চেষ্টা তদবিরও লক্ষণীয় নয়। চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) ॥ বর্তমান সংসদ সদস্য এমএ লতিফ। চট্টগ্রাম নগরীতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন এটি। কেননা, এ আসনেই রয়েছে দেশের আমদানি রফতানি বাণিজ্যের সিংহদ্বার চট্টগ্রাম বন্দর, একক বৃহত্তম রাজস্ব যোগানদাতা কাস্টম হাউস, দেশের বৃহত্তম ইপিজেড এবং জ্বালানি সেক্টরের প্রধান স্থাপনা। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এই আসন থেকে বারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। চট্টগ্রামে বিএনপির অনেকটা নিশ্চিত আসন ধরা হয় বন্দর-পতেঙ্গাকে। আসনটিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা নিজেদের ঘাঁটি মনে করে থাকেন। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে মাত্র দুসপ্তাহের প্রচারে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী আমীর খসরুকে ২৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে তাক লাগিয়ে দেন চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির তৎকালীন সভাপতি এমএ লতিফ। শুধু তাই নয়, চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন রাজনীতিতে নবাগত ব্যবসায়ী সমাজের এই নেতা। এবারও তিনি মনোনয়ন দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। তবে দলের মধ্যে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিও কম নয়। দল থেকে চট্টগ্রাম-১১ আসনে মনোনয়ন পেতে ইচ্ছুক মহানগর আওয়ামী লীগের দুই সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু এবং নজরুল ইসলাম বাহাদুর। এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা রোটারিয়ান মোঃ ইলিয়াসও নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে চান। আগ্রহী এই তিন প্রার্থীর মধ্যে খোরশেদ আলম সুজন ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নও পেয়েছিলেন। কিন্তু একেবারে শেষ সময়ে প্রার্থিতা বদল হয়ে যায়। বন্দর-পতেঙ্গা ছাড়াও এই আসনে ইপিজেড এবং সদরঘাট থানাও অন্তর্ভুক্ত। মনোনয়ন পাওয়ার প্রতিযোগিতায় চারজন থাকলেও জোরালো দাবিদার এমএ লতিফ এবং খোরশেদ আলম সুজন। সুজনের সমর্থকরা আশা করছেন, এবার তাদের নেতাই মনোনয়ন পাচ্ছেন। কারণ রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামে তিনি একজন সক্রিয় নেতা। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হলো খোরশেদ আলম সুজনের বাড়ি এই আসনে নয়। তিনি নগরীর কাট্টলি এলাকার বাসিন্দা, যে এলাকাটি পড়েছে সীতাকু- আসনের সঙ্গে। অপরদিকে এমএ লতিফের বাড়ি চট্টগ্রাম বন্দরের একেবারে কাছাকাছি এলাকায়। বিগত সংসদ নির্বাচনে তাঁর জয়লাভের অন্যতম কারণও ছিল এটি। এলাকার লোক সেই ভোটযুদ্ধকে নিয়েছিল স্থানীয় এবং বহিরাগতের লড়াই হিসেবে। আমীর খসরু এবং খোরশেদ আলম সুজন যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকতেন তাহলে সেই ভোটযুদ্ধ হতো দুই বহিরাগতের লড়াই। কেননা খসরুর বাড়িও অন্য আসনে। বাইরের প্রার্থী হওয়ায় তিনি নবাগত এমএ লতিফের সঙ্গে পেরে ওঠেননি। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকায় সারা বছর ভর্তুকি মূল্যে চাল, চিনি, তেলসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য বিতরণের কর্মসূচী চালিয়ে গেছেন লতিফ। তাছাড়া ব্যাপক কাজ করেছেন নারীদের মধ্যে। গড়েছেন ‘স্বাধীনতা নারী শক্তি’ নামের একটি সংগঠন, যার সক্রিয় সদস্য সংখ্যা ১০ হাজারের কাছাকাছি। মোটর বাইক চালানো, টেইলারিং, বুটিক, কম্পিউটার প্রশিক্ষণসহ নানা আত্মকর্মসংস্থানের নানা কর্মসূচী রয়েছে তাঁর পরিচালিত এ সংগঠনের। এমপি লতিফের বিরুদ্ধে রয়েছে চিটাগাং চেম্বারের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে তৈরি করা ফেস্টুনে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গর্হিত এ কাজটি আমি কেন করব? ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্য হয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করে আমি কী বেনিফিট পাব? প্রেসের দুই কর্মচারী ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। এ নিয়ে সকল বিভ্রান্তির অবসান হয়েছে। বিষয়টির নিষ্পত্তিও হয়ে গেছে। বিএনপি থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ছাড়া আর কোন নাম আলোচনায় নেই। দলের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতা হওয়ায় খসরুকে ডিঙ্গিয়ে অন্য কোন নেতা মনোনয়ন পাবেন এমনটি কেউ মনে করেন না। সে কারণে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে তিনিই সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে। বিএনপি যদি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসে, তাহলে চট্টগ্রাম-১১ আসনে আমীর খসরু মনোনয়ন পাচ্ছেন তা এক প্রকার নিশ্চিত।
×